ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১

রাজবাড়ীতে ধরছে প্রকাশ্যে

প্রতিদিন হাজার মণ মা ইলিশ শিকার

​​​​​​​নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজবাড়ী

প্রকাশিত: ০০:২৬, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

প্রতিদিন হাজার মণ  মা ইলিশ শিকার

.

জেলার পদ্মা নদীতে প্রকাশ্যে মা ইলিশ শিকার করছে সহস্রাধিক জেলে। জেলের জালে প্রতিদিন ধরা পড়ছে প্রায় এক হাজার মণ মা ইলিশ। সব মা ইলিশ বিকিকিনি হচ্ছে প্রকাশ্যে। অদৃশ্য কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে নিরব। মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন জনবল সংকট।

পদ্মা নদীতে ঘুরে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ফরিদপুর জেলার প্রায় সহস্রাধিক জেলে পদ্মা যমুনা নদীতে অবাধে প্রকাশ্যে মা ইলিশ শিকার করছে। এতে প্রায় প্রতিদিন এক হাজার মণ মা ইলিশ ধরা পড়ছে। অবৈধভাবে জেলেরা যে মা ইলিশ শিকার করছে সেগুলো প্রকাশ্যে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। আবার বিভিন্নভাবে সংরক্ষণ করে রাখছে এবং অন্য জেলার জেলেরা মা ইলিশ পাচার করছে। 

জেলার পাংশা উপজেলার সীমান্ত থেকে শুরু করে কালুখালী, রাজবাড়ী সদর গোয়ালন্দ উপজেলার সীমান্ত পর্যন্ত ৫৭ কিলোমিটার এলাকায় পদ্মা নদীর পার দিয়ে মা ইলিশ এর মোবাইল বাজার বসছে সকাল বিকেলে। বিভিন্ন এলাকার নারী-পুরুষ ক্রেতারা এসে স্বল্প মূল্যে এই মা ইলিশগুলো ক্রয় করছে। যে সকল মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রত্যেকটি মাছের পেটে ডিম রয়েছে। ডিম ছাড়ার পূর্বে মা ইলিশ ধরা পড়ছে জেলের জালে। এতে ভবিষ্যতে নদীতে ইলিশ মাছ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।

এদিকে নদীতে অবৈধভাবে মাছ ধরার সময় জেলের জালে অসংখ্য পাঙ্গাশ মাছও ধরা পড়ছে। বড় বড় এই পাঙ্গাশ মাছগুলো নির্ধারিত মাছ বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ব্যাপারে জেলেদের কাছে জানতে চাইলে অনেকে বলেন, ইলিশ মাছ ধরা নিষেধ, যে কারণে বাজারে আমরা ইলিশ মাছ বিক্রি করছি না। তবে অন্য যে বড় মাছ যেমন পাঙ্গাশ, রুই, নিঠাসহ বিভিন্ন প্রকার মাছ নির্ধারিত বাজারে বিক্রি করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

 জেলেরা আরও বলেন, আমরা দৈনিক আয় করে সংসার চালিয়ে থাকি। মাছ না ধরলে আমরা পরিবারের লোকজন নিয়ে কি খাব। তারা বলেন, জেলার ১৪ হাজারের অধিক নিবন্ধনকৃত জেলে রয়েছে। সরকারি ২৫ কেজি চাল পেয়েছে মাত্র হাজার জন। বাকি জেলেরা কি খাবে। বাধ্য হয়ে আমরা সময় নদীতে মাছ ধরতে এসেছি।

শামীম রেজা নামের এক ব্যক্তি বলেন, যে পরিমাণ জেলে নদীতে মা ইলিশ শিকার করছে। দেখে মনে হচ্ছে স্বাভাবিক সময়ে এত জেলে নদীতে মাছ শিকার করে না। মনে হচ্ছে নদীতে প্রকাশ্যে হরিলুট চলছে। এভাবে চললে ২২ দিন বন্ধ রাখার কোনো সফলতা পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, শুধু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নয়, দেশের সকলের দায়িত্ব এই সময়টা যেন কেউ নদীতে মাছ শিকার না করে।

নদী পারের বসতিরা বলেন, সকল মাছ বাজারে প্রতিদিন শহর থেকে অনেক নারী-পুরুষ ক্রেতারা আসেন। অল্প মূল্যে মাছ ক্রয় করার নেশায় ছুটে আসে শতশত মানুষ। অনেকে মোবাইল নাম্বার দিয়ে যান চাহিদা মত মাছ পাওয়ার আশায়।

তবে জেলার নিবন্ধনকৃত জেলেরা বলছেন, আইন মেনে আমরা ২২ দিন নদীতে যাচ্ছি না। তাহলে নদীতে এত জেলে আসল কোথায় থেকে। অভিযোগ করে সকল জেলে বলেন, মাছ ধরা বন্ধ করতে না পারলে আমাদের কেন নিষেধ করলেন। তারা বলেন, আমরা সারাবছর যে টাকা আয় করব। অসাধু মৌসুমি জেলেরা মাত্র ২২ দিনে এর চেয়ে বেশি টাকা আয় করবে অবৈধভাবে মাছ শিকার করে। 

জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ জনবল না থাকায় সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে রাজবাড়ী জেলার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মৎস্য অফিসার মোস্তফা-আল-রাজীব বলেন, জেলেদের ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। এর পরও যদি কেউ নদীতে গিয়ে মাছ শিকার করে তাকে নিবন্ধন বাতিল করা হবে এবং সরকারি সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার জন্য সুপারিশ করা হবে। উল্লেখ্য, টানা ২২ দিন বন্ধ থাকার পর নভেম্বর ২৪ দিবাগত রাত ১২টা থেকে পুনরায় জেলেরা নদীতে গিয়ে ইলিশ মাছসহ বিভিন্ন প্রকার মাছ শিকার করতে পারবে।

×