নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের চিন্তাভাবনা জানতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

শেখ হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে প্রভাবশালী রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র। সংস্কারসহ যাবতীয় কার্যক্রমে নিরবচ্ছিন্ন সমর্থনের পরও দেশটি চাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দেয়। এই বিষয়টির ওপর জোর দিয়ে মার্কিন প্রশাসন জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে নতুন সম্পর্কের বিষয়ে ঢাকার মূল্যায়ন কি?

বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় বসলেও অন্তর্বর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখা এবং বাংলাদেশে দ্রুত পরিবর্তনশীল অবস্থায় উগ্রবাদের উত্থান হচ্ছে কিনা- এ বিষয়েও উদ্বেগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। গত দুই মাসে শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠক হয়েছে। এই বৈঠকে এসব ইস্যুই প্রাধান্য পেয়েছে বলে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। 
বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিককালে বৈঠকগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চিন্তাভাবনা জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন মনে করে, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হলে সেটি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য ভালো হবে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন মনে করে, বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দেশ ও বিদেশে সমর্থন রয়েছে। কিন্তু যত বেশি দেরি হবে, এই সমর্থন কমে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। ফলে দ্রুত সংস্কার নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা প্রকাশ করা এবং নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন খাতে সংস্কার নিয়ে কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তারা তাদের রিপোর্ট দেবে। ওই রিপোর্টগুলোর আলোকে সরকারের পরিকল্পনা সবাইকে জানানোর বিষয়ে জোর দিয়েছে তারা।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের গত আড়াই মাসে বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে বাংলাদেশের। এর মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক, পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে হোয়াইট হাউস, স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ইউএসটিআরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের অন্তত পাঁচটি বৈঠকসহ অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। 
আগামী মাসেই ঢাকা সফরে আসছেন মার্কিন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। সেখানে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতা ॥ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিশেষ একটি পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিতে হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে। বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার গঠনের পর দেশে ও বিদেশে এই সরকারকে সমর্থন দিয়েছে বিভিন্ন পক্ষ বা বিদেশী সরকার। এই গ্রহণযোগ্যতা যেন অব্যাহত থাকে সেটির বিষয়ে জোর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে আরেক কর্মকর্তা বলেন, এই সরকারের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। 
ওয়াশিংটন মনে করে, এটি অব্যাহত রাখতে হবে।’ যে কারণে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে সেটি যথোপযুক্ত ছিলÑ এটি সরকারকে প্রমাণ করতে হবে বলে তিনি জানান।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ॥ আওয়ামী লীগ সরকার পতনের বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অস্বস্তিকর সম্পর্কের বিষয়টি নজর এড়ায়নি যুক্তরাষ্ট্রের। ওয়াশিংটন মনে করে এটি একটি নতুন বাংলাদেশ এবং এর সম্ভাবনা অনেক বেশি। একইসঙ্গে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্কের বিষয়টিও জোর দেয় তারা। তবে আমরা ভারতের সঙ্গে আরও বেশি যোগাযোগ রক্ষা করব। তিনি বলেন, দুই পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে অনেক বেশি আলোচনা হচ্ছে, যা অস্বস্তিকর। এটি কমানোর বিষয়ে বাংলাদেশ আন্তরিক।
পাচারকৃত সম্পদ ফিরিয়ে আনা ॥ রাজনৈতিক সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে সম্পদ পাচারের বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে ব্যবসায়ী, আমলা, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্নজন জড়িত রয়েছে। পাচারকৃত সম্পদ উদ্ধারে সহায়তা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, পাচারকৃত সম্পদ উদ্ধারের জন্য বিশেষায়িত জ্ঞান রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। সম্পদ উদ্ধারের জন্য ওয়াশিংটনের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রও কারিগরি সহায়তা, প্রশিক্ষণ বা অন্য ধরনের সহযোগিতা করতে চায়। পাচারকৃত সম্পদ উদ্ধারের জন্য দুই দেশের পররাষ্ট্র ও দূতাবাস একসঙ্গে কীভাবে কাজ করতে পারে, সেটি নিয়েও দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান।
সংস্কার কার্যক্রমে আগ্রহ ॥ সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কার কার্যক্রম করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সংস্কারের প্রকৃতি কী রকমের-সে বিষয়ে জানতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা তাদের সংস্কারের জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে জানিয়েছি। আগামী ডিসেম্বরে সংস্কার কমিশনগুলো তাদের রিপোর্ট জমা দেবে। এরপর সরকার সবার সঙ্গে আলোচনা করে তাদের পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করবে।