ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

হয়রানি বন্ধে সরকারের সহযোগিতা চায় পবিস কর্মীরা

পল্লী বিদ্যুতের কাঠামো পর্যালোচনায় কমিটি গঠন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫১, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

পল্লী বিদ্যুতের কাঠামো পর্যালোচনায় কমিটি গঠন

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পিবিএস) ভূমিকা এবং কাঠামো পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারকে সভাপতি করে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ বিভাগের এক অফিস আদেশের মাধ্যমে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে গ্রামাঞ্চলসহ সারাদেশে প্রায় শতভাগ বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এ প্রেক্ষিতে তাদের কাঠামো পর্যালোচনায় এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টের অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, বুয়েটের ইইই বিভাগের অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুব রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করবেন বলে জানায় বিদ্যুৎ বিভাগ।
কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে বিআরইবি এবং পিবিএসের ভিত্তি দলিলগুলো পর্যালোচনা, বিআরইবি এবং পিবিএসের সাংগঠনিক কাঠামো পর্যালোচনা, বিআরইবি এবং পিবিএস (পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি) সব স্তরের কর্মীদের প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সমিতির প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া এবং বিআরইবি এবং পিবিএসের প্রাসঙ্গিক নথি ও ফাইল পর্যালোচনা করা।
কমিটির অনুরোধে বিআরইবি এবং পিবিএস তাদের সব নথি সরবরাহ করবে। পর্যালোচনা ও সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে কমিটি একটি প্রতিযোগিতামূলক, প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ, আর্থিকভাবে টেকসই এবং দক্ষ পরিষেবা  দিতে সক্ষম গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন খাতের জন্য উপযুক্ত কাঠামো সুপারিশ করবে। কমিটি প্রয়োজনে যেকোনো সদস্যকে কো-অপ্ট করতে পারবে। হয়রানি বন্ধে সরকারের সহযোগিতা চায় পবিস কর্মীরা ॥

নিয়ন্ত্রক সংস্থা আরইবির অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ, অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন ও অনিয়মিত কর্মীদের নিয়মিত করার দাবিতে দীর্ঘদিন থেকেই আন্দোলন করে আসছে সারাদেশের ৮০টি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ কর্মকর্তা কর্মচারী। তবে বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধে সকল প্রকার আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে ফিরে গেছেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। আন্দোলন প্রত্যাহার করলেও আরইবি কর্তৃক সমিতির কর্মকর্তা/কর্মচারীদের একের পর এক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ তাদের।
বৃহস্পতিবার বৈষম্যহীন পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে সাংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বর্তমানে কোনো আন্দোলন চলমান না থাকা সত্ত্বেও আরইবি প্রায় প্রতিদিনই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিহিংসামূলক স্ট্যান্ড রিলিজ, বদলি ও সংযুক্তি করছে, যা সমিতিগুলোতে নতুন করে অসন্তোষ তৈরি করছে। বিষয়টিকে আরইবির উস্কানিমূলক চেষ্টা মনে করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। 
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৃহস্পতিবারও ৭ জনকে স্ট্যান্ড রিলিজপূর্বক সংযুক্ত করা হয় এবং বুধবার রাতে এক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে চলতি সপ্তাহেই মোট ৬৩ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামাসহ ১৭২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এবং ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  যে কারণে সারাদেশে সবগুলো সমিতিতে  কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভেতরে ভেতরে সবাইকে সংক্ষুব্ধ করে তুলছে। 
বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা কর্মচারীরা বলেন, উন্নত গ্রাহক সেবা ও  নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে আরইবি ও পিবিএস সংস্কার সময়ের দাবি। ইতোপূর্বে সরকারের পক্ষ থেকে দাবির যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে কমিটি গঠন ও একাধিক মিটিংও হয়েছে।  বর্তমানেও সেসব কমিটি দাবির বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করছে। 
কিন্তু অপরদিকে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) অব্যাহতভাবে দমনমূলক আচরণ করেই যাচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়াই বিভিন্ন সমিতিতে গণহারে বদলি স্ট্যান্ড রিলিজ করে যাচ্ছে। এর আগে চাকরি থেকে অন্যায়ভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ২৪ কর্মকর্তাকে। বর্তমানে অনেক কর্মকর্তাই নিয়মিত অফিস করতে পারছে না। তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। কোন প্রকার কর্মসূচি ছাড়াই আরইবির এরকম বিমাতাসুলভ আচরণ সন্দেহজনক। তারা পরিকল্পিতভাবে দেশের বিদ্যুৎ সেক্টরকে উস্কে দিয়ে অস্থিশীল করে তুলতে চাইছে। 
এ পরিস্থিতিতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিতরণে দেশের সবচেয়ে বড় সংস্থা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং হয়রানি বন্ধে সরকার, দেশবাসী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজ এবং মিডিয়া কর্মীদের কাছে সহযোগিতা কামনা করে  কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আরইবি-পবিস সংস্কারে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের যে কমিটি করে দিয়েছে সরকার তার মাধ্যমেই একটা টেকসই সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। চলমান সংকট নিরসনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সমাধানে প্রয়োজনে সকল প্রকার সহযোগিতা করতে দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞ কর্মকর্তা কর্মচারীরা। 
বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সতর্কতা ও ধৈর্যের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং গ্রাহক সেবা চালু রাখার অনুরোধ জানানো হয়। পাশাপাশি আরইবির কোনো ধরনের উস্কানিতে না জড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

×