ফলোআপ নিউজ
তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হজরত ইলিয়াস শাহ (রাহ.) এর নাতি মাওলানা সাদ’র কিছু বিতর্কিত বক্তব্য নিয়ে বিশ্ব তাবলিগ জামাত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন সাদ বিরোধীরা।মাওলানা ইলিয়াছ (রাহ.)-এর ছেলে মাওলানা হারুন (রাহ.)। তারই ছেলে হলেন মাওলানা সাদ কান্ধলভী।
আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামি মহাসম্মেলন থেকে তাবলীগ জামাতের সোহরাওয়ার্দী ইজতেমাকে কেন্দ্র করে একপক্ষের নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যদি স্বঘোষিত আমির মাওলানা সাদ ও তার অনুসারীদের এ দেশে আসতে দেওয়া হয়, তাহলে এই অন্তর্বর্তী সরকারকেই দেশ ছেড়ে পালাতে হবে।
সম্প্রতি তাবলিগ এর ইস্যুকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম উত্তেজনা।বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গড়িয়েছে।
দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের মুরব্বী সাদ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় কুরআন, হাদিস, ইসলাম, নবি-রাসুল ও নবুয়ত এবং মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন বলে মনে করেন তাবলিগের অপর পক্ষ।তাদের মতে সাদের এ সব আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য তিনি দেওবন্দসহ বিশ্ব আলেমদের কাছে বিতর্কিত হয়েছেন।
তারা আরও মনে করেন, তাবলিগ জামাতের কোন আমির বা মুরব্বির কোন বয়ান নিয়ে এর আগে এতো বিতর্কের সৃষ্টি হয়নি। যেটি হচ্ছে মাওলানা সাদের দেয়া বিভিন্ন বয়ান নিয়ে।
অভিযোগ উঠেছে তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় কুরআন, হাদিস, ইসলাম, নবি-রাসুল ও নবুয়ত এবং মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে আপত্তিকর বয়ান করেছেন। যার জন্য দেওবন্দসহ বিশ্ব আলেমদের অনেকেই এসব বয়ানের জন্য প্রকাশ্যে তাকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন।
তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যগুলো ‘সা’আদ সাহেবের আসল রূপ’ নামে একটি ছোট্ট বই আকারে প্রকাশ করেছেন জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার মুহাদ্দিস, তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বীরা।
তার দেয়া বিতর্কিত বয়ানের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-
হেদায়েতের সম্পর্ক যদি আল্লাহর হাতে হতো, তাহলে তিনি নবি পাঠাতেন না।
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম কর্তৃক হজরত হারুন আলাইহিস সালামকে নিজের স্থলাভিষিক্ত বানানোও অনুচিৎ কাজ হয়েছে।
মুজিজার সম্পর্ক কেবল দাওয়াতের সঙ্গে। নবুয়াতের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম থেকে বড় এক ভুল হয়ে গেছে এবং তিনি এক অপরাধ করে ফেলেছেন- জামাআত এবং কাওমকে ছেড়ে তিনি আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য ‘নির্জনতা’ অবলম্বন করেছেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াত ইলাল্লাহর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইশার নামাজকে পর্যন্ত বিলম্ব করে পড়েছেন। অর্থাৎ নামাজের চেয়ে দাওয়াতের গুরুত্ব বেশি।
হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম ‘তোমার প্রভুর কাছে আমার কথা বল’ বলে গাইরুল্লাহর দিকে দৃষ্টি দেয়ার কারণে তাকে অতিরিক্ত ৭ বছর জেলখানায় থাকতে হয়েছে।
হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম আল্লাহকে ছেড়ে গাছের কাছে আশ্রয় চাইলেন। ফলে শাস্তি ভোগ করতে হলো।
ভোটের সময় চিহ্ন হিসাবে (আঙুলে) যে রং লাগানো হয়, তার কারণে নামাজ হয় না। তাই ভোট না দেয়া উচিত।
বিভিন্ন আয়াতে তিনি বলেন, মুফাসসিরিন এই আয়াতের কোনো এক তাফসির করেছেন, ওলামা কোনো এক তাফসির করে থাকেন, কিন্তু আমি এই তাফসির করে থাকি। এটা শুনো। এটাই সঠিক তাফসির!
ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখা হারাম এবং পকেটে ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রেখে নামাজ হয় না। যে আলেমগণ ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখাকে ‘জায়েজ’ বলেন, তারা ‘ওলামায়ে ছু’। বার বার কসম খেয়ে তিনি বলেন, তারা হলো ‘ওলামায়ে ছু’। এমন আলেমরা হলো গাধা! গাধা! গাধা!
মোবাইলে কুরআন শরীফ পড়া এবং শোনা; প্রস্রাবের পাত্র থেকে দুধ পান করার মতো!
মাদরাসা মসজিদের বেতন বেশ্যার উপার্জনের চেয়ে খারাপ
কুরআন শরীফ শিখিয়ে বেতন গ্রহণ করেন, তাদের বেতন বেশ্যার উপার্জনের চেয়েও খারাপ। যে ইমাম এবং শিক্ষক বেতন গ্রহণ করেন, বেশ্যারা তাদের আগে জান্নাতে যাবে!
মাদরাসাগুলোতে জাকাত না দেয়া হোক। মাদরাসায় জাকাত দিলে জাকাত আদায় হবে না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর কেবল তিনজন লোকের ‘বাইআত’ পূর্ণতা পেয়েছে। আর বাকি সবার বাইআত অপূর্ণ। সেই ৩ জন হলেন- শাহ ইসমাঈল শহীদ, মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস এবং মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ।
মাওলানা সাদ সাহেব আযমগড়ের ইজতেমায় এবং অন্যান্য ইজতেমায় একাধিকবার সুন্নাতকে ‘৩ প্রকার’ বলে বর্ণনা করেছেন, ইবাদতের সুন্নাত, দাওয়াতের সুন্নাত এবং আচার-অভ্যাসের সুন্নাত।
দাওয়াতের পথ’ হলো নবির পথ, ‘তাসাউফের পথ’ নবির পথ না।
আজান হলো ‘তাশকিল’ (প্ল্যান-পরিকল্পনা)। নামাজ হলো ‘তারগীব’ (পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্বুদ্ধকরণ)। আর নামাজের পর আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া হলো ‘তারতীব’ (পরিকল্পনার মূল বাস্তবায়ন)
ফুয়াদ