ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১

আওয়ামী লীগের ওপর যেন একই জুলুম না হয়: জামায়াত আমির

প্রকাশিত: ১৭:২৫, ২৭ অক্টোবর ২০২৪; আপডেট: ১৭:২৮, ২৭ অক্টোবর ২০২৪

আওয়ামী লীগের ওপর যেন একই জুলুম না হয়: জামায়াত আমির

জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সবাইকে জানতে দিতে হবে ফ্যাসিবাদীরা এ দেশে কী করেছিল আর কারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। যারা লড়াই করেছেন, তারা কেউ ব্যক্তিস্বার্থের জন্য করেননি, দেশের জন্য করেছেন। জাতির দায়িত্ব তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো।এ ইতিহাস সবাইকে জানাতে হবে। জুলাই-আগস্টে প্রতিটি শহীদ পরিবারের অন্তত একজন যেন সরকারি চাকরি পান, সে ব্যবস্থা করতে হবে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের থাবায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের সবার ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভৃক্ত করতে হবে।

রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত শহীদ পরিবারের গর্বিত সদস্যদের সঙ্গে মত বিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভার পর প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠান হয়।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, একটা সন্তানকে নিয়ে একটা পরিবার স্বপ্ন দেখে। তাদের স্বপ্ন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে এই ফ্যাসিবাদ। তাই শহীদ পরিবারের কমপক্ষে একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। তারা যদি সুযোগ পায়, তারা এ ঘটনা লালন করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। আর চিকিৎসার অভাবে যারা হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন, তাদের পাশে রাষ্ট্রকে দাঁড়াতে হবে।

এ সময় ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোকে শহীদদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান জামায়াতে ইসলামীর আমির। আওয়ামী লীগ নেতাদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তারা যতগুলো মানুষ খুন করেছে, সব কয়টির বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের মতো যেন অবিচার তাদের সঙ্গে না হয়। তারা যে যা অপরাধ করেছে, তাদের সে অনুযায়ী শাস্তি পেতে হবে। যারা দেশকে ভালোবাসে, তারা দেশ থেকে পালায় না। যারা খুনি, যারা অপরাধ-দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়েছে, তারাই দেশ থেকে পালিয়েছে। আমরা প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করি। এ দেশে ন্যায়বিচা জামায়াতের আমির আরও বলেন, আমরা প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। এ দেশে ন্যায়বিচার কায়েম হলে ভবিষ্যতেও কোনো দল স্বৈরশাসক হওয়ার সাহস করবে না। আমাদের জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মূলত ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ফ্যাসিবাদের দোসর ও মাস্টার মাইন্ডদের দানবীয় হত্যাযজ্ঞে বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল। সেদিন দেশপ্রেমী মানুষকে প্রকাশ্য রাজপথে পিটিয়ে হত্যার পর লাশের ওপর দানবীয় নৃত্য করা হয়েছিল। তাদের এই নারকীয়তায় গোটা বিশ্ব বিবেকই স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল। এরা মানুষ ছিল না বরং এরা ছিল বর্বর পশু। অন্ধ ক্ষমতালিপ্সা থেকেই তারা এ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হয়েছিল।এই নির্মমতার ধারাবাহিকতা ২০২৪ সালের ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। মূলত, ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি; ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আগস্ট বিপ্লবের শহীদরা জাতীয় বীর। দেশ ও জাতির জন্য তাদের এই আত্মত্যাগের কথা কোনোভাবেই মুছে ফেলা যাবে না। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের জন্য যথাযথ সম্মানের ব্যবস্থা করতে হবে। ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ৫ আগস্টের বিপ্লব পর্যন্ত সব শহীদদের অবদানের কথা জাতীয় পাঠ্যপুস্তকের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করতে করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে তাদের অবদান ও বীরত্বগাঁথা। দেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। তাদের পরিবারকেও করতে হবে যথাযথা মূল্যায়ন। প্রতিটি শহীদ পরিবারের কমপক্ষে ১ জনের জন্য সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে রাষ্ট্রকে শহীদ পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। 

সব ক্ষেত্রেই তাদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাহলে তারা আগামী দিনে দেশ ও জাতির জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকবে।আমরা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আগস্ট বিপ্লবের পর শহীদ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমরা তাদের প্রতি দয়া করিনি বরং তারা দয়া করে আমাদেরকে সময় দিয়েছেন। বিপ্লবীদের অনেকেই পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব বরণ করেছেন। ফ্যাসিবাদীরা হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য চালিয়ে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়ত করার অপচেষ্টা করেছে। কিন্তু ক্ষমতা কখনো চিরস্থায়ী নয় বরং তা আল্লাহর হাতে। আল্লাহ জালিমদের অবকাশ দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। সে ধারাবাহিকতায় আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের অপমানজনকভাবে পতন হয়েছে। এদের বিচার আল্লাহ তায়ালা আখিরাতে করবেন। দুনিয়াতেও তাদের ছেড়ে দেওয়া যাবে না।

ফ্যাসিবাদীরাই বলতো কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় উলেখ করে তিনি এসব দোসরদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানান। অন্যথায় দেশ ও জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে না বলে মন্তব্য করেন।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংগঠনের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ অব্দুলাহ মোহাম্মদ তাহের, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল প্রমুখ। সভায় অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, শহীদরা মরে না বরং তারা সবসময় জীবিত। আমাদের আগস্ট শহীদদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তারা দুনিয়া ও আখিরাতে পুরস্কৃত হবে।

আজাদ//ইসরাত

×