নতুন ইসি গঠনে সার্চ কমিটি
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ দিতে সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পেশ করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে ছয় সদস্য বিশিষ্ট সার্চ কমিটির সভাপতি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান। রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক সদস্য হলেন- বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিন্নাতুন নেছা তাহমিদা বেগম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার।
এ ছাড়া পদাধিকার বলে সদস্য হিসেবে আছেন বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. নূরুল ইসলাম এবং পিএসসির চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম। এই সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ দেবে।
নির্বাচন কমিশন গঠনের আইনে বলা হয়েছে, অনুসন্ধান কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে রাষ্ট্রপতির কাছে দুজন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে। তিনজন সদস্যের উপস্থিতিতে অনুসন্ধান কমিটির সভার কোরাম গঠিত হবে।
অনুসন্ধান কমিটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ মোতাবেক দায়িত্ব ও কার্যাবলি সম্পন্ন করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুসন্ধান কমিটির কার্য সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা দেবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদে পাস হওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটি (অনুসন্ধান কমিটি) গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের এ অনুসন্ধান কমিটি গঠিত হয়। আইনে বর্ণিত যোগ্যতা-অযোগ্যতা বিবেচনা করে তারা ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। ১০ জনের মধ্য থেকেই ৫ জনকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি গঠন করবেন নতুন নির্বাচন কমিশন।
অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি সম্পর্কে আইনের ৪ ধারায় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, অনুসন্ধান কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে এবং এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিন্নতা, সততা ও সুনাম বিবেচনা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অনুসন্ধান করবে এবং এ জন্য রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে রাষ্ট্রপতির কাছে দুজন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে কমিটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন সংস্কার করে ইসি পুনর্গঠনের চিন্তা ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের। তবে রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার চাপ, ভোটার তালিকা তৈরি এবং নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে দ্রুত ইসি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনাও করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, আইনি বাধ্যবাধকতার অংশ হিসেবে প্রতি বছরের ২ জানুয়ারি ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করা হয়। তার আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হয় ইসিকে। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচনের আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। আইন অনুযায়ী ভোটার তালিকা হালনাগাদের খসড়া ও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দায়িত্বও ইসির।
ফলে কমিশন না থাকায় এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি ইসি সচিবালয় নিতে পারছে না। ইসি নিয়োগে কোনো আইন ছিল না। ২০১২ সালে এবং ২০১৭ সালে পর পর দু’বার সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এর মধ্যে ২০১২ সালে কাজী রকিবউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়। একইভাবে ২০১৭ সালে সার্চ কমিটি কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন গঠন করে। পরে ২০২২ সালে ওই সার্চ কমিটি গঠনের বিধান রেখে ইসি নিয়োগে আইন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ওই আইনে ২০১২ ও ২০১৭ সালে গঠিত সার্চ কমিটির বৈধতা দেওয়া হয়।
গত ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক মাসের মাথায় গত ৫ সেপ্টেম্বর বিদায় নেন কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন, যাদের অধীনে এ বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল। পদত্যাগ করা অন্য কমিশনাররা হলেনÑ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আহসান হাবীব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মোহাম্মদ আলমগীর এবং আনিছুর রহমান।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুরু হয়। সংস্কারসহ নানা ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ পর্যন্ত চার দফা বৈঠক করেছেন। আর এসব বৈঠকে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করে নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবি জানায়। এমনকি রাষ্ট্রপতির অপসারণ প্রশ্নে সাংবিধানিক সংকট হলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে এমন আশঙ্কাও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে জানিয়েছে বিএনপির নেতারা।