ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১

এখনও বহাল তবিয়তে শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত আমলারা

প্রকাশিত: ২৩:০১, ৯ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৮:২৪, ১০ নভেম্বর ২০২৪

এখনও বহাল তবিয়তে শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত আমলারা

সরকার। 

আমলাতন্ত্রের জালে গোলমেলে অবস্থায় রয়েছে সরকারের প্রশাসন যন্ত্র। সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা নেই কমপক্ষে সাতটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে। আর শেখ হাসিনার সরকার পরিচালনায় আমলা তথা সচিবরা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো বরাবরই বিশ্বস্ত সচিবদের পদায়ন করতেন তিনি। এদের অনেকেই পেয়েছেন বিশ্বস্ততার পুরস্কার। এছাড়া, অবসরের পর বেশ কয়েকজন আমলা আওয়ামী লীগের টিকিটে হয়েছেন সংসদ সদস্য।

যদিও গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে শেখ হাসিনার প্রায় সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটে। গত ৮ আগস্ট রাতে শপথ নেওয়ার পর তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে পারেননি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে সচিবদের সরানো হলেও অনেকেই সমস্বয়কদের ম্যানেজ করে সচিবই রয়েছেন বহাল তবিয়তে। 

জানা যায়, বেশিরভাগ আমলাই বর্তমানে দায়সারা কাজ করছেন। সচিবালয়ে প্রতিদিন এলেও নিয়ম রক্ষার্থে কিছু কাজ করে সময় পাড় করছেন। অনেকে বিশ্বস্তদের সঙ্গে বসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজকর্মের সমালোচনা বা রাজনৈতিক আড্ডায় সময় পার করছেন। বর্তমানে প্রশাসনে নেই কোনো কর্মচাঞ্চল্য। সর্বত্রই গাঁ-ছাড়া ভাব। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অসহযোগিতার মনোভাব নিয়ে চলছেন তারা। আর প্রভাবশালী কয়েকজন সমন্বয়ক এবং তাদের স্বজনদের তদবিরে অনেক সচিব এখনো সপদে বহাল রয়েছেন। 

হাসিনা সরকারের বিশ্বস্ত ফরিদ আহাম্মদ বর্তমানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন ২(দুই) বছরেরও অধিক সময় ধরে। আনসার বিদ্রোহে তারও প্রত্যক্ষ মদদের অভিযোগ উঠেছিল যা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্র-পত্রিকায় উঠে এসেছিল। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্রশ্ন ফাঁস ও প্রাথমিক এর বই নিম্মমানের তৈরির অভিযোগ থাকলেও শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত হওয়ায় পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে আর তদন্ত হয়নি। তিনি ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর বর্তমান পদে যোগদান করেন। শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত এ আমলা এর আগে দেড় বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে সাবেক মেয়র তাপসের ঘনিষ্টজনদের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার টেন্ডার বানিজ্যের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি ।এছাড়া সামরিক ভূমি ও ক্যান্টনমেন্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে প্রায় ৩ বছর ১ মাস দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আগে তিনি প্রায় আড়াই বছর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

পানি সচিব মন্ত্রণালয় সচিব নাজমুল আহসানও শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত। আনসার বিদ্রোহে তার মদদের অভিযোগ উঠেছিল। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তিনি ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। এর আগে তিনি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হিসেবে লম্বা সময় দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলা প্রশাসক হিসেবেও তিনি কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মোহা. সেলিম উদ্দিন গত ১৯ মে সচিব হিসেবে যোগ দেন। শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত এ আমলা এর আগে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। 

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারকে ধাপে ধাপে যেভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে এ সকল প্রতিবন্ধকতা থেকে বের হয়ে আসতে আওয়ামী দলকানা সচিবদের দ্রুত অপসারন করা দরকার।

এম হাসান

×