ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১

ছাত্রলীগের পদ মানেই আলাদিনের প্রদীপ

প্রকাশিত: ০১:০৬, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

ছাত্রলীগের পদ মানেই আলাদিনের প্রদীপ

আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতারা।

 

একই সঙ্গে তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। 

 

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় ছাত্র রাজনীতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রদল সেক্রেটারি নাছির উদ্দীন নাছির। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ একটি খুনি সংগঠন। খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতি থেকে শুরু করে গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন তারা। সব জঙ্গি সংগঠন মিলে যত মানুষ খুন করেছে, ছাত্রলীগ এককভাবে এর চেয়ে বেশি খুন করেছে। ২০০৯ সাল থেকে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী তাণ্ডবের বিরুদ্ধে ছাত্রদল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।

 

এতে ছাত্রলীগ এবং সরকারি বাহিনীর হাতে ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী গুমের শিকার এবং শহিদ হয়েছেন। ছাত্রলীগ ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছিল। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে রেহাই পেতে যখন বিভিন্ন মহল থেকে বুয়েটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠেছিল, তখন ছাত্রদল শুধু সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করেছিল।

ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে ছাত্র রাজনীতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। গণতন্ত্রকামী সব ছাত্র সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পরিবেশে সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। শুধু ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করা চূড়ান্ত সমাধান নয়। ছাত্রলীগের হয়ে যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছে তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

ঢাবি শিবির সভাপতি বলেন, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম বৃহৎ একটি অর্জন। প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তা একটি যৌক্তিক ও সাহসী সিদ্ধান্ত। আমরা দেখে আসছি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী রেজিমে ছাত্রলীগ ও তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম কী রকম ভয়ানক রূপ ধারণ করেছিল। খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ক্যাম্পাস দখল, ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতনসহ অপরাধের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে তাদের বিচরণ ছিল না।

তাছাড়া আমাদের চব্বিশের বিপ্লবে শত-সহস্র ভাইবোনকে পৈশাচিকভাবে রক্তাক্ত করে শিশুহত্যা ও গণহত্যা চালিয়েছে। তাদের এহেন অপরাধ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না বরং তার ধারাবাহিকতার মাত্রা দিন দিন আরও বর্বরোচিত হচ্ছিল। এখনো তারা বিভিন্নভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করতে পাঁয়তারা করছে। ছাত্রলীগ কেন নিষিদ্ধ করা হলো তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের জরুরিও দেখি না।

পুরো দেশের আকাঙ্ক্ষারই এখানে বাস্তবায়ন ঘটেছে। শুধু নিষিদ্ধ নয়, যারা খুন, ধর্ষণ, গণহত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল ও মৌন সমর্থন দিয়ে গেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। পরে যেন দেশকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে না পারে সেদিকেই ছাত্র-জনতা ও সরকারের সচেতন দৃষ্টি প্রত্যাশিত।

ছাত্র অধিকার সভাপতি বলেন, সারা দেশের অসংখ্য শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ কর্তৃক অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আমি নিজেও বহুবার নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমার কাছে মনে হচ্ছে, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায় শিক্ষার্থীরা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে এবং তাদের মধ্যে একটা প্রশান্তির আবহ বয়ে যাচ্ছে। এই নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়েই সব কাজ শেষ হয়ে যায়নি। বরং ছাত্রলীগের প্রত্যেক সন্ত্রাসীকেই তাদের কৃতকর্মের ফলে বিচারের আওতায় আনা উচিত। তাহলে সর্বস্তরের জনগণ স্বস্তি অনুভব করবে। কারণ তারা এখনো দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতেও তারা বড় ধরনের বিশৃঙ্খলার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।

ইউনিয়ন সেক্রেটারি বলেন, স্বৈরাচারের সন্ত্রাসী বাহিনী হিসাবে গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যেসব দমন-পীড়ন ও অপকর্ম করেছে, সেই প্রতিটি ঘটনার বিচার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সমাজে এটা প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ রয়েছে যে ‘শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি’র কথা বলে ক্ষমতার প্রতি মূর্খ আনুগত্য, সন্ত্রাস ও পশ্চাৎপদতার দৃষ্টান্ত স্থাপনকারীরা কোনোভাবেই শাস্তি এড়াতে পারে না।

তাছাড়া দেশের সাধারণ মানুষ মনে করছেন,ছাত্রলীগের পদ মানেই  ছিলো আলাদিনের প্রদীপ হাতে পাওয়ার মত।ক্ষমতা দিয়ে যখন যা খুশি তাই করতে পারতেন।

 

ফুয়াদ

×