ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১

ফেরারির মতো ছুটছি, সামনে কোনো ভবিষ্যৎ নেই : ছাত্রলীগ

প্রকাশিত: ২১:০০, ২৭ অক্টোবর ২০২৪

ফেরারির মতো ছুটছি, সামনে কোনো ভবিষ্যৎ নেই : ছাত্রলীগ

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গত বুধবার (২৩ অক্টোবর) আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ওই সময় ছাত্রলীগকে একটি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে শক্তিশালী অবস্থানে থাকা এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বেশ সংকটে পড়েছেন। 

 

 

 

 

এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। ‘বাংলাদেশ’স নিউ আউটকাস্ট: স্টুডেন্টস ফ্রম এক্স-পিএম হাসিনা’স পার্টি নাও হাইডিং’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি লেখেন মেহেদি হাসান মারুফ। প্রতিবেদনে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরের কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে আলাপের কথা উল্লেখ করা হয়। 

 

এর মধ্যে প্রথমেই বলা হয় ২৪ বছর বয়সী ফাহমির (ছদ্মনাম) কথা। ফাহমি ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন। গত আগস্টের শুরুতে তিনি আত্মগোপনে যান। ফলিত রসায়ন বিভাগের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ফাহমি আল জাজিরাকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমি এখানে বেশ দাপট নিয়ে কথা বলতে পারতাম। এখন ফেরারির মতো ছুটছি, সামনে কোনো ভবিষ্যৎ নেই।’

 

ফাহমির গল্পেই তাঁর মতো হাজারো শিক্ষার্থীর বর্তমান অবস্থার প্রতিফলন আছে। এসব শিক্ষার্থী আগে আওয়ামী লীগের এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁরা একসময় বাংলাদেশের ক্যাম্পাসগুলোতে শক্তিশালী অবস্থানে ছিলেন। কিন্তু রাতারাতি তাঁদের অবস্থান ধসে গেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ১৫ বছরে সহিংসতা, হয়রানি ও নিজেদের স্বার্থে জনসম্পদ ব্যবহারসহ গুরুতর অসদাচরণের ইতিহাস রয়েছে ছাত্রলীগের।

ক্যাম্পাসের সাবেক ক্ষমতাশালী, রাজপথে আওয়ামী লীগের পেশিশক্তি হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগের এসব ছাত্র এখন উচ্ছেদ, প্রতিশোধ, এমনকি কারাবাসের মুখোমুখি। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণবিদ্রোহ দমনচেষ্টা এবং তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে কথিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য তাঁদের আজ এই দশা।

আল জাজিরাকে ফাহমি বলেন, বিক্ষোভের সময় জনগণের বিরুদ্ধে সরকারের প্রাণঘাতী দমন‑পীড়নে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেননি। তিনি বলেন, ‘আমার বোনেরা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল। আমিও মনে করতাম, দাবি সঠিক। কিন্তু আমি দলীয় বাধ্যবাধকতায় আটকা পড়েছিলাম।’

 

সরকারি চাকরিতে বিতর্কিত কোটাব্যবস্থা বাতিলের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির জেরে গত জুলাইয়ে প্রাণঘাতী এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল। অচিরেই বিক্ষোভ বাড়তে বাড়তে হাসিনার ‘স্বৈরাচারী’ শাসন উৎখাতের ডাকে রূপান্তরিত হয়। সরকারের প্রতিক্রিয়া ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তাক্ত অধ্যায়গুলোর মধ্যে একটি। কারণ, নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের মারধর করে। তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলি ছোড়ে। তিন সপ্তাহে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। হাজারো মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ৫ আগস্ট প্রতিবাদী বাংলাদেশিরা শেখ হাসিনার বাসভবন, সংসদ ভবনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলোয় হামলা চালান। ৭৭ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। হাসিনার পতনের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য সহিংসতার ইতি হয়নি। রাষ্ট্রীয় নৃশংসতার সাবেক অপরাধীরা নতুন লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। ছাত্রসহ আওয়ামী লীগের শত শত সদস্য ও রাজনীতিবিদেরা হামলা বা হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। অনেকে আত্মগোপনে চলে যান। পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে আটক হন কেউ কেউ।

 

ফাহমি বলেন, হাসিনাবিরোধী বিক্ষোভকারীরা তাঁর পরিবারের বাড়ি ও বরফকলের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন দেন। তিনি বলেন, ‘আমি কোথায় আছি, তা না জানালে তাঁরা আমার ছোট ভাইকে গায়েব করে দেবে বলে হুমকি দিয়েছে। ছোট ভাই যে মাদ্রাসায় পড়ে, সেখানে সে নিপীড়নের শিকার হয়েছে।’

ছাত্রলীগে সম্পৃক্ততার কথা ফাহমি স্বীকার করে বলেন, ‘আমি ভালো ছাত্র ছিলাম। রাজনীতি নিয়ে আমি খুব কমই চিন্তা করতাম। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হল রাজনীতি এড়ানো যায় না। যোগ না দিলে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়।’

ফুয়াদ

×