ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি মন্ত্রিপরিষদের

বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে নতুন বিপণন কৌশল

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে নতুন বিপণন কৌশল

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার একটি মডেল তৈরি করেছেন

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার একটি মডেল তৈরি করেছেন সরকারের একজন আমলা। নতুন এ বিপণন কৌশল বাজারে বাস্তবায়নে মাত্র সাতদিনেই মিলবে সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি থাকা ভোক্তাদের মুক্তি। এ মডেল কার্যকরে এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মডেলের উদ্ভাবক বলছেন, এজন্য যেমন ব্যয় হবে না সরকারের কোনো বাড়তি অর্থ, তেমনি লাগবে না অতিরিক্ত জনবল। অযৌক্তিক দামের চাপ থেকে ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে পরীক্ষামূলক হলেও মডেলটি নিয়ে কাজ করার পক্ষে অর্থনীতিবিদরা। 
নিত্যপণ্যের বাজারে চলছে চরম অস্থিরতা। ঊর্ধ্বমুখী প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম। এতে নাজেহাল নি¤œœবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চ-মধ্যবিত্তরাও। তারা বলছেন, বাজারের লাগামহীন এ পরিস্থিতিতে বাড়ছে জীবন ব্যয়। এতে সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা। 
বাজার যখন চলছে এমন অস্থিরতায়, তখন নিত্যপণ্যের অযৌক্তিক দাম নিয়ন্ত্রণে নতুন কৌশল বের করেছেন মোংলা বন্দরের সদস্য ও যুগ্ম-সচিব কাজী আবেদ হোসেন। তিনি বলেন, নতুন এ মডেলটিতে আলাদা কোনো জনবলের প্রয়োজন নেই। তবে প্রতিটি স্তরে নিশ্চিত হবে জবাবদিহিতা। আলাদা আইন বা বিধিরও প্রয়োজন নেই। মডেল ফলো করলে ৭ দিনেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
মডেলটি বাস্তবায়নে গত ১৮ আগস্ট নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। মন্ত্রণালয়ে উত্থাপনের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এটি বাস্তবায়নে গত ১৫ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ মডেলটির মাধ্যমে বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করতে প্রতিটি উপজেলায় দুটি করে কমিটি করা হবে। কমিটি-১-এ থাকবেন সরকারি কর্মকর্তা, কৃষক, হাটের সভাপতি ও সম্পাদক। কমিটি-২-এর সদস্য হবে উপজেলা প্রশাসন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঠিক করবে কোন কোন পণ্যে নজর রাখতে চায় সরকার। এরপর গ্রামের হাট থেকে ওই সব পণ্যমূল্য সংগ্রহ করবেন সরকারি কর্মকর্তা। গড়মূল্য নিয়ে কমিটি-১ উপজেলা পর্যায়ের হাটের জন্য যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করবে। এটি বাজারে দৃশ্যমান স্থানে ২৪ ঘণ্টা প্রদর্শন করা হবে। ব্যত্যয় হলে মোবাইল কোর্ট বসানোসহ ব্যবস্থা নেবে কমিটি-২। এভাবে ৪৯৫টি বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত হবে। একইভাবে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের বাজার থেকে পণ্যমূল্য সংগ্রহ করা হবে এবং উপজেলা থেকে রিপোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (আরএমএস) মাধ্যমে ইউএনওর পাঠানো দামের গড় করে জেলা বা বিভাগীয় শহরের বাজারের জন্য মূল্য নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। এভাবে ৬৪ জেলায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ হবে।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম কয়েকটি অঞ্চলে বিভক্ত হবে। আরএমএসের মাধ্যমে জেলা প্রশাসন থেকে পাঠানো মূল্যের গড় করে পরিবহন খরচ ও লাভ বিবেচনায় কমিটি-১ ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারের জন্য মূল্য নির্ধারণ করবে এবং দৃশ্যমান স্থানে তা প্রদর্শন করবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নির্ধারিত দাম স্থানীয় ক্যাবল অপারেটরদের মাধ্যমে প্রচার করা হবে।
নতুন এই কৌশলের উদ্ভাবক মোংলা বন্দরের সদস্য ও সরকারের যুগ্ম-সচিব কাজী আবেদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, স্থানীয় বাজারে পণ্যের দাম খুব একটা আকস্মিক ওঠানামা করে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেলটিতে সরকারের অর্থ ব্যয় হবে না, অতিরিক্ত জনবলের প্রয়োজন নেই, নতুন আইন তৈরির প্রয়োজন নেই, সাধারণ মানুষের জন্য সহজে বোধগম্য এবং তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নযোগ্য।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে পারে এমন যে কোনো কৌশল নিয়েই কাজ করার পক্ষে তারা। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, বাজার অর্থনীতির মূলমন্ত্রের বাইরে গিয়ে কাজ করা যেতেই পারে। তবে সেটা কতটা কার্যকর হবে, সেটি যাচাই-বাছাই করতে হবে। 
সরকারি নথি বলছে, কিশোরগঞ্জের মোহনগঞ্জ ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ইউএনও থাকাকালীন নতুন এ বিপণন কৌশল উদ্ভাবকের দেখানো পথেই ২০১১ সাল থেকে বেগবান হয়েছে প্রজনন মৌসুমে ইলিশ না ধরার কার্যক্রম।

×