স্পেশাল ট্রেন
কৃষি পণ্য স্পেশাল, ম্যাংগো স্পেশাল ও ক্যাটল স্পেশাল নামে ট্রেনগুলো চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ, তার বিপরীত চিত্র দেখা গেল চলাচলের পর। কয়েকদিন চলাচলের পর লোকসান দিয়েই বন্ধ করতে বাধ্য হতে হয়েছে রেল কর্তৃপক্ষকে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশেষ কোনো সেবা বা সার্ভিস চালু করার আগে আগ্রহ, সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো খতিয়ে দেখতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রেল তেমন কিছু না করায় সরকারি অর্থ অপচয় হলেও চাষিদের লাভ হয়নি, ব্যবসায়ীরাও আগ্রহ দেখাননি।
গত কয়েক বছরে কোটি টাকা লোকসান হয়েছে ম্যাংগো স্পেশাল ও ক্যাটল স্পেশাল ট্রেনের। লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়েই আবারও চালু হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন। এক দিন চালানোর পরই পশ্চিমাঞ্চল রেল ট্রেনটি বন্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে। ২৬ অক্টোবর রাজশাহী থেকে ট্রেনটি ছেড়ে গেলেও রহনপুর-চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে উঠানো হয়নি কোনো কৃষিপণ্য।
রাজশাহী থেকে শুধু উঠেছিল ১৫০ কেজি ডিমের খাঁচা। অন্য কোনো স্টেশন থেকেও আশানুরূপ পণ্য ওঠেনি। প্রথম দিনেই রেলের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯ লাখ ৯৬ হাজার ৭২ টাকা।
পশ্চিম রেলওয়ের তথ্য মতে, ট্রেনটিতে মোট সাতটি বগি (লাগেজ ভ্যান) ছিল। এর মধ্যে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং অপর ছয়টি সাধারণ বগি। অত্যাধুনিক লাগেজ ভ্যানে কৃষিপণ্যের মধ্যে ফল, সবজি ছাড়াও রেফ্রিজারেটেড লাগেজ ভ্যানে মাছ, মাংস ও দুধ পরিবহন করা যায়।
এ ছাড়া চাষি, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ঢাকায় যাওয়ার জন্য অন্তত ২০টি চেয়ার আছে। সবজির সঙ্গে তাদের বিনা ভাড়ায় যাওয়ার সুযোগও রাখা হয়েছিল। ট্রেনটির ধারণক্ষমতা ১০ মেট্রিক টন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, রহনপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব ৩৪৬ কিলোমিটার। ট্রেনটি পরিবহন করতে খরচ হয় ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩২। কিন্তু প্রথম দিনে ট্রেনটিতে গেছে মাত্র ১৫০ কেজি ক্যারেট। ফলে ট্রেনটি আয় করেছে মাত্র ৩৬০ টাকা। প্রথম দিনে ট্রেনটিতে লোকসান হয়েছে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৭২ টাকা।
শুধু কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন নয়, প্রতিবছর লোকসান দিচ্ছে ম্যাংগো স্পেশাল ও ক্যাটল স্পেশাল ট্রেন। আম পরিবহনের জন্য ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর চালানো হয় ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। রাজশাহী থেকে ঢাকা কেজিপ্রতি আম পরিবহনে খরচ পড়ছে দেড় টাকা। কিন্তু এর পরও ট্রেন লোকসানে চলে। সাড়া মেলে না ব্যবসায়ীদের।
গত মৌসুমে শুধু যমুনা সেতু বাদ দিয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন ঢাকায় নিয়ে বাড়তি ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪০৮ টাকা বেশি লোকসান গুণতে হয়েছে।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) , রেলওয়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যক্তিস্বার্থে কোনো পরিকল্পনা ছাড়া লোকসানি ট্রেন চালু করে। এতে তারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়। কিন্তু সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখানে চাষি, ব্যবসায়ী, মার্কেটের একটা সুন্দর চেনই ম্যানেজমেন্ট গড়ে তুলতে হবে। তার পর ট্রেন চালু করতে হবে। না হলে যে লক্ষ্যে স্পেশাল ট্রেন চালানো হচ্ছে, তা সফলতা পাবে না।
শহিদ