ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১

যেভাবে তরুণ জেন-জি’দের নেতৃত্বের নায়ক হলেন ৮৪ বছরের ড. ইউনূস

প্রকাশিত: ০৪:২১, ২ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ০৪:২৫, ২ নভেম্বর ২০২৪

যেভাবে তরুণ জেন-জি’দের নেতৃত্বের নায়ক হলেন ৮৪ বছরের ড. ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ঢাকার রাস্তাগুলোর দেয়ালে দেয়ালে এখনো জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতিগুলো জ্বল জ্বল করছে। কোনো দেয়ালে রয়েছে শিকলে বাঁধা হাতের ছবি, অন্য আরেকটিতে আহত এক ছাত্রকে সাহায্যের জন্য ছুটে আসা এক সাইকেল আরোহীর ছবি। আবার কোনো দেয়ালে লেখা ‘শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে না’। 

 

 

 

 

 

 

বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষে সরকারি চাকরিতে বৈষম্যের বিরুদ্ধে জুলাই মাসে রাস্তায় নামে ছাত্র-জনতা। আন্দোলন দমনে তাদের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারা দেশের দেয়ালে দেয়ালে ওই ম্যুরালগুলো আঁকা হয়েছিল। আন্দোলনে নিহত হন শত শত মানুষ।

পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের  নেতৃত্বে আন্দোলন আরও তীব্র হলে স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। স্বল্প সময়ের মধ্যে জনগণের জন্য এটি একটি আকর্ষণীয় বিজয়গাথা।


ছাত্ররা একে ‘বিপ্লব’ বলে অভিহিত করেছে। তাদের বিপ্লবের তিন মাস অব্যাহত গতিতে এগিয়ে চলছে। আগস্টে ছাত্ররা শান্তিতে নোবেলজয়ী ৮৪ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হওয়ার আহ্বান জানান।

এতে সম্মত হয়ে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যাপক সংস্কারের কাজ শুরু করেছে ড. ইউনূস। তিনি নির্বাচনেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন দুই ছাত্র নেতা।

ইতিমধ্যেই ড. ইউনূস জানিয়েছেন যে, বর্তমান দায়িত্ব পালনের পর রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই তার।


জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ড. ইউনূস সম্প্রতি বিপ্লবের বিভিন্ন ছবি সংবলিত একটি বই উপহার দেন তাদের। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ছাত্রদের সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেছেন, ‘তারা দেশের নায়ক। তারা বিজয়ী। তারাই এই বিপ্লব এনেছে।’

প্রাণশক্তি এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে ড. ইউনূস তরুণদের নিয়ে যে পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন তা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে একটি বিরল দৃশ্য। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ব্লকের পতনের পর মধ্য ইউরোপে যে সংস্কারের ধারা শুরু হয়েছিল তার সঙ্গে ইউনূস সরকারের কাজ কিছুটা সাদৃশ্যপূর্ণ। অথবা ২০১১ সালে কয়েক দশক ধরে চলা মিয়ানমারে সামরিক শাসনকে যেভাবে ভেঙে দেয়া হয়েছিল তার সঙ্গেও মিলানো যায়।  

দলীয় স্বার্থে পুলিশ এবং আদালতের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহারের কারণে আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিবাদের’ সমর্থক বলে অভিযুক্ত করেছেন ড. ইউনূস।

ইতিমধ্যেই তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করেছেন। দেশের সংবিধান ও নির্বাচনী ব্যবস্থার পুনর্গঠন থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি বিষয়ের সংস্কারের কাজ শুরু করেছে তার সরকার। বিশেষ করে হাসিনার আমলে শত শত বা হাজার হাজার লোকের জোরপূর্বক গুমের বিষয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গঠিত হয়েছে কমিশন। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগের মতে, হাসিনার গোপন কারাগারে নিয়ে নির্যাতন বা হত্যার বিষয়টিও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ বছরের শেষের দিকে এ বিষয়ে রিপোর্ট জমা দেবে সংশ্লিষ্ট কমিশনগুলো।

এদিকে দেশের ব্যাংক থেকে পাচার হওয়া প্রায় ১৭০০ কোটি ডলার ফেরত আনার চেষ্টা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান মানসুর। তার অনুমান হচ্ছে, হাসিনার শাসনামলে বিভিন্ন ব্যাংকের মালিকরা বিদেশে এই অর্থ পাচার করেছে। বিশালাকার দুর্নীতির মধ্যে হাসিনা ও তার সহযোগীদের এই অর্থ পাচার সামান্যই বটে।



ড. ইউনূস জোর দিয়ে বলেছেন, ছাত্রদের ‘সরকার দখলের কোনো পরিকল্পনা ছিল না’, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবিকে সামনে রেখে তা বিপ্লবে রূপ নিয়েছে।

আসিফ মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞানের ২৬ বছর বয়সী একজন সাবেক ছাত্র। যিনি বর্তমান সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তাদের কাজ শেষ হয়নি। বিপ্লব এখনো শেষ হয়নি’। তিনি আরও বলেছেন, ‘এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বিপ্লবের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।’

ফুয়াদ

×