ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

আওয়ামী লীগকে সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে ভারত?

প্রকাশিত: ১১:১৪, ২২ অক্টোবর ২০২৪

আওয়ামী লীগকে সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে ভারত?

আওয়ামী লীগ ও ভারত।

বৈষ্যম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে গত ৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। কিন্তু সেখানে অর্থাৎ দেশটির আগরতলায় সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এমনকি ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন শেখ হাসিনা!

এই আলোচনা সামনে আসতেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে আওয়ামী লীগ আসলেই কি আগরতলায় সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে? দলটি যদি সমাবেশের প্রস্তুতিও নেয়, ভারত সরকার কি ওই কর্মসূচি করার অনুমতি দেবে?

এদিকে, ভারত অবশ্য বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তবে ভারত সরকারের কর্মকর্তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দাবিকে সম্পূর্ণ ‘গাঁজাখুরি ও ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। 

ভারত সরকারের একটি সূত্র বলেছে, ‘কারা বলছেন এসব কথা? তারা কি কোনো দায়িত্বপূর্ণ পদে আছেন? পাশের দেশে যে কেউ একটা আজগুবি কথা বললেই আমরা কেন জবাব দিতে যাবো?’ 

এ ধরনের দাবির যে কোনো ভিত্তি নেই, সেটা অবশ্য ত্রিপুরা এবং দিল্লিতে নানা মহলে খোঁজখবর নিয়েও নিশ্চিত হওয়া গেছে। কারণ, প্রথমত, আওয়ামী লীগের পালিয়ে আসা নেতা-কর্মীরা যদি ত্রিপুরার মাটিতে বড় মাপের কোনও সমাবেশ করতে চান, সেটা একেবারে গোপনে বা স্থানীয়দের কাউকে টের পেতে না-দিয়ে করা সম্ভব নয়।

ত্রিপুরার সরকারি ও বেসরকারি একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাজধানী আগরতলায় এ ধরনের কোনও তৎপরতা গত কয়েক সপ্তাহে তাদের আদৌ চোখে পড়েনি।

দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ যদি ভারতের মাটিতে কোনও প্রকাশ্য সভা করেও, সেখানে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে ভাষণ দিতে দেওয়া হবে- সে সম্ভাবনা একেবারেই নেই। গত আড়াই মাসে ভারত বারেবারে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে, এক বিশেষ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে নিজের সুরক্ষার জন্য শেখ হাসিনাকে ভারতে চলে আসতে হয়েছে এবং তখন তাকে আতিথেয়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তাকে প্রকাশ্য রাজনীতিতে অংশ নিতে দেওয়া হবে, ভারত এখনও এরকম কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ফলে প্রকাশ্য কোনো রাজনৈতিক সভায় তিনি ভাষণ দিলে বা তার অডিও বার্তা প্রচার করা হলে দিল্লির জন্য তা কূটনৈতিকভাবে খুবই অস্বস্তিকর হবে। তাই শেখ হাসিনাকে আপাতত সেটা ‘অ্যালাও’ করা হবে না বলে বলছেন কর্মকর্তারা।

তৃতীয়ত, পাঁচই অগাস্টের পালাবদলের পর আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী পালিয়ে ভারতে চলে এসেছেন এটা ঠিকই। এদের অনেকেরই আগে থেকে ভারতের ভিসা ছিল, কেউ কেউ আবার এসেছেন বিশেষ ব্যস্থায়।

ভারত তাদের সবাইকেই অনানুষ্ঠানিকভাবে ‘লো প্রোফাইল’ বজায় রেখে চলার নির্দেশ দিয়েছে। প্রকাশ্য কোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতেও নিষেধ করা হয়েছে তাদের। রাতারাতি সে অবস্থান পরিবর্তন করে ভারতের মাটিতে সমাবেশ করতে উৎসাহ দেওয়া হবে- এমন কোনও কারণ ঘটেনি।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি পদস্থ সূত্র বলেছে, ‘আওয়ামী লীগ ভারতের মাটিতে শক্তি সঞ্চয় করে বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাইছে, এজন্যই সীমান্তের খুব কাছে সভা-সমাবেশ করছে- বাংলাদেশের মানুষকে আওয়ামী জুজু দেখাতেই এগুলো বলা, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। আমাদের সেই ফাঁদে পা-দেওয়ার কোনো কারণ নেই!’

সূত্র: বিবিসি। 

এম হাসান

×