ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১

তরুণদের ন্যায্যমূল্যে কাঁচা বাজার পন্য বিক্রির উদ্যোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, ডেমরা, ঢাকা

প্রকাশিত: ১৮:৫৩, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

তরুণদের ন্যায্যমূল্যে কাঁচা বাজার পন্য বিক্রির উদ্যোগ

ন্যায্যমূল্যে নিত্য পন্য কিনতে মানুষের ভিড়

সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচা বাজারে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। দোকানদাররা বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্বিগুণ মুনাফা আদায় করছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এই মূল্যবৃদ্ধি অসহনীয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় থাকা সাধারণ শাকসবজি, পেঁয়াজ, আলু, টমেটো ইত্যাদি পণ্যও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এই অস্থির বাজার পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে ডেমরায় ইউনিভার্সিটি, কলেজের ছাত্র ও তরুণেরা এগিয়ে এসে ন্যায্যমূল্যে কাঁচা বাজার পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগ সাধারণ মানুষের জীবনে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জন্য কাঁচা বাজারের উচ্চমূল্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ডেমরার হাজী নগর বায়তুল কাউসার জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় তরুণদের উদ্যোগে গঠিত একটি ভাসমান কাঁচা বাজার সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফিরিয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, এই বাজারে মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে সঠিক ন্যায্যমূল্যে শাকসবজি বিক্রি করা হচ্ছে। লাউ (প্রতিটি) ৩০ টাকা, ঝালি কুমড়া (প্রতিটি) ৪৫ টাকা, ঢেঁড়স ৫০টাকা/কেজি, বেগুন—৬০টাকা/কেজি, ফুলকপি—২৫ টাকা/প্রতি, পটল ৪০ টাকা/কেজি, চিচিঙ্গা—৫০টাকা/কেজি, জলপাই ৪০টাকা/কেজি, লেবুর হালি ১০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা/কেজি। যেখানে অন্যান্য দোকানদাররা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্বিগুণ মুনাফা আদায় করছে। সেখানে তরুণরা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমে বাজারের প্রচলিত দামের তুলনায় কম মূল্যে বিক্রি করছে।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা বলেন, ডেমরায় তরুণদের এই ন্যায্যমূল্যে কাঁচা বাজার পন্য বিক্রি একটি অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। এই উদ্যোগ শুধু বাজারের সিন্ডিকেটের বিপরীতে নয়, বরং সাধারণ মানুষের জন্য অনেক বড় সহায়ক হয়ে উঠছে। এ ধরনের সামাজিক উদ্যোগ বাজার ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মো. আব্দুল হালিম নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, প্রতিদিন বাজারে যাওয়া ছিল ভয়ের ব্যাপার, কারণ সবকিছুর দাম অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু এখানে আসার পর বুঝতে পারছি, আসলে সিন্ডিকেটই দাম বাড়াচ্ছে। এখানে কম দামে শাক—সবজি পেয়ে আমি খুশি। 

মো. সোলায়মান নামের এক অটোরিক্শা চালক বলেন: বাজারে পণ্যের এত বেশি দাম যে অনেক কিছুই কিনতে পারতাম না। দাম এত বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিনের বাজার করা কঠিন হয়ে পড়ছিল। কিন্তু এই তরুণদের উদ্যোগে বাজারের চাইতে অনেক কম দামে কিনতে পেরেছি।

এই উদ্যোগের উদ্যোক্তা সিয়াম ও রনি জানান, আমরা প্রতিদিন সকালে যাত্রাবাড়ীর আড়ৎ থেকে পাইকারি দামে কাঁচা বাজারের শাক—সবজি, তরকারি সংগ্রহ করি। এরপর সেগুলো ডেমরার বিভিন্ন বাজার সংলগ্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের কাছে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করি। আমরা ১০/১২ জন ছাত্র—তরুণ মিলে প্রতিদিন ৪—৫ ঘণ্টা স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছি। আমরা এই বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে বাজারের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হলো যতদিন পর্যন্ত বাজারে সিন্ডিকেট ভেঙে না যায় এবং বাজারের নিয়ন্ত্রণ না আসে, ততদিন আমরা বিভিন্ন বাজার সংলগ্ন এলাকায় ন্যায্যমূল্যে কাঁচা বাজার পন্য সরবরাহ করে যাব। প্রতিদিন একেক বাজারে আমরা এই কার্যক্রম চালাব।

শিহাব

×