প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস
রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে গঠিত ছয় সংস্কার কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। বৈঠকে কমিশন প্রধানরা সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। তাঁরা জানান, সংস্কার কমিশনের কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে।
ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সোমবার কমিশন প্রধানদের এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সংস্কারের মাধ্যমে জাতি হিসেবে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করতে চান।
বৈঠকে নির্বাচন সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন প্রধান ইফতেখারুজ্জামান এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ অংশগ্রহণ করেন।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন তিনি। অধ্যাপক ইউনূস তাঁর ভাষণে বলেন, তাঁরা সংস্কার চান। সংস্কারের মাধ্যমে জাতি হিসেবে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করতে চান। আর সংস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরবর্তীতে ছয় জন বিশিষ্ট নাগরিককে কমিশনের প্রধান করে ছয় কমিশন গঠন করা হয়। গত মাস থেকে কমিশনগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। পরে আরও চারটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন গঠনের দিন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ১০ সংস্কার কমিশনকে সরকারপ্রধানের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
জনপ্রশাসন ॥ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, বৈঠকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়িদ চৌধুরী। তিনি জানান, তাঁর কমিশনের কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সবার মতামত সংগ্রহ শুরু হয়েছে। কমিশনের সদস্যরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সফর করে জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।
জনপ্রশাসনের বিভিন্ন ক্যাডার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু হয়েছে এবং এটি চলমান রয়েছে। কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন পেশ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ ॥ বৈঠকে পুলিশ সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে জানান কমিশন প্রধান সফর রাজ হোসেন। তিনি জানান, পুলিশ সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে ১০টি সভা করেছে। পাশাপাশি অংশীদারদের সঙ্গে আরও চারটি বৈঠক করেছে।
জনসাধারণের মতামত চেয়ে একটি প্রশ্নমালা প্রস্তুত করা হয়েছে; যা ইতোমধ্যে ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। কিছু আইন ও বিধি সংশোধনের প্রস্তাব এসেছে যেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া কয়েকটি প্রক্রিয়া সহজ করে তোলার জন্য যথাযথ প্রস্তাব করা হচ্ছে।
এ ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির কিছু ধারা পরিবর্তনের বিষয়ে যাচাই করছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। কমিশন প্রধান সফর রাজ হোসেন জানান, পুলিশের কিছু আইন ও বিধি সংশোধনের প্রস্তাব এসেছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া কয়েকটি প্রক্রিয়া সহজ করে তোলার জন্য যথাযথ প্রস্তাব করা হচ্ছে। তিনি জানান, মব নিয়ন্ত্রণে বলপ্রয়োগ পদ্ধতি পরিবর্তন করার প্রস্তাব নিয়ে কাজ চলছে। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর কতিপয় ধারা পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং তা পরিবর্তন করা হবে কি না সেটি যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন ॥ বৈঠকে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে জানান নির্বাচন সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি জানান, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে; অনুপস্থিত ভোটারদের জন্য পোস্টাল ব্যালট নিয়ে কাজ চলছে; জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে ভোটার তালিকার সমন্বয় করা হচ্ছে।
এ ছাড়া নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতে জোর দিচ্ছে নির্বাচন সংস্কার কমিশন, এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে; ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে এবং পরামর্শ গ্রহণ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, প্রধান এই ছয়টি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন খাত সংস্কারের জন্য মোট ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রথম দফায় নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ গেজেট প্রকাশিত হয়।
পরে আরও চারটি কমিশন গঠিত হয়। এগুলো হলো জাতীয় অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ খানকে প্রধান করে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন, বিশিষ্ট কলামিস্ট কামাল আহমেদকে প্রধান করে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে শ্রমিক অধিকার সংস্কার কমিশন এবং নারী পক্ষের শিরিন পারভীন হককে প্রধান করে নারী বিষয়ক কমিশন।