ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ চায় পুলিশ

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ চায় পুলিশ

গণ–আন্দোলন দমাতে পুলিশকে এভাবেই ব্যবহার করেছে বিগত সরকার।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পুলিশের পদোন্নতি, পদায়ন, বদলি, নিয়োগ, পুরস্কার ও শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে অবৈধ অর্থ লেনদেন হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। ফলে পুলিশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও পেশাদারত্বের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এমন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধে সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা প্রণয়ন ও বাহিনী পরিচালনায় স্বতন্ত্র কমিশন চান পুলিশ সদস্যরা।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বাহিনীটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে এই আলোচনাগুলো উঠে এসেছে। এতে কর্মকর্তারা বলেছেন, পুলিশকে সেবামুখী করতে পেশাগত মূল্যায়নের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার পাশাপাশি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও পদোন্নতি-পদায়নে লেনদেন বন্ধ করতে হবে। সংস্কারের আগে সমস্যার মূলে যেতে হবে এবং সমাধান করতে হবে। পুলিশ কেন মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, সেই উত্তর খুঁজতে হবে। এ কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারলে পুলিশকে সত্যিকারের জনগণের বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা যাবে।পুলিশ সদর দপ্তরে ১৫ অক্টোবর সংস্কার কমিশনের সঙ্গে ওই বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে আইজিপি (পুলিশের মহাপরিদর্শক) ময়নুল ইসলামসহ সদর দপ্তর ও বিভিন্ন ইউনিটের অতিরিক্ত আইজিপি থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ৫০–৬০ জন কর্মকর্তা অংশ নেন।

সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেনের নেতৃত্বে কমিশনের আটজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। কমিশনের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি চূড়ান্ত না হওয়ায় বৈঠকে ছাত্র প্রতিনিধি ছিলেন না।

বৈঠকের কার্যবিবরণী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে আলোচনার বিস্তারিত জানা যায়। বৈঠকের শুরুতে পুলিশের পক্ষ থেকে বাহিনীর বর্তমান অবস্থা ও সংস্কারের নানা দিক নিয়ে একটি ‘পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন’ দেওয়া হয়। এরপর আলোচনায় অংশ নেন কর্মকর্তারা।

আলোচনার এক পর্যায়ে কমিশনের একজন সদস্য সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) বিষয়ে কথা বলেন। এই বোর্ড পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) থেকে ওপরের পদগুলোতে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নেয়।

এই বোর্ডে আইজিপি সদস্য না হওয়ায় পদোন্নতিতে সব সময় কর্মকর্তাদের সঠিক মূল্যায়ন হয় না বলে বৈঠকে কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন। এ সময় বিগত সরকারের সময় পুলিশের পদোন্নতি, নিয়োগ, বদলিতে রাজনৈতিক বিবেচনাসহ নানা অনিয়ম ও অবৈধ লেনদেন নিয়ে কথা বলেন কর্মকর্তারা। তাঁরা অভিযোগ করেন, বিগত সরকারের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটি সিন্ডিকেট দিয়ে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পদোন্নতি, বদলি, নিয়োগ ও পদায়ন নিয়ন্ত্রণ করতেন।

এই সিন্ডিকেটে ছিলেন জননিরাপত্তা বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব, চারজন উপসচিব ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে কাজ করা সাবেক এক অতিরিক্ত সচিব। বদলি–পদোন্নতিতে এমন সিন্ডিকেটের কারণে পুলিশে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নষ্ট হয়েছে। অনেক কর্মকর্তা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে বাহিনীতে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন। তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশও মানতেন না। এমন প্রভাবশালীদের অনেকে টাকার বিনিময়ে উপপরিদর্শক ও কনস্টেবল নিয়োগে জড়িত ছিলেন।

রিয়াদ

×