ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১

এনপিপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় মির্জা ফখরুল

নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার চাই সবার আগে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার চাই সবার আগে

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

এখনই অন্যান্য বিষয়ের দিকে নজর না দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে নজর দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা সবার আগে নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার চাই। বুধবার দুপুরে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশ নিয়ে চক্রান্ত শেষ হয়নি। পরিবর্তন বা সংস্কার সঠিকভাবে না হলে রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখা যাবে না। তাই এ সময় সকল সংস্কারের আগে নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার করা প্রয়োজন। আমরা আশা করব, অন্য বিষয়গুলোর দিকে নজর না দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সময়ের সদ্ব্যবহার করবেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে হলে, জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে, সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য, সকলের অংশগ্রহণে একটা নির্বাচন এবং সেটা একেবারেই নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। কারণ, আমাদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের মঙ্গলের জন্য অনেককিছু করার চেষ্টা করছেন।

তারা একদম কিছুই করেননি সেটা ঠিক না। তারা সর্বশেষ যেটা করেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। যদিও আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে, এই কমিটি করার আগে তারা রাজনৈতিক দলগুলো, যারা স্টেকহোল্ডার (অংশীজন) তাদের সঙ্গে একটু পরামর্র্শ করবেন। এটা আমাদের প্রত্যাশা ছিল। তবে এটাকে আমরা বড় ধরনের সমস্যা মনে করছি না। আমরা মনে করি, সেটা হোক। দ্রুত নির্বাচন কমিশন গঠন হোক এবং নির্বাচন কমিশন অতিদ্রুততার সঙ্গে তাদের যে কাজ সেই কাজটা তারা করবেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকারের ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই। এ সরকারের যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তিনি সারা পৃথিবীতে সমাদৃত এবং তিনি বলেছেন যে, ‘আমার কোনো রকমের কোনো রাজনৈতিক ইচ্ছা নেই। আপনারা যে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি তাই পালন করছি।’ সেই কথা ধরে আমি বলতে চাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে যে, আপনি সারা পৃথিবীতে সমাদৃত, দেশের মানুষ আপনাকে খুবই ভালোবাসে, আপনাকে সম্মান দিয়েছে এবং দেবে। এই জায়গাটা যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকে আপনি সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি। এই মুহূর্তে শুধু আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো হঠকারিতার কারণে যদি ভুল হয়ে যায়, আমরা রাষ্ট্র হিসেবে বড় বিপদে পড়ে যাব। কারণ, আমাদের বিপদগ্রস্ত করার জন্য, আমাদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করার জন্য অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে, এই কথাগুলো আমাদের সবার মনে রাখতে হবে। আমরা অতীতে প্রমাণ করেছি, আমরা পারি। আন্দোলনের সময় আমরা বারবার বলেছি, আমরা পারব, তরুণরা এগিয়ে আসো। তরুণরা এগিয়ে এসেছে, পরিবর্তন হয়ে গেছে। তরুণরা দেশে পরিবর্তন এনেছে। এখন এটাকে ধরে রাখার দায়িত্ব তরুণদের। দেশে অনেক সমস্যা এই সমস্যা আমাদের মেটাতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার একটা টেকনোক্রেটদের সরকার, তারা রাজনৈতিক লোক নয়। তারা আমাদের সাহায্য করতে এসেছেন। তারা নিরপেক্ষ থেকে রাস্তা দেখিয়ে দেবেন। রাজনীতিবিদদের মাধ্যমে দেশের সমস্যা সমাধান করতে হবে। কারণ, রাজনীতিবিদ ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধান হয় না, হতে পারে না, এই কথাগুলো মাথায় রেখে আমাদের কাজ করতে হবে।

তাই আমরা যেন একসঙ্গে কাজ করি, আমরা যেন অস্থির না হই। আমাদের ধৈর্যের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের একটা বড় সাফল্য যে, আমরা বাম-ডান সবাইকে একত্রিত করতে পেরেছিলাম, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এই ঐক্যকে নিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তাই আমরা বলি, দয়া করে কেউ ধৈর্য হারাবেন না।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এখনো যুদ্ধ শেষ হয়নি, রাজনীতি ও সংগ্রাম কখনো শেষ হয় না। রাজনীতি-সংগ্রাম চলতে থাকে। তিনি বলেন, সংস্কার হচ্ছে, সংস্কার চলবে। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই অন্তর্বর্তী সরকারকে। তারা সংস্কারের জন্য কতগুলো কমিটি করেছেন। আমরা প্রত্যাশা করি, সরকার দ্রুত সংস্কার কমিশন থেকে রিপোর্ট নিয়ে জনগণের সামনে তা তুলে ধরবেন এবং দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, একটা কথা আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, সব সংস্কার জনগণের দ্বারা ‘রেটিফাই’ হতে হবে, জনগণকে মেনে নিতে হবে। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কখনোই সংস্কার টেকসই হবে না, এটা মাথায় রাখতে হবে। ওপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে কোনো সংস্কার সফল হয় না। আইয়ুব খান চেষ্টা করেছেন, এরশাদ চেষ্টা করেছেন সেটা সম্ভব হয়নি। সুতরাং এমন কিছু করা যাবে না, যেটা আমাদের দেশের সঙ্গে, মানুষের সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা একটা জটিল সময় পার করছি। অনেক ইস্যু সামনে আসবে। চক্রান্তু কিন্তু শেষ হয়নি। পরাজিত শক্তির মূল লোক চলে গেলেও তাদের কাঠামো রয়ে গেছে। সেখানে এখনো যারা অবস্থান করছেন তারা কাজ করছেন। 
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে এবং যারা আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছেন তারা মিলে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা অনেক আগেই ভেবেছিলাম যে, সংস্কার প্রয়োজন। সেটা ২০১৬ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘ভিশন-২০৩০’ দিয়েছিলেন।

সেখানে তিনি দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, মানুষের অধিকারসহ বিভিন্ন কথা বলেছেন। আমরা অত্যন্ত সচেতন যে, পরিবর্তন বা সংস্কার যুগোপযোগী যদি না হয় তাহলে রাষ্ট্র সঠিকভাবে কাজ করবে না। এই বিষয়গুলো আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে। যদিও আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন যে, অস্থির হওয়ার কিছু নেই, অস্থির হওয়া চলবে না, সবচেয়ে বড় কথা রাষ্ট্রের স্বার্থ আপনার সামনে আনতে হবে।
ফখরুল বলেন, পত্রিকায় দেখলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলছেন যে, ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করে দিয়েছে আওয়ামী লীগের লোকেরা। এজন্য তো তাদের রাষ্ট্রদ্রোহিতায় বিচার হওয়া উচিত, বড় শাস্তি হওয়া উচিত। কারণ তারা রাষ্ট্রকে ধ্বংস করেছে। অর্থনীতিকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে, অর্থনীতি ফোকলা হয়ে গেছে। প্রশাসন এখন পর্যন্ত মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না। কেন? আওয়ামী লীগ প্রশাসনের যে চরিত্র সৃষ্টি করেছে সেটা দূর করা যাচ্ছে না।  

প্রশাসনের মধ্যে একটা ভালো লোক খুঁজে পাওয়া যায় না যে ঘুষ খায় না, স্বজনপ্রীতি করে না, দুর্নীতি করে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। শিক্ষক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রশাসক বেশিরভাগ জায়গাতে দুর্নীতি। ১৫-১৬ বছরের জঞ্জালের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে তিলে তিলে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ দেশটাকে এমনভাবে নষ্ট করেছে যে, রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়।
এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক আবদুল হালিম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনডিপি নেতা কেএম আবু তাহের, জাগপা নেতা খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, গণ দলের নেতা এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের নেতা ফারুক হাসান, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টির নেতা এসএম শাহাদাত, বাংলাদেশ ন্যাপের নেতা এমএন শাওন সাদেকী, ডিএলের নেতা খোকন চন্দ্র দাস, এনপিপি নেতা জহির হাকিম, শরীফ মনির হোসেন, বেলাল হোসেন, ফরিদ উদ্দিন, ব্যারিস্টার ফরিয়া জামান প্রমুখ।

×