ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১

জামায়াত-শিবির ও ছাত্রদলের মধ্যে দফায় দফায় হামলা, গুলিবিদ্ধসহ আহত অনেক

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

জামায়াত-শিবির ও ছাত্রদলের মধ্যে দফায় দফায় হামলা, গুলিবিদ্ধসহ আহত অনেক

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আমানউল্যাহপুর ইউনিয়নে ছাত্রদল ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে, মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় ইব্রাহিম মাসুম (২৭) নামের এক ছাত্রদল নেতার পায়ে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করা হয়েছে। এতে তিনিসহ অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন।

 

 

 

ইব্রাহিমের অভিযোগ, হামলাকারীরা জামায়াত-শিবিরের কর্মী। তবে, এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন জামায়াত-শিবিরের স্থানীয় নেতারা।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত মহেশপুর ও কাঁচিহাটা সর্দার দিঘির পাড় এলাকায় দফায় দফায় এ পাল্টাপাল্টি হামলা হয়। গুলিবিদ্ধ ইব্রাহিম মাসুম ছাত্রদলের আমানউল্যাহপুর ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তাঁকে ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

 

আমানউল্যাহপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম মাসুম অভিযোগ করে বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুরের দিকে মহেশপুরে জামায়াতের সমর্থক মাদকাসক্ত মো. সোহেলকে (৪০) হাতেনাতে আটক করে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। পরে তাকে থানা-পুলিশের কাছে দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় কাঁচিহাটা দিঘির পাড় এলাকায় জামায়াত-শিবিরি কর্মীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে সোহেলকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।’

ইব্রাহিম মাসুম জানান, এ ঘটনার পর সন্ধ্যায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা সর্দার দিঘির পাড়ে বসে চা খাওয়া অবস্থায় প্রথমে সোহেল ও তাঁর আত্মীয়-স্বজন এবং পরে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা অতর্কিতে এসে তাঁদের কিল-ঘুসি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে পাশের একটি ফার্মেসিতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। সেখানেও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জামায়াত-শিবির কর্মীরা হামলা চালান এবং তারা ইব্রাহিম মাসুমের পায়ের কাছে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে বলে অভিযোগ করেন ইব্রাহিম মাসুম।

 

ইব্রাহিম মাসুম বলেন, ‘সোহেল এক সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করত। গত ৫ আগস্টের পর তিনি স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের লোকজনের সঙ্গে চলাফেরা করে। যার কারণে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তাঁর পক্ষ হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অতর্কিত আমিসহ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়।’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ইসলামী ছাত্র শিবিরের নোয়াখালী (উত্তর) সেক্রেটারি দাউদ ইসলাম বলেন, ‘আমানউল্লাহপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতা মাসুম ইব্রাহিমসহ তার সমর্থকেরা কাঁচিহাটা ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সভাপতি সোহেল (৪০) নামে এক লোককে নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ এবং বহন করার অভিযোগে তুলে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এর প্রেক্ষিতে এলাকায় থমথম অবস্থা বিরাজ করে। একই দিন সন্ধ্যায় কাচিহাটার সর্দার দিঘীর পাড়ে সোহেল (৪০) এবং মাসুমের(২৭) সমর্থকদের মাঝে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ঘটনা  হাতাহাতিতে রূপ নিলে স্থানীয় লোকজন তা থামানোর চেষ্টা করে। এ সময় রাশেদ নামে স্থানীয় এক যুবক আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলে অজ্ঞান হয়ে পড়েন।’ 

 

সেক্রেটারি দাউদ ইসলাম আরও বলেন, ‘এ সময় স্থানীয়রা রাশেদকে (২৪) হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার সময় গুলির শব্দ শুনতে পায়। এ সময় ছাত্রদল নেতা মাসুম ইব্রাহিম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। দুর্বৃত্তরা মুখোশ পরা অবস্থায় থাকায় স্থানীয়রা তাদের চিনতে পারেনি। এ ঘটনার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিবিরকে জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে শিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই।’ 

এ বিষয়ে উপজেলা জামায়াতের আমির আবু জাহের বলেন, ‘ছাত্রদলের কর্মীরা ৫ আগস্টের পর থেকে আমানউল্যাহপুরে আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে মারধর করে। মঙ্গলবার বিনা কারণে মারধর করা হয় জামায়াতের সমর্থক মো. সোহেলকে ও শিবির কর্মী মো. রাশেদকে। হামলায় রাশেদ অচেতন হয়ে যান। আমাদের কর্মীরা যখন রাশেদের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত তখন তৃতীয় কোনো একটি পক্ষ ছাত্রদলের নেতা মাসুমের ওপর হামলা করে। এর সাথে জামায়ত-শিবিরের কোনো সম্পৃক্তা নেই।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান বলেন, ‘কাঁচিহাটা বাজারে দুর্বৃত্তদের হামলায় ছাত্রদলের একজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 

 

 

 

 

 

ফুয়াদ

×