ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ কার্তিক ১৪৩১

আলোচনা সভায় আমীর খসরু

জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে  

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:২৩, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে  

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সোমবার বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় অতিথিরা

বাছাইকৃত সংস্কার নয়, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কার করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, সিলেকটিভ (বাছাইকৃত) নয়, জাতীয় স্বার্থে সবাইকে ঐকমত্যে বিশ্বাসী হতে হবে। প্রত্যেকটি বিষয়ে ঐকমত্য সৃষ্টি করতে হবে। বিশেষ করে নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে কারও দ্বিমত নেই।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৮০ দিন : গতিমুখ ও চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আয়োজন করে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।
আমীর খসরু বলেন, বিগত ১৬ বছরের বহু লোক জীবন দিয়েছেন, চাকরি হারিয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকারিভাবে তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদীদের দোসররা ফিরে আসার জন্য ঘোরাঘুরি করছে। গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বিতাড়িত হয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিক মনোজগতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। সবার মধ্যে আশা ও আকাক্সক্ষা জেগেছে। একটা ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে। জাতীয় ঐক্যর মাধ্যমে সবাই সরকারকে সমর্থন দিয়েছে।
আমীর খসরু আরও বলেন, প্রায় ৬ বছর আগে ‘ভিশন ২০৩০’ তে খালেদা জিয়া সংস্কারের কথা বলেছেন। বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ৩১ দফা দিয়েছে। সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। আজকের প্রেক্ষাপটে কি মৌলিক সংস্কার করব, কীভাবে করব সেই প্রশ্ন আসে। জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সেগুলো সংস্কার করতে পারে। যে সংস্কারে জনগণের ঐকমত্য হবে না, সব রাজনৈতিক দল একমত হবে না সেগুলো পরবর্তী সরকারের জন্য রেখে দিতে হবে।
তিনি বলেন, গত ১৬ বছর জনগণ ভোট দিতে পারেনি বলেই শেখ হাসিনার মতো দানবীয় শক্তির উত্থান হয়েছে। জনগণ ভোট দিতে চায়। ৩৫ বছরের নিচে কেউ এখনো ভোট দিতে পারেননি। সংস্কারের জন্য ১০টা কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে নতুন নতুন দাবি উপস্থাপন করছে। তাদের দাবির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার বা কমিশনের দাবি এক কি না, তা আমরা জানি না। এগুলো পরিষ্কার করতে হবে। কারণ এই দাবিগুলো সংস্কারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। কোনো সরকার যদি বলে সংস্কারকাজ শেষ করে নির্বাচন দেবেন। তাহলে সেই সরকার সংস্কারকাজ বোঝে না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা সংস্কার করা দরকার তা করে নির্বাচন দেওয়া। এজন্য নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারকাজে জোর দেওয়া উচিত। এখন পর্যন্ত প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সংস্কার করতে পারেনি এ সরকার।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় সদস্য আকবর খানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রমুখ।
রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে এত ব্যস্ত কেন- রিজভী ॥ অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আপনারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল করেছেন, সেখানে অনেকের বিচার হবে। কিন্তু আমরা যদি কাজের বদলে অকাজে বেশি লিপ্ত হয়ে পড়ি; রাজনৈতিক শূন্যতা, সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি করিÑ তাহলে তো জনগণ কথা বলা শুরু করবে।’
শুধু জটিলতার পর জটিলতা তৈরি করছেন কেনÑ এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার দোসর তো আরও অনেকেই আছে আপনাদের মধ্যে, কই তাদের বিষয়ে তো আপনারা কিছু বলছেন না। শুধু রাষ্ট্রপতিকে নিয়েই আপনারা ব্যস্ত আছেন।’
সোমবার রাজধানীর আজিমপুরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও চিকিৎসা বিষয়ক লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আলী ইমাম মজুমদার এক-এগারোতেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন, শেখ হাসিনার আমলেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তাকে আপনারা উপদেষ্টা বানিয়েছেন। এমন তো অনেকেই রয়েছেন, এসব বিষয়ে আপনারা তো কিছু বলেন না? শেখ হাসিনার রক্তাক্ত দুঃশাসন যারা প্রলম্বিত করেছেন, টুঁ শব্দ যারা করেননি। যারা নিঃস্বার্থভাবে শেখ হাসিনার তাঁবেদারি করেছেন, তারা তো এখনো বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আজ রাষ্ট্রপতি থাকল কী থাকল না, এটা নিয়ে আমরা দেশে কেন জটিলতা তৈরি করছি? কেন আমরা দেশে সংকট ডেকে আনব। এটা মুখ্য বিষয় নয়। আমরা শেখ হাসিনাকে দেশ থেকে তাড়িয়েছি, তার দোসরদেরও আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার করা আমাদের দায়িত্ব।’
গণমাধ্যমের বিষয়ে রিজভী বলেন, বিভিন্ন টেলিভিশনে আমরা যেভাবে শেখ হাসিনার সুনাম করতে দেখেছি, সেখানে বড় বড় সাংবাদিকরা ছিলেন, মিডিয়ার অনেক নামকরা লোক ছিলেন, কই তাদের বিষয়ে তো কিছু বলছেন না? শুধু রাষ্ট্রপতিকে নিয়েই আপনারা ব্যস্ত আছেন।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের যাত্রাপথে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের অবদান এ দেশের মানুষ ইতিহাসে লিখবে। একটা সোনালি অধ্যায় রচিত হবে। কিন্তু আবেগের বশবর্তী হয়ে আমাদের এমন কিছু করা যাবে না যাতে সংবিধানবহির্ভূত কোনো কিছু হওয়ার শঙ্কা থাকে।’
লিফলেট বিতরণকালে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন প্রমুখ।
নেপালের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ ॥ বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি। সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়। ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে ঢাকা নিযুক্ত নেপালের ডেপুটি রাষ্ট্রদূত ললিতা সিলওয়ালও উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিএনপি নেতাদের মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নেপালে সঙ্গে বাংলাদেশের বহুদিনের সম্পর্ক। নানা ধরনের সহযোগিতা ছিল। কিন্তু যে সম্ভাবনা ছিল তা পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। সার্ককে সঠিক জায়গায় নিয়ে যেতে পারিনি। সার্ককে শক্তিশালী করে সম্ভাবনাকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগানোর বিষয়ে একমত হয়েছি। অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, নেপালের হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ারের বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে। গত ১৫ বছরের বিদ্যুৎ সেক্টরের কলঙ্কিত অধ্যায়কে দূর করে আঞ্চলিক পুল ব্যবহার করে বা সরাসরি এনে কাজে লাগাতে পারি।
খসরু বলেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে একত্রে কাজ কাজ করতে বৈঠকে আলোচনা করা হয়। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় থাকতে হবে। আইনের শাসন, জীবনের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বজায় রেখে সম্পর্ক এগোবে।
এ ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নে একত্রে কাজ করার জন্য বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান আমীর খসরু।
 

×