বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।
বাংলাদেশ সরকার, ইউএনডিপি এবং ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট এক্সচেঞ্জের অংশীদারিত্বে বাংলাদেশে অরেঞ্জ বন্ড প্রবর্তন উদ্যোগটি একাধিক বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত সংগ্রহের লক্ষ্য রাখে, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট এক্সচেঞ্জ (আইআইএক্স) এর সহযোগিতায় "অরেঞ্জ বন্ডের মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ পুনর্নির্মাণ" শীর্ষক একটি উচ্চ-পর্যায়ের পরামর্শ সভার আয়োজন করেছে। সভায়- বাংলাদেশে টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক পুনর্নির্মাণকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে একটি রূপান্তরমূলক আর্থিক উদ্ভাবন হিসেবে অরেঞ্জ বন্ডের প্রবর্তনের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরামর্শ সভাটি দেশের আর্থিক সংস্কারের প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে, যা স্থিতিশীলতা এবং বৃদ্ধি সৃষ্টিতে সহায়তা করে, পাশাপাশি লিঙ্গ সমতা এবং জলবায়ু কার্যক্রমকে সমর্থন করে।
গত (৭ ই নভেম্বর ২০২৪) বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সভায় এই তথ্য তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), ইউএনডিপি ও ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট এক্সচেইঞ্জ (আইআইএক্স) যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এতে সূচনা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী।
অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, একটি নতুন আর্থিক ক্ষেত্র হিসেবে অরেঞ্জ বন্ড এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ যখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে, তখন বিদেশী সাহায্যের ঐতিহ্যগত প্রবাহের হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে, যা নতুন টেকসই অর্থায়ন সমাধানের প্রয়োজনীয়তা তৈরি করবে। এই প্রেক্ষাপটে, অরেঞ্জ বন্ডের প্রবর্তন—একটি উদ্ভাবনী ক্রস-কাটিং অ্যাসেট ক্লাস— লিঙ্গ সমতা এবং জলবায়ু কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিবে। এটি উল্লেখযোগ্য সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবং দেশের পুঁজিবাজারকে আরও শক্তিশালী করতে নতুন পথ তৈরি করবে। তারা আরো বলেন, এই উদ্যোগটি একাধিক বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত সংগ্রহের লক্ষ্য রাখে, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে যেমন তৈরি পোশাক (আরএমজি), কৃষি, এবং ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এমএসএমই) এর জন্য ব্যবহৃত হবে।
অনুষ্ঠানে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ অরেঞ্জ বন্ডের মতো টেকসই অর্থায়নের উদ্যোগের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলার ইতিবাচক প্রভাবের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, "মানুষ ঝুঁকি-কম নিতে পারে, এবং ব্যাঙ্কগুলি প্রায়ই রক্ষণশীল পন্থা অবলম্বন করে ও বড় ঋণ পছন্দ করে। যাইহোক, আমাদের এটি পরিবর্তন করার একটি সুযোগ আছে। গ্রহণযোগ্য ঝুঁকি পরিমাপ তৈরি করে এবং অপ্রয়োজনীয় বাধা দূর করে, আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে প্রত্যেকের, বিশেষ করে নারী এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের তাদের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় সংস্থানগুলিতে প্রবেশগম্যতা রয়েছে।"
ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট এক্সচেঞ্জ (আইআইএক্স) এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (র্সিইও) দূররীন শাহনাজ বলেন, “অরেঞ্জ বন্ড শুধু একটি আর্থিক উপকরণ নয়; এটি লিঙ্গ সমতা, জলবায়ু কার্যক্রম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধির পক্ষে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ।”
বাংলাদেশে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেছেন, “অরেঞ্জ বন্ড বাংলাদেশের বৃহত্তর টেকসই আর্থিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে, যা একটি স্থিতিস্থাপক, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। একই সঙ্গে জলবায়ু পদক্ষেপে লিঙ্গ সমতাকে একীভূত করে আমরা জনগণের জন্য নতুন সুযোগ উন্মুক্ত করতে পারি, বিশেষ করে নারী ও এমএসএমইদের জন্য, যা দেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) এজেন্ডা অর্জনে সহায়তা করবে।”
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ, এই উদ্যোগের বৈশ্বিক গুরুত্ব সম্পর্কে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন “বাংলাদেশ অরেঞ্জ বন্ড উদ্যোগ টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নের চেতনা প্রতিফলিত করে। এই এসডিজি-সঙ্গত বন্ডটি আমাদের সাহসী ঘোষণা-একটি সেতু, যা আমাদের বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাজারের সাথে যুক্ত করে এবং সেইসাথে যে সমস্ত মানুষ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাদের জন্য সম্পদ পরিচালনা করে।”
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী অরেঞ্জ বন্ডের সফল বাস্তবায়নে সরকারের সহযোগিতা এবং প্রতিশ্রুতির গুরুত্বের ওপর জোর দেন
বাংলাদেশে অরেঞ্জ বন্ড প্রবর্তনের প্রতিশ্রুতি জ্ঞাপন করে উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনায় অরেঞ্জ অঙ্গীকার স্বাক্ষরের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
রিয়াদ