৪০ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে আগামী সপ্তাহে দরপত্র
জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে আসতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষ করে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক পরিকল্পনা। দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৪০টি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে আহ্বান করা হচ্ছে দরপত্র।
চলতি সপ্তাহেই এ বিষয়ে আগ্রহী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসবে বিদ্যুৎ বিভাগ। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী সপ্তাহের শুরুতেই আহ্বান করা হবে দরপত্র। যেসব কোম্পানি সর্বনিম্ন দর প্রস্তাব করবে এবং সর্বনি¤œ দামে বিদ্যুৎ দিতে পারবে সেই প্রতিষ্ঠানকেই দেওয়া হবে কাজ।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নীলফামারী, সৈয়দপুর, জামালপুর, পঞ্চগড়, ঈশ্বরদী, গোপালগঞ্জ, ভালুকা, কক্সবাজার, চকরিয়া, পীরগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও টাঙ্গাইলসহ আরও কয়েকটি অঞ্চলে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে দরপত্র আহ্বান করা হবে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ কেন্দ্রেরই উৎপাদন সক্ষমতা হবে ৫০ মেগাওয়াট। কোনো কোনো কেন্দ্রের সক্ষমতা সাপেক্ষে বাড়তে পারে উৎপাদনও। এক্ষেত্রে জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালনের জন্যও নেওয়া হবে ব্যবস্থা। তবে কেউই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া ছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র কাজ পাবে না।
বিগত সরকারের সময় ‘বিদ্যুৎ-জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ বিধান ২০১০’-এর অধীনে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ দেওয়া হতো।
এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অতিরিক্ত দরে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিগত সরকারের গৃহীত এমন ৪০টি প্রকল্প বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে ৪০টি প্রকল্পের পরিকল্পনা নেওয়া হয়ে গেছে জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জনকণ্ঠকে বলেন, এই প্রকল্পগুলো যিনি পরিকল্পনা করেছিলেন, তিনি কয়েকদিন দেশের বাইরে ছিলেন। তিনি ফিরেছেন। এই সপ্তাহেই আগ্রহী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের মতামত গ্রহণ করা হবে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহেই আমরা দরপত্র আহ্বান করতে পারব।
সব ঠিকঠাক থাকলে নতুন বছরের শুরুতেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। তিনি বলেন, কোনো রকমের তদ্বিরে কাজ পাবে না কেউ। সবাইকে দর প্রস্তাবের মাধ্যমেই কাজ পেতে হবে। এক্ষেত্রে যার দর সবচেয়ে কম হবে, তাকেই কাজ দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে জমি এবং আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো কে দেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব নির্মাতা কোম্পানিকেই করতে হবে। ঠিক কত মেগাওয়াটের কেন্দ্র হবে এ বিষয়ে এখনো আমরা নিশ্চিত না। তাই বিদ্যুতের দাম কী হবে সে বিষয়েও কোনো কথা এখনই বলা যাচ্ছে না।
বিগত সরকারের অধীনে গত বছরের শুরুতেই বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে ৬৮ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সিরাজগঞ্জ সোলার পার্ক প্রকল্পের পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট (পিপিএ) এবং ইমপ্লিমেন্টেশন এগ্রিমেন্ট (আইএ) সই হয়। ওইসময় জানানো হয়, এই প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে ডিসেম্বরে। এর কিছুদিন পর সৌর বিদ্যুতের সম্প্রসারণে ইন্টারন্যাশনাল সোলার এলায়েন্সের (আইএসএ) সঙ্গে কান্ট্রি পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট সই করে। ওই সরকার একটি সোলার রোডম্যাপও (২০২০-২০৪১) তৈরি করে।
বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটকে (ব্রি) দুই কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১২টি ট্রলি মাউন্টেড সোলার ইরিগেশন সিস্টেম, দুই কিলোওয়াট ক্ষমতার ১২টি পোর্টেবল সোলার ধান মাড়াই যন্ত্র এবং ১.৫ কিলোওয়াট ক্ষমতার সোলার ড্রিংকিং ওয়াটার প্ল্যান্ট সরবরাহ করার পরিকল্পনা করে আওয়ামী লীগ সরকার। এ ছাড়াও পরিকল্পনায় ছিল ২২ কিলোওয়াট ক্ষমতার দুটি রুফটপ সোলার স্থাপন এবং যেকোনো একটি রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে রুফটপ সোলার প্রকল্প স্থাপন। ফ্লোটিং সোলার প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পাদন ও ফ্লোটিং সোলার প্রকল্প স্থাপনে সহায়তা।