হাছান মাহমুদ
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা বলছে, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছে, সেটির সাথে আমরা একমত। প্রয়োজনে বিএনপির সাথে একযোগে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা কাজ করব।
গত রবিবার লন্ডনভিত্তিক চ্যানেল এস টেলিভিশনে ‘আওয়ামী লীগ: তটস্থ, হতাশ, কোণঠাসা?’ শীর্ষক এক সাক্ষাৎকারে ভার্চুয়ালি তিনি এ কথা বলেন। এর মধ্য দিয়ে ৫ অগাস্ট সরকার পতনের প্রায় তিন মাসের মাথায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতা প্রথম সাক্ষাৎকার দিলেন।
উপস্থাপক বুলবুল হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামল, জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড, আওয়ামী লীগের ফিরে আসা, অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন হাছান মাহমুদ।
এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির অনেক বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একমত। আমরা ১/১১ সরকারের সঙ্গে একযোগেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য আন্দোলন করেছিলাম এবং গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কিংবা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে বক্তব্যগুলো দিচ্ছেন সেগুলোর অনেকগুলোর সাথে আমরা একমত।
তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে বলেছেন ‘রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার আমরা কারা?’— এই যে প্রশ্ন তুলেছেন আমি এটির সাথে একমত। এমনকি ছাত্রলীগকে কাগজে নিষিদ্ধ করার পর সেটির বিরুদ্ধেও তারা বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তাদের এই বক্তব্যের সাথে একমত।
হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবসহ তাদের শীর্ষ নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করে জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা- এই বক্তব্যের সাথে আমি পুরোপুরি একমত।
বিএনপিকে ২০১৪ সালে এবং ২০২৪ সালে নির্বাচনে আনতে না পারাকে আওয়ামী লীগের ‘ব্যর্থতা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি বলেন, বিএনপি অবশ্যই সবসময় নির্বাচন বর্জন করেছে, নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। তবে যেহেতু আমরা দায়িত্বে ছিলাম, আমাদের এই জায়গায় ব্যর্থতা ছিল আমরা বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে ব্যর্থ হয়েছি। ২০১৪ সালে এবং ২০২৪ সালে তাদের নির্বাচনে আনতে না পারাটা আমাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা ছিল।
এ সময় ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে প্রায় ১৫০০ মানুষ নিহত হওয়ার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও সেই সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, যে সংখ্যা দেওয়া হচ্ছে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন আছে।
সরকারি হিসাবে প্রায় দেড় হাজার বলার কথা উপস্থাপক জানালে হাছান মাহমুদ বলেন, এটা এই সরকার বলছে। নাম প্রকাশ করুক। কারা কোথায়, কোন জায়গায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। ৪৩ জন পুলিশের পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় যেটা প্রকাশ করা হয়েছে, সেটা তারও বেশি। আসলে কতজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, সেটি এখনও তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়।
তিনি বলেন, পুলিশকে যখন আক্রমণ করা হয়, পুলিশের কি আত্মরক্ষার অধিকার নাই? পুলিশের গাড়ি ঘেরাও করে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং পুলিশের ওপর গুলি ছোঁড়া হয়েছে এবং তখন তো পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি যে ছোড়েনি তা নয় অবশ্যই ছুঁড়েছে। সেজন্য এই পুলিশের দায় আমরা কখনও অস্বীকার করি না। বা সরকার পক্ষের দায় আমরা অস্বীকার করি না। এখনও অস্বীকার করছি না। অবশ্যই দায়িত্বে থাকলে দায় নিতে হবে।
৫ আগস্টের আগে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে বলেও দাবি করেন হাছান মাহমুদ।
প্রসঙ্গত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হাছান মাহমুদের দেশ ছাড়ার খবর এসেছিল। তবে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মন্ত্রী ও দলের সংসদ সদস্যদের গ্রেপ্তার অভিযানের মুখে তিনি কীভাবে বাইরে গেলেন, সেই প্রশ্ন রয়ে গেছে এখনও। সূত্র : দেশ রূপান্তর
সাইফুল