গণমাধ্যমে প্রকাশিত “সালিশে আসতে রাজি না হওয়ায় বৃদ্ধকে মারধর ও পানিতে চুবিয়ে হত্যা” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। দশমিনায় সালিশ বৈঠকে আসতে রাজি না হওয়ায় এক বৃদ্ধকে কিলঘুষি ও পানিতে চুবিয়ে হত্যা করার অভিযোগটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন মর্মে কমিশন মনে করে। এ ঘটনায় কমিশন স্বঃপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে।
সুয়োমটোর প্রেক্ষিতে কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের অভিমত, এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত অমানবিক এবং মর্মপীড়াদায়ক। এই অপরাধে ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা ও মর্যাদার হানি করেছে। সকল ধরনের নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান নিতে হবে এবং তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ প্রতিবেদনের বরাতে সুয়োমটোতে উল্লেখ রয়েছে, দশমিনায় সালিশ বৈঠকে আসতে রাজি না হওয়ায় এক বৃদ্ধকে কিলঘুষি ও পানিতে চুবিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহত ব্যক্তির নাম নুরুল ইসলাম হাওলাদার (৭০)। জানা যায় যে, নুরুল ইসলাম হাওলাদারের কাছে তার ছেলে সহিদুল হাওলাদার দীর্ঘদিন জমি লিখে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। নুরুল ইসলাম জমি লিখে দিতে অস্বীকার করলে বহরমপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য রাকিবুল হাসান সোহাগ, রহিম বেপারী, শাহজাহান মৃধা ও মো. কাইয়ুম গাজীর কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করেন সহিদুল হাওলাদার। তারা গত ০৩ নভেম্বর সকালে নুরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে সালিশ বৈঠকে বসতে তাকে চাপ দেন। এতে নুরুল ইসলাম রাজি না হওয়ায় তারা উত্তেজিত হয়ে নুরুল ইসলামকে এলোপাতাড়ি লাথি, কিলঘুসি মারতে থাকেন। হামলা থেকে বাঁচতে নুরুল ইসলাম এক পর্যায়ে পাশের ডোবায় ঝাঁপ দিলে কাইয়ুম গাজী তাকে পানির নিচে চেপে ধরেন। পানি থেকে ওপরে তোলার পর নুরুল ইসলাম অচেতন হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাকে দ্রুত দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে জরুরি বিভাগে কর্মরত ডা. রাহুল বিন হালিম জানান, ‘নুরুল ইসলামকে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কমিশন থেকে দশমিনা থানার ওসি মো. আব্দুল আলীমের সাথে মুঠোফোনে আলাপ হলে তিনি জানান যে, ইতোমধ্যে অভিযোগের বিষয়ে মামলা রুজু করা হয়েছে। তাছাড়া সন্দিগ্ধ একজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
সুয়োমটোতে উল্লেখ রয়েছে, এ ঘটনায় শুধু সালিশকারীরাই নয়, মৃত নুরল ইসলামের পুত্র সহিদুল হাওলাদারও সমভাবে দায়ী। আইন অনুযায়ী যেখানে পিতা পুত্রের নিকট থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার দাবীদার, সেখানে জীবিত অবস্থায় সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য পিতাকে চাপ প্রয়োগ করাও একটি অপরাধ। বর্ণিত অবস্থায়, সহিদুল হাওলাদারের বিরুদ্ধেও যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। এ অবস্থায়, অভিযোগের বিষয়ে দশমিনা থানায় দায়েরকৃত মামলায় আসামিদের গ্রেফতার এবং তদন্তের সর্বশেষ অগ্রগতি আগামী ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯ এর ১৭ ধারা অনুযায়ী পুলিশ সুপার, পটুয়াখালী-কে বলা হয়েছে।
বিকাশ দত্ত