ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ

শিক্ষার্থীদের উল্লাস গ্রেপ্তার দাবিতে অনশন

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:০৯, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

শিক্ষার্থীদের উল্লাস গ্রেপ্তার দাবিতে অনশন

বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ

বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে উল্লাসে মেতে উঠেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরব নেটিজেনরা। আনন্দ মিছিলের পাশাপাশি চলছে মিষ্টি বিতরণ। একইসঙ্গে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে যারা এখনো জড়িত তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে তারা। জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে নানা প্রতিষ্ঠানে চলছে নানা কর্মসূচি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে চলছে আমরণ অনশন। শিক্ষার্থীদের দাবি, জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। 
জানা যায়, বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পর পরই আনন্দ মিছিল বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।  মিছিলটি ঢাবির ভিসি চত্বর থেকে শুরু হয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়। এ সসয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, ছাত্রলীগ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো কেউ ছিল না। এই ছাত্রলীগ ১৫ জুলাই আমাদের ওপর হামলা করেছে, সারাদেশে তারা অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে শহীদ করেছে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাই ছাত্রলীগের মত সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণার জন্য।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ বলেন, আমরা অনেক বেশি খুশি কারণ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা সারা দেশ থেকে ছাত্রলীগ ও তার দোসরদের সমূলে উৎখাত করতে চাই। ঢাকা শহরের মিষ্টি শেষ হয়ে যাক, তবু আনন্দ শেষ না হোক। এদিকে জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বৃষ্টিতে ভিজে আমরণ অনশন শুরু করেছেন ৮ শিক্ষার্থী।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে তারা এই অনশণ কর্মসূচি শুরু করে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সশরীরে এসে আশ্বাস প্রদান না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। অনশন করা শিক্ষার্থীরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রেজোয়ান আহমেদ রিফাত, আশিকুর রহমান জীম, রেদোয়ানুল ইসলাম, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত রিদওয়ান, মো. আরমানুল ইসলাম, সোহরাওয়ার্দী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন ইমন, ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী মিনহাজুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজের শিক্ষার্থী সুহাইল মাহদীন। 
সরজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে অনশন করছেন আট শিক্ষার্থী। এসময় ঠান্ডায় অনেককে কাপতে দেখা যায়। অনেকে তাদের ছাতার নিচে বসে অনশণ করতে অনুরোধ করলেও  অপরাগতা প্রকাশ করেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রেজোয়ান আহমেদ রিফাত বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো সাধারণ ছাত্র-জনতার উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে কোনো শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। স্বৈরাচারের কথায় যারা আমাদের ওপর হামলা করেছে, অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে শহীদ করেছে তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবিতে আমরা আজকে অনশনে বসেছি। 

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান জীম বলেন, ৫ আগস্ট দেশের স্বাধীনতা এলেও এখনো সন্ত্রাসীরা নির্বিঘেœ ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কিছু মামলা হলেও তাদের গ্রেপ্তারের কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। আমরা আজকে অনশনে বসেছি যেন এই সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতার নিয়ে আসা হয়। 
কতক্ষণ এখানে অবস্থান করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সশরীরে এখানে এসে যদি আমাদের আশ্বস্ত না করেন তা হলে আমরা এখান থেকে সরব না। তিনি অফিসে বসে ঘোষণা দিলেও হবে না। অফিসের ঘোষণার অপেক্ষা করলে আমরা আজকে এখানে বৃষ্টিতে ভিজে অবস্থান করছি না। 
পরীক্ষা দিতে এসে ছাত্রলীগের দুই নেতা গ্রেপ্তার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে পরীক্ষা দিতে এসে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ঢাবির ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের হল শাখার পদপ্রত্যাশী হাসান সাইদি এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার উপ-দপ্তর সম্পাদক কাজী শিহাব উদ্দিন তৈমুর। দুজনই বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীরা জানান, এই দুজন পরীক্ষা দিতে এলে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের দেখে ফেলেন এবং ইনস্টিটিউটের পরচালককে জানান। পরে তাদের পরীক্ষার কক্ষ থেকে থেকে সরিয়ে আলাদা কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য ও পুলিশ আসে এবং তাদের শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে ঢাবির প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের আটক করার পর পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল টিম সেখানে যায় এবং তাদের আটক করে শাহবাগ থানায় দেওয়া হয়। তাদের নামে মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
ডেমরা, ঢাকা ॥ ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় রাজধানীর ডেমরায় আনন্দ মিছিল করেছে ডেমরা থানা বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় এ আনন্দ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া এক পথসভা শেষে সকলের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও ঢাকা-৫ আসনের সমন্বয়ক আলহাজ নবী উল্লাহ নবীর তত্ত্বাবধানে এই মিছিলটি অনুষ্ঠিত হয়। ডেমরা থানা বিএনপির সভাপতি পদপ্রার্থী এস এম রেজা চৌধুরী সেলিম এবং সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে এ মিছিলে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।

মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত পথসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সেলিম ও আনিসুজ্জামান বলেন, বিগত ১৭ বছর ধরে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের শাসনামলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, জুলুম, গুম, খুন, ধর্ষণ এবং দমন-পীড়নের রাজত্ব চলছিল। ছাত্রলীগের এসব কর্মকা-ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে সাধারণ জনগণ প্রতিবাদ করলেও আওয়ামী লীগ কোনো কর্ণপাত করেনি। এ ছাড়া বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ছাত্রলীগের গুলিতে বহু নিরীহ ছাত্র নিহত হয়েছে। এসব অপরাধের দায়ে, অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। 
টাঙ্গাইল ॥ ‘সন্ত্রাসী’ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার পর টাঙ্গাইল মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টাঙ্গাইলের সমন্বয়ক ও ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান্নান হলের সামনে থেকে একটি আনন্দ মিছিল বের হয়। মিছিল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসের ১২ তলা ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

এ সময় তারা ‘এই মুহূর্তে খবর এলো, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হল’ এমন স্লোগান দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টাঙ্গাইলের সমন্বয়ক মনিরুল ইসলাম বলেন, শুধু ছাত্রলীগই নয়, বরং আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। মুজিববাদের কবর রচনা করতে হবে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের মতো সন্ত্রাসী দলের কোনো অস্তিত্ব আর থাকবে না এদেশে। যারা দেশের মানুষকে দীর্ঘ ১৬ বছর রাজনীতি করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে তাদের আর রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারে না। তিনি আরও বলেন, এই সন্ত্রাসী বাহিনীকে নিষিদ্ধ করায় তারা গর্তে লুকিয়েছে। তাদের গর্ত থেকে টেনে বের করে সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিচার করতে হবে। একটা একটা ছাত্রলীগ ধরে গণধোলাই দেওয়া হবে। সরকারকে বলতে চাই, চিরুনি অভিযান চালিয়ে একটা একটা ছাত্রলীগ ধরুন আর জেলে ভরে বিচার করুন।
সিরাজগঞ্জ ॥ শহরের এস এস রোড থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা একটি আনন্দ মিছিল বের করেন। পরে মিছিলটি শহরের মুজিব সড়কে সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরির বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে পথচারী, শ্রমিক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘হৈহৈ রৈরৈ, ছাত্রলীগ গেলি কই’ গণহত্যার সঙ্গী, ছাত্রলীগ জঙ্গি, ছাত্রলীগ দেখে যা, ক্যাম্পাসে তোর বাপেরা ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’ ‘ছাত্রলীগের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে, বাবুর দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে গালিবের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’Ñ এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক যুবাইর আল ইসলাম সেজান, ইয়াসির আরাফাত ইশান ও টি এম মুশফিক সাদসহ সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

×