ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১

যুব কর্মসংস্থান শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনে ড. দেবপ্রিয়

কারিগরি শিক্ষা দেশের উন্নয়নে অন্যতম সম্ভাবনা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:৩৫, ৩ নভেম্বর ২০২৪

কারিগরি শিক্ষা দেশের উন্নয়নে অন্যতম সম্ভাবনা

কারিগরি শিক্ষা দেশের উন্নয়নে অন্যতম সম্ভাবনা

দেশের তিন জেলায় ৬৭ শতাংশ কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ভালো। তবে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মাত্র ১৩ শতাংশ শিক্ষার মানে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংগঠনটির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মনে করেন, মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষা বাংলাদেশের উন্নয়নে আগামী দিনের অন্যতম সম্ভাবনা। এ জন্য শুধু কারিগরি শিক্ষার আধুনিকায়ন নয়, সরকারের কাছে অংশীদারিত্বমূলক সংস্কার কমিটি তৈরির আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত ‘যুব কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে স্থানীয় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনে এসব কথা বলেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, সরকারেরর পক্ষ থেকে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। কারিগরি শিক্ষার শুধু আধুনিকায়ন নয়, সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, অংশীদারিত্বমূলক সংস্কার কমিটি তৈরির। আশা করব, দ্রুত আধুনিক, দক্ষ, রূপান্তরমূলক কর্মúরিকল্পনা তৈরির উদ্যোগ নেবে সরকার। ২৫-২৬ বাজেটে অর্থ সংস্থান ও প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানুষগুলো যেন সেটার সুযোগ পায়।
গবেষণা প্রতিবেদনে সিপিডি জানিয়েছে, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মাত্র ১৩ শতাংশ শিক্ষার মানে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। সাবেক শিক্ষার্থীদের ৬৩ শতাংশের মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকার নিচে। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. তৌফিকুল ইসলাম খান।
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে পঞ্চগড়, সুনামগঞ্জ ও সাতক্ষীরায় সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিক এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত কারিগরি শিক্ষা-প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মতামত নেওয়া হয়েছে। ৬০০ জন বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, ৬০ জন শিক্ষক-প্রশিক্ষক, ২৪০ জন অভিভাবক, ৭৫ জন সরকারি কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ ও চাকরিদাতাদের ৭৫ জনের মতামত নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও যন্ত্রাংশ নেই, ল্যাবের সংখ্যা অপ্রতুল। পঞ্চগড় ও সুনামগঞ্জে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট না থাকায় শিক্ষার্থীরা দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ ডেটাবেজ না থাকায় অসাধু শিক্ষার্থীরা ভাতার একাধিক কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিবন্ধিত হয়। এতে আরও জানানো হয়, প্রতিবছর কারিগরি শিক্ষায় মাধ্যমিক পর্যায়ে সমাপনকারী মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রীর হার কমেছে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষ তাদের ঘৃণার চোখে দেখে।
প্রতিবেদনে শিক্ষা অধিদপ্তরের কার্যক্রমের বাজেট বাস্তবায়নের হার বাড়ানো, চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রণোদনা বাড়ানো, প্রশিক্ষণের প্রচার বাড়ানো, নিড বেজড ট্রেনিং বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। পঞ্চগড়ে কৃষি পর্যটন, কৃষি ও পরচুলা তৈরি সংক্রান্ত ট্রেড চালু করা, সাতক্ষীরায় আম, চিংড়ি ও সুন্দরবন মধু আহরণের বিবেচনায় এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি ও ফ্রোজেন ফুড প্রোসেসিং সংক্রান্ত কোর্সে জোর দেওয়া আর সুনামগঞ্জ এলাকায় কৃষি, মৎস্য ও পর্যটন সংক্রান্ত ট্রেড চালু করার প্রস্তাব দিয়েছেন সাবেক শিক্ষার্থীরা।
সিপিডির আরেক ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কেমন হবে, তা নির্ভর করবে শিক্ষার্থীদের কেমন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তার ওপর। বাজার চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিন বলেন, মিডলম্যানদের দৌরাত্ম্যের কারণে অভিবাসন ব্যয় বাড়ছে। তাদের আইনি কাঠামোতে আনতে নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে, যা প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তের প্রক্রিয়া চলছে। ডিসেম্বরে একটি প্লাটফর্ম করা হবে। চাকরিদাতাদের চাহিদা ও বিদেশ গমনে ইচ্ছুকদের সব তথ্য সেখানে উন্মুক্ত থাকবে।
সম্মেলনে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর একটি সামাজিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। যেখানে বলা হয়, মোট বাজেটের অনুপাতে কারিগরি শিক্ষার বাজেট বরাদ্দ খুবই কম। এ জন্য জাতীয় বাজেটে কারিগরি শিক্ষায় আর্থিক বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে যে অঙ্গীকার তা বাস্তবায়নে বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগের অভাব রয়েছে। উত্তরণে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার মান্নোনয়নে বেশ কিছু নীতি সহায়তার সুপারিশ করে সিপিডি।

×