নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম
রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হবে তবে তাদের সঙ্গে সংলাপের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
ড. বদিউল আলম বলেন, এ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা ১২টি বৈঠক করেছি। আমাদের কাজ উল্লেখযোগ্য অগ্রসর হচ্ছে। নির্বাচনের বিভিন্ন আইন-কানুন আমরা পর্যালোচনা করছি। এই সংস্কারের জন্য আমরা বিভিন্ন অংশীজনের কাছ থেকে মতামত নেব। তবে আমি মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো মতবিনিময়ের প্রয়োজন নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে আমরা সুস্পষ্ট মতামত নেব।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম বলেন, সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের নয়। নির্বাচন ব্যবস্থা বা নির্বাচন কার্যক্রম সুন্দরভাবে করার জন্য আমাদের কাজ হলো কিছু সুপারিশ করা। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই আমাদের সুপারিশ দেওয়ার সময় দেওয়া হয়েছে। আমরা এর মধ্যেই সুপারিশ করব।
আপনারা সার্চ কমিটির সংস্কারের প্রস্তাব দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার আগেই সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়েছেÑ এ বিষয়টি কিভাবে দেখছেন? জবাবে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমানে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন। আর নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। সার্চ কমিটি তার নিজস্ব গতিতে কাজ করবে এবং আমরা আমাদের মতো কাজ করব। আমরা যে প্রস্তাবগুলো দেব, সেগুলো কিছু বাস্তবায়ন করবে সরকার এবং কিছু করবে নির্বাচন কমিশন। তাই সার্চ কমিটির সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা নেই।
বদিউল আলম বলেন, এখন আমরা ছাত্র হয়ে গেছি। অনেক আইন, বিধিবিধান পর্যালোচনা করছি। এর ভিত্তিতে আমরা যে ইস্যুগুলো চিহ্নিত করব, তার ভিত্তিতে বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নেব। মতামত নেওয়ার পর আমরা সরকারের সুপারিশ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হব। প্রবাসী ভোটাররা যেন ভোট দিতে পারে সেই বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি। এর আগে ১১টি বৈঠক হলেও সাত সদস্যের সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধি যোগ হলো বৃহস্পতিবার। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিকা আরমান সদস্য হওয়ায় তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ড. বদিউল আলম মজুমদারের সভাপতিত্বে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন এ কমিশনের সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ, জেসমিন টুলী, ড. মো. আব্দুল আলীম, ডা. জাহেদ উর রহমান, মীর নাদিয়া নিভিন, মোহাম্মদ সাদেক ফেরদৌস, সদস্য ও ছাত্র প্রতিনিধি সাদিকাল আরমান, ইসির সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন এবং ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান।
রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী-এমপি পদে দু’বারের বেশি নয়- মওসুস ॥ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য পদে একই ব্যক্তি দু’বারের বেশি থাকতে পারবেন না। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের সভাপতি বা সেক্রেটারিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে কোনো ব্যক্তি তিনবারের বেশি থাকতে পারবে না। এমন আইন আনতে সরকারের কাছে সুপারিশের জন্য প্রস্তাব করেছে মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (মওসুস)। বৃহস্পতিবার নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদারের কাছে মওসুসের চেয়ারম্যান ড. মো. গোলাম রহমান ভূঁইয়া লিখিত আকারে ২৩ দফা প্রস্তাব করেছেন।
ওই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার নিমিত্তে সংবিধান সংশোধন করতে হবে এবং একই ব্যক্তির পর পর দুই মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী থাকার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। একইভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সভাপতি ও সেক্রেটারিসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ পদে পর পর দুই বা তিন মেয়াদের বেশি কেউ যেন থাকতে না পারে সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনতে হবে এবং এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কার্যকরী ভূমিকা রাখবেন। এছাড়া মন্ত্রী ও এমপি পদেও দু’বারের বেশি কেউ থাকতে পারবেন না।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে নেতা নির্বাচন করা, রাজনৈতিক অপরাধের বিচারের জন্য পলিটিক্যাল ট্রাইব্যুনাল ও পলিটিক্যাল আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন সংশোধন, দলগুলোর মনোনয়ন বাণিজ্য রোধ, রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়নে জাতীয় লিডারশিপ ইনস্টিটিউট গঠন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইন সভার প্রবর্তন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্প্রতিষ্ঠা, সৎ, যোগ্য সাহসী নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় প্রভাবমুক্তকরণ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়করণ, একাধিক দিনে সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থাকরণ, এনআইডি ব্যবস্থাপনা ইসির অধীনেই রাখা, তিন পার্বত্য অঞ্চলে তিন সংসদীয় আসন ও ঢাকার জন্য ১১টি আসন সংরক্ষণ করা, সকল প্রার্থীকে এক মঞ্চে এনে প্রচারের ব্যবস্থা, প্রার্থীদের সকল তথ্য ভোটারদের কাছে প্রকাশ করা, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রচলন, হলফনামা ও মনোনয়ন ফর্ম সংশোধন, প্রার্থী হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দলের ন্যূনতম তিন বছরের সদস্যভুক্ত থাকা, নির্বাচন কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে আসার পথ সীমিত করার বিধান আনার কথা বলা হয়েছে।