রেলওয়ের ট্রেনিং একাডেমির আধুনিকায়নে প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে
রেলের একটি প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটিতে শুধু পরামর্শক খাতেই ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় বড় অংকের ব্যয় পরামর্শক খাতে রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের একাডেমি আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নকশা প্রণয়ন প্রকল্পের আওতায় এ প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে রেলওয়ের দাবি, প্রকল্প বাস্তবায়নে ট্রেনিং ম্যানুয়াল, ট্রেনিং মডিউলের উন্নত সংস্করণ, ডিজিটালাইজেশন, কর্মশালা প্রশিক্ষণ ইউনিট তৈরি, সব অবকাঠামোর আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ডিটেইল ডিজাইন করা ও প্রাক্কলিত ব্যয় প্রস্তুত করতে পরামর্শক নিয়োগ করা হবে। বর্তমান বাজারদর বিশ্লেষণ করে পরামর্শক সেবার ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত পরামর্শক ব্যয় পুনঃপর্যালোচনা করে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা হবে।
এটা আমাদের প্রস্তাব মাত্র। এখনো ফাইনাল বা চূড়ান্ত হয়নি। আমরা প্রকল্পটি পুনরায় সংশোধন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাবো।- বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন সরকার
বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশনে বাংলাদেশ রেলওয়ে একাডেমি আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নকশা প্রণয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাবের ওপর একটি পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা করেছি। সভা শেষে পরিকল্পনা কমিশন কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। সেটার আলোকেই কাজ করা হবে।’
১৫ কোটি টাকার প্রকল্পে ১৪ কোটি টাকা পরামর্শক ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের প্রস্তাব মাত্র। এখনো ফাইনাল বা চূড়ান্ত হয়নি। আমরা প্রকল্পটি পুনরায় সংশোধন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাবো।’
বাংলাদেশ রেলওয়ে জানায়, কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে রেলপথ ও অন্য অবকাঠামো নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। কিন্তু রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমি আধুনিকীকরণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ কারণে এখানে আধুনিক প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না।
আমরা প্রকল্পটি নিয়ে একটা সভা করেছি। এখানে দেখেছি পরামর্শক খাতে বাড়তি ব্যয় চাওয়া হয়েছে, যেটা আমাদের কাছে অযৌক্তিক মনে হয়েছে। রেলওয়ের কাছে একটা ব্যাখ্যা চেয়েছি। তারা কী কারণে বা কেন এত টাকা পরামর্শক খাতে ব্যয় চেয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।- অতিরিক্ত সচিব কবির আহামদ
এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রকল্পটি হাতে নিতে যাচ্ছে। রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চট্টগ্রামের হালিশহরে ১৯৮৪ সালে ৯১ দশমিক ৩৯ একর জমির ওপর এ ট্রেনিং একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরু থেকে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে রেলের জনবল প্রশিক্ষিত করার কাজে ট্রেনিং একাডেমি কাজ করছে।
এই একাডেমিতে বর্তমানে বিদ্যমান প্রশাসনিক ভবন, শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি, প্রশিক্ষণার্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হোস্টেল, মডেল রুম, স্টাফ কোয়ার্টার, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ইত্যাদি অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। প্রশিক্ষণার্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হোস্টেলে সিটের সংখ্যাও কম। মোট কথা কম সরঞ্জামাদি, আধুনিক সুযোগ-সুবিধার অভাব, জনবল ঘাটতি এবং যথাযথ লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমি বর্তমানে অকার্যকর হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বর্তমানে ৩০ বছর মেয়াদি রেলওয়ে মাস্টারপ্ল্যানে ট্রেনিং একাডেমি আধুনিকায়নের বিষয়টি উল্লিখিত আছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।
কিছু ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন
পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পের কিছু ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন করেছে। তার মধ্যে অন্যতম প্রকল্পে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ডাবল কেবিন পিকআপ কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় এ প্রকল্পে যানবাহন কেনা যাবে না। পরামর্শক সেবা খাত ছাড়াও রাজস্ব ও মূলধন খাতের সব ব্যয় পুনঃপর্যালোচনা করে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। প্রকল্পের প্রস্তাবিত পরামর্শক সেবা খাতের পরিমাণ ও ব্যয়সহ রাজস্ব, মূলধন খাতের ব্যয়ও পুনঃপর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে। ডাবল কেবিন পিকআপ কেনার খাতটিও বাদ দিতে হবে।
বাড়তি পরামর্শক ব্যয় প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রেল পরিবহন উইং) কবির আহামদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা প্রকল্পটি নিয়ে একটা সভা করেছি। এখানে দেখেছি পরামর্শক খাতে বাড়তি ব্যয় চাওয়া হয়েছে, যেটা আমাদের কাছে অযৌক্তিক মনে হয়েছে। রেলওয়ের কাছে একটা ব্যাখ্যা চেয়েছি। তারা কী কারণে বা কেন এত টাকা পরামর্শক খাতে ব্যয় চেয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এই ব্যাখ্যা হাতে পাওয়ার পরেই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো। এখানে দেশি-বিদেশি পরামর্শক কতজন সার্বিক বিষয়ে জানতে চেয়েছি।’
ইসরাত