বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিধস বিজয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে না। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যতটা গতিশীল ছিল, আগামীতে সেক্ষেত্রে কিছুটা ধীরগতি আসতে পারে। তবে কেউ কেউ বলছেন, মার্কিন নির্বাচনের ফলের প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না।
ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্কে কেমন প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে বুধবার সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসবে না। যদিও ডেমোক্র্যাটিক দলের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক একটু বেশি গভীর। সেজন্য ট্রাম্প জেতায় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক কিছুটা ধীরগতির হতে পারে। তবে বড় ধরনের তারতম্য ঘটবে না।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন নির্বাচনের ফলে বাংলাদেশের জন্য খুব বেশি দুশ্চিন্তা নেই। তবে এবারের যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের ফল বিভিন্ন কারণে সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক শুধু একটি দলের ওপর নির্ভর করে না। এখানে বাণিজ্যিক, কৌশলগত, ভূরাজনৈতিকসহ বহুবিধ কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, শুধু প্রেসিডেন্ট পরিবর্তন হয়ে গেলেই একদিনে এটা বদল হয়ে যায় না। সুতরাং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেই ক্ষমতায় আসুক বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়বে না, খুব বেশি দুশ্চিন্তা নেই।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের সজাগ দৃষ্টি রাখছিলেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্রের বাজার। বাংলাদেশী পোশাক পণ্যের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য হচ্ছে দেশটি। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও এই নির্বাচনের প্রভাব রয়েছে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী হওয়ায় তিনি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য ভালো হবেন। যদি চীনা পণ্যের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা কার্যকর করা হয়, তা হলে অনেক মার্কিন পোশাক খুচরা বিক্রেতা এবং ব্র্যান্ড পোশাক পণ্যের সোর্সিং স্থানান্তর করার চেষ্টা করবেন। এটি অন্যান্য দেশ ও একটি বড় সরবরাহকারী হিসেবে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আরেক ব্যবসায়ী নেতা ও বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, প্রেসিডেন্টের পরিবর্তনে পররাষ্ট্রনীতির কোনো পরিবর্তন হবে না। তাই আমাদের ব্যবসার ওপর বড় প্রভাব ফেলবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যিনিই নির্বাচিত হন, তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো পরিবর্তন হবে না বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প যেহেতু তার নিজের দেশের প্রতি বেশি মনোযোগী, সেহেতু তিনি উন্নয়নশীল দেশের জন্য ভালো হবেন না। তার নির্বাচনী প্রচারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি করপোরেট ট্যাক্স কমিয়ে দেবেন। এতে বাজেট ঘাটতি বাড়বে। ফলস্বরূপ, মার্কিন সরকারের অন্যান্য দেশের উন্নয়ন বাজেট এবং সাহায্য হ্রাস পেতে পারে। ‘যদিও বলা হয়, চীনা পণ্যের ওপর উচ্চ কর দিলে বাংলাদেশ লাভবান হবে, কিন্তু তা হয়নি। বাইডেন প্রশাসন তার মেয়াদে চীনের প্রতি মার্কিন করনীতি অব্যাহত রাখলেও বাংলাদেশের রপ্তানি খুব বেশি বৃদ্ধি পায়নি। আমি মনে করি, যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো নীতির পরিবর্তন।
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মার্কিন বাজার থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেতে সরকারকে আরও আলোচনামুখী হতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় সুবিধার মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য নীতি পরিবর্তনের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।