ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের তিন মাস পার হচ্ছে আজ

ইসরাত

প্রকাশিত: ১৩:৩৮, ৫ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৩:৪৪, ৫ নভেম্বর ২০২৪

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের তিন মাস পার হচ্ছে আজ

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান

জুলাই বিপ্লব শব্দটা শুনলে এতকাল চোখে ভেসে উঠেছে ১৮৩০ সালে ফ্রান্সে সংগঠিত বিপ্লবের চিত্র, যা ১৮৩০ সালের ২৬ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। কিন্তু ২০২৪–এর জুলাইয়ে এসে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান হলো। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ‘বাংলা ব্লকেড’ শব্দটির সঙ্গে জনমণের একাত্মতাকে স্বৈরাচার সরকারের দমিয়ে রাখার প্রয়াস গিয়ে আশ্রয় খুঁজল একাত্তর–পরবর্তী ঘৃণ্য ‘রাজাকার’ শব্দে। হাজারও তরুণ সুর মিলাল


‘তুমি কে, আমি কে
রাজাকার, রাজাকার
কে বলেছে, কে বলেছে
স্বৈরাচার স্বৈরাচার’

ধ্বনিতে।

 

শুরু হলো বাংলা বসন্ত। সরকার বুঝতেই চাইল না ক্ষমতা তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। পতঙ্গের পতন এলে সে আগুনের দিকেই ঝুঁকবে, এটাই কী স্বাভাবিক নয়? রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপেশাদারিত্ব, মন্ত্রীদের বিতর্কিত ন্যারেটিভ পাল্টে দিলো বিপ্লবের ধারা, বিক্ষোভে ফুঁসে উঠল হাজারো তরুণ।

পুলিশি বুলেটে আবু সাঈদের অটল বিশ্বাসে ভরা বুকটার নিশ্বাস আটকে যায় ১৬ জুলাই। আন্দোলন হয়ে ওঠে আরও তীব্র থেকে তীব্রতর। 


পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ডাউনফল করলে পাশে দাঁড়ায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ডাউনফল করলে পাশে দাঁড়ায় স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থী। দেয়াল ছেয়ে যায় প্রতিবাদী গ্রাফিতি এবং দেয়াল লিখনে, একটা দেশের রাজা চুপ অথচ রাজপথ কথা বলে। এ যেন গ্রিক শহর এফিসাস। ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, এখন সময় পক্ষে না’, ‘আসছে ফাগুন আমরা হব দ্বিগুণ’, ‘ব্লাডি জুলাই’, ‘আমি মেট্রোরেল হতে চেয়েছিলাম, খোদা আমাকে ছাত্র বানাল’, ‘তুই মোর ছাওয়াক চাকরি না দিবু না দে, কিন্তু মারলু ক্যানে?’

৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, 'আমরা এখনো আগস্টে যাই নি। জুলাই হত্যার বিচার করেই আমরা আগস্টে যাব।'

গণজোয়ারে সৃষ্ট ঝড়ের দাপটে দেশে উড়তে থাকল লাল সবুজের পতাকা, মুহূর্তেই ছিঁড়ে গেল বুলডোজারের অদৃশ্য শিকল। মুক্ত হলো দেশ। ফরাসি বিপ্লবের স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্বের নীতি হয়ে উঠল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্তর্নিহিত নীতি। মৃত্যু পথযাত্রী জুলাইয়ের শেষ সাধ পূরণ হলো, জয় এল। জুলাই বুঝল—এবার তার শেষ হওয়ার পালা। শুরু হলো আগস্ট, শুরু হলো আগামী।

 

আজ ৫ নভেম্বর। ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের তিন মাস পূর্ণ হলো। তবে প্রশ্ন থেকে যায় এই তিন মাসে বাংলাদেশ কতটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে? যে চাওয়া নিয়ে ছাত্র জনতা বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়েছিলো, যেই আশায় হাজারো মানুষ এক হয়ে রাস্তায় নেমেছিলো তা কতটা পূর্ন করতে পেরেছে অন্তবর্তীকালীন সরকার? 

পুরোপুরি মূল্যায়নের জন্য এই কয়দিন সময় হয়তো যথেষ্ট নয় কিন্তু প্রত্যাশার পারদ ও আকাশচুম্বী।  

ছাত্রপ্রতিনিধিদের মতে, আর্থিক খাতে সুশাসন ফেরানোর চেষ্টা, সরকারি অফিসের শৃঙ্খলা নিয়ে আসা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাঁদাবাজি বন্ধ, আর যত্রতত্র সরকারি দলের বলপ্রয়োগ না থাকায় এরইমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে বড় পরিবর্তন।  
 
তবে এর মধ্যেও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি বিব্রত করছে সরকারকে। তার সাথে সংস্কারের ডালপালা যত বিস্তৃত হচ্ছে তা কতটুকু সামলাতে পারছে এই সরকার তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠছে জনমনে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মানুষ অনেক দ্রুত কিছু দেখতে চায়। সেই দ্রুত দেখার কোথায় কোথায় বাঁধা সেটাও পরিষ্কার করা জরুরি। স্বৈরাচার হাসিনার রাজনৈতিক কূটকৌশলে দেশকে চোর, ডাকাত, সিমান্ত, পাহাড়ে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার মূখ্যম জবাব দিয়েছে সরকার। তবে একটি পূর্ণাঙ্গ গতিশীল রাষ্ট্র ও সকল খাতের  দুর্নীতি ভেঙে সর্বক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে সরকার বদ্ধপরিকর। ভবিষ্যত বাংলাদেশ বিনির্মানের জন্য সরকার ও জনগনকে ঐক্যমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ।

ইসরাত

×