ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১

দাবি বিবেচনার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি করেছে সরকার

৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি শনিবার পর্যন্ত স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি শনিবার পর্যন্ত স্থগিত

আগামী শনিবার পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত

আগামী শনিবার পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সংগঠক নাঈম হাওলাদার এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এদিকে সড়ক আটকে জনদুর্ভোগ তৈরি না করে আন্দোলনরত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরতে এবং শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তবে শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দেন, দাবি মানা না হলে আগামী রবিবার বেলা ১১টা থেকে অনশন কর্মসূচি শুরু হবে। একই সঙ্গে ব্লকেড কর্মসূচি চলমান থাকবে।
এদিন সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি আব্দুর রহমান বলেন, বৈষম্য দূর করে সাত কলেজের শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা একমাত্র সমাধান। আমরা আমলাতান্ত্রিক কমিটি প্রত্যাখ্যান করছি। শিক্ষাবিদ, গবেষক, শিক্ষা প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠন করবেন এই প্রত্যাশা রাখছি। শিক্ষা উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি একজন শিক্ষাবিদ। আপনি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিকে মূল্যায়ন করবেন।

দীর্ঘ সাত বছরের বৈষম্য দূর করবেন এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি পূরণ করে দেবেন। এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বুধবার শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন, রাস্তায় শিক্ষার্থীদের অবরোধ, আন্দোলন ও আলটিমেটামের মাধ্যমে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেওয়ার কোনো নজির কোথাও নেই।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন। প্রথমে তারা ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো হন এবং পরে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এতে সকাল থেকেই মিরপুর রোড, নিউমার্কেট এলাকা, কাঁটাবন সড়ক, কাজী নজরুল অ্যাভিনিউসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট তৈরি হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ‘বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন’ গঠন করতে হবে। কমিশন না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা কমিটিও প্রত্যাখ্যান করেছেন শিক্ষার্থীরা।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টা এক বিবৃতিতে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা এবং বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন নানা দাবি নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। একটি সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল অবস্থায় পাওয়া শিক্ষা খাতে শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। এসব দাবি-দাওয়ার মধ্যে ন্যায্য-অন্যায্য এবং কিছুক্ষেত্রে পরস্পরবিরোধী দাবিও আছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একটি বৈষম্যবিরোধী দাবি মানলে অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি হতে পারে। শিক্ষা খাতের যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের দাবি পূরণের সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকে এবং এর জন্য তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া কঠিন। অথচ সব কয়টি দাবির পেছনের আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিকেই সবচেয়ে অগ্রাধিকার হিসেবে দেখছেন এবং দাবিগুলোকে শুধু রাস্তায় আন্দোলন করে তাৎক্ষণিক সমাধানযোগ্য মনে করছেন। এতে একদিকে যেমন রাস্তা অবরোধের ফলে অপরিসীম জনদুর্ভোগ হচ্ছে; সরকারও দাবিগুলো যথাযথ বিবেচনার সুযোগ পাচ্ছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনার জন্য সরকার ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে জানিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, কমিটি সাত সপ্তাহের মধ্যে দ্রুত একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে। সমস্যাটির শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে ঢাকার সাতটি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতা থেকে বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করার একটি অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজের উভয়পক্ষেরই সমস্যা তৈরি হয়েছে। যে কারণে ওই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধা ও বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা আরও বলেন, সমস্যাগুলো জটিল এবং এগুলোর সুষ্ঠু সমাধান কী হতে পারে তা বিবেচনায় ন্যূনতম কিছু সময়ের প্রয়োজন। এরই মধ্যে একটি কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করেছেন। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনাও হয়েছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি একজন আজীবন শিক্ষক হিসাবে অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে তার সহানুভূতি আছে বলে মন্তব্যও করেন শিক্ষা উপদেষ্টা। এমন পরিস্থিতিতে রাস্তায় জনদুর্ভোগ তৈরি না করে ধৈর্য ধরার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গতানুগতিক পড়াশোনার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কলেজগুলো হচ্ছে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। অধিভুক্ত কলেজগুলোর ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি প্রক্রিয়া, পরীক্ষা, শিক্ষা কার্যক্রম এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত হচ্ছে।

×