ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১

জাতীয় পরামর্শ সভায় রিজওয়ানা হাসান

রাষ্ট্র সংস্কারে আলোচনা শুরু করেছি, কমিশন হয়েছে 

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫২, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

রাষ্ট্র সংস্কারে আলোচনা শুরু করেছি, কমিশন হয়েছে 

রাষ্ট্র সংস্কারে চার কমিশন গঠন

পানিসম্পদ এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের কাজটা অন্তর্বর্তী সরকারের নয়, সরকারের উপদেষ্টাদেরও নয়; এটা রাষ্ট্রের নাগরিকদের ডিমান্ড (চাহিদা)। সেই কাজটা করতে আমরা সংলাপ-আলোচনা শুরু করেছি। কমিশন করেছি, নিজেরাও কাজ করছি। একইসঙ্গে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর দেশের নাগরিক ও সুশীল সমাজকে আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার ‘নাগরিক সমাজ: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক জাতীয় পরামর্শ সভায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে এ সভার আয়োজন করা হয়।
সিএসও অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক রাশেদা কে চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সমাজকল্যাণ এবং নারী ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশীদ, টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিটির প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বৈষম্যবিহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের যে দীর্ঘপথ, সেই রাস্তাটা মসৃণ হওয়ার বাস্তবিক কোনো কারণ দেখতে পাচ্ছি না। সেজন্য বলব, আমাদের ওপর একটু আস্থা রাখুন। এখনই অন্তর্বর্তী সরকার, সরকারের সফলতা নিয়ে উপসংহারে চলে আসার সময় হয়নি, কোনো কারণও ঘটেনি। আমরা তথ্যের অবাধপ্রবাহ নিশ্চিত করছি। কেউ যখন কোনো আন্দোলন করছেন, দাবি তুলছেন; আমরা বলছি- আপনাদের মুখপাত্রকে পাঠান, আমরা বসব; বলব। আমাদের দরজা আলোচনার জন্য সবসময় খোলা। এটিই বৈষম্যবিহীন রাষ্ট্র গঠনে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি।
প্রথাগত সরকারগুলোর পথে অন্তর্বর্তী সরকার হাঁটছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর প্রথাগত সরকারগুলো যেভাবে সমস্যা হ্যান্ডেল করেছে, আমরা সেভাবে সমাধানটা করতে চাচ্ছি না। ভিন্নধারায় সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটছি। সেটা
আপনারা দেখতে পারছেন। অনেক ক্ষেত্রে আপনারা সহায়তাও করছেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন খাতে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। এগুলো খালি চোখে দেখতে নিরুৎসাহিত করেছেন রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেল। আমি নিজে এ বাংলাদেশে বড় হয়েছি। নিজের মধ্যে তো সাম্প্রদায়িকতা দেখিনি। কাজেই খালি চোখে যা দেখা যায়, ঘটনার অন্তরালে আরও অনেক ঘটনা থাকে। কোনো ক্ষেত্রে যদি আপনারা দেখেন বৈষম্যবিরোধী সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে আমরা এগোতে পারছি না; এটুকু মনে রাখবেন যে, বৈষম্যবিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা এতটা সহজও হবে না। নতুন একটি রাষ্ট্র গঠনের পথ মসৃণ নয়। কারণ প্রত্যেকেই কিন্তু তার ফুটপ্রিন্ট রেখে গেছে এ দেশে। প্রত্যেকে কিন্তু সুবিধাবাদীদের রেখে গেছে। তারাও কিন্তু অ্যাক্টিভ ফোর্স হিসেবে মাঠে কাজ করছে।
বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারের কথা যদি হয়, সেখানেও এত রকম ইন্টারেস্টের সঙ্গে আপনাকে কথা বলতে হবে; গত ৫৩-৫৪ বছরে যে ধারা চলে আসছে, তার বিরুদ্ধে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনি একদম পারফেক্ট সরকারও হন, তবুও অনেক রকম বাধার মুখোমুখি আপনাকে হতে হবে।
ভোটের আগে ফান্ড আটকে এনজিও কমিউনিটির মুখ বন্ধ করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে দেশে কর্মরত বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার ফান্ড আটকে দেওয়া হয়েছিল। সেজন্য কর্মীদের পর্যন্ত বেতন দিতে পারিনি। নির্বাচনের পর সেই টাকা ধীরে ধীরে ছাড়া হলো। মুখ বন্ধ করতে অনৈতিক কাজ তখনকার সরকার করেছিল। এ কথাগুলো সামনে আসেনি। এগুলো সামনে আনা উচিত।
তিনি আরও বলেন, টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা একটি সরকার, সেই সরকার নেতিবাচক একটি ধারা আইনগতভাবে প্রতিষ্ঠা করে গেছে। সেগুলো নিয়ে এখন কথা বলার যথেষ্ট উপযুক্ত সময়। গত কয়েক বছর নানা ধরনের ঘটনায় সিভিল সোসাইটিকে যেভাবে প্রতিবাদ করা প্রয়োজন ছিল, সেভাবে কিন্তু করা সম্ভব হয়নি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা মানবাধিকার, পরিবেশের অধিকার নিয়ে কাজ করি। সরকার কোন নীতি করল, সেটার অসামঞ্জস্যতা কী, সেখানে সমস্যা কোথায়; সেটা নিয়ে কথা বলব। সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করবে, আমরা সেটার পরিবেশের ক্ষতিকর দিক নিয়ে কথা বলব। এটাই আমাদের কাজ। অথচ আমাদের এখানে কাজ করতে হয়েছে এমনভাবে যে, সরকারের নীতির সঙ্গে আমরা সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকব। আমরা অনেকে দলীয় আনুগত্য বা নিজেদের একটি দলের লোক বলে দেখানোর চেষ্টাও করেছি। এতে এনজিওখাত অনেক বড় ইমেজ সংকটে পড়েছে। সেজন্য আগামীতে আমরা নিজেদের স্বকীয়তা ঠিক রাখব। বাধা এলে সামষ্টিকভাবে এগোব।’
ড. ইউনূসকে হয়রানি করলেও আমরা মুখ খুলিনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি করা হলেও এনজিও কমিউনিটি বা সুশীল সমাজ মুখ খোলেনি। বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তাকে যখন জেলে নেওয়া হচ্ছিল, আদালতে আদালতে  ঘোরানো হচ্ছিল; আমরা জানতাম সেখানে প্রায় পুরোটাই তাকে হয়রানি করা হচ্ছে, অভিযোগগুলো প্রায় সবই মিথ্যা-ভিত্তিহীন। তখন এনজিওগুলোর অ্যালায়েন্স বা সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলতে পারতাম। কিন্তু সেটা পারিনি, মুখ খুলিনি।
অন্তর্বর্তী সরকার এনজিও প্রভাবিত বলে যে কথা উঠছে, তাতে সমস্যা দেখেন না রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে একটা কথা বলা হয় যে, এটা খুব বেশি এনজিও দিয়ে ঘেরা। আমি মনে করি, এখানে কোনো সমস্যা হবে না। এটা কোনো সমস্যাও নয়। যে সমস্যাগুলো আমাদের আইনে রয়ে গেছে, প্রশাসনে রয়ে গেছে; সেগুলোও যেন আমরা চিহ্নিত করি এবং সব পক্ষের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে সমাধানে পৌঁছতে পারি।
অনুষ্ঠানে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেক দল নিজেদের জয়ী ভাবছে। অথচ এসব দলের এজেন্ডায় রাষ্ট্র সংস্কারের চিন্তা-চেতনা নেই। 
বিগত সরকার এনজিওগুলোকে প্রচ- চাপে রেখেছিল অভিযোগ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দেশী-বিদেশী যে উন্নয়ন সংস্থাগুলো, তারা মূলত সুশাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অনিয়ম-দুর্নীতি রুখতে কাজ করে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করে। অথচ বিগত ১৫ বছর এনজিও এবং সিএসও খাতের ওপর প্রচ- ধরনের চাপ ছিল। হয়রানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করতে হয়েছে।

যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারাই আমাদের চরম শত্রু ভেবেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে অসহযোগিতা করেছে। আবার হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলাও করেছে। এ সময় তিনি ক্ষমতার রাজনীতি ও সংকীর্ণতা নিয়ে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে উন্নয়নমূলক কাজ করতে হয় বলে জানান।  
বিদেশী উন্নয়ন সংস্থাগুলো চাপে রাখতে সরকার আইনেও পরিবর্তন এনেছিল উল্লেখ করে টিআইবির প্রধান বলেন, ‘বিদেশী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে চাপে রাখার জন্য তারা আইনে নানান পরিবর্তনও এনেছিল। ফরেন ডোনেশন্স (স্বেচ্ছাসেবক অ্যাক্টিভিটিস) রেগুলেশন অধ্যাদেশ যেটি রয়েছে, ২০১৬ সালে তাতে ৪৩নং ধারা যুক্ত করা হয়। সেখানে ১৪ নম্বর উপধারায় পরিষ্কার বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি দেশের সংবিধান এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক ও অশালীন কোনো মন্তব্য করেন, তাহলে অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এর মাধ্যমে সংস্থাগুলোকে সমালোচনা, সুশাসন ও মানবাধিকার কথা বলার ক্ষেত্রে বাধার দেওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীকেও ব্যবহার করা হয়েছে অভিযোগ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের চাপে রাখার জন্য রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাও ব্যবহার করা হয়েছে। দফায় দফায় বিভিন্ন ইস্যুতে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। বিদেশী অর্থায়ন রুখতে কাজ করা হয়েছে। নাগরিক অধিকার হরণের জন্যও ঠিক একইভাবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যক্তিগত কোনো দল, মত, সংস্থাকে টার্গেট করে আমি এসব কথা বলছি না। ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে আমি বিষয়গুলো স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।’
ক্ষমতায় গেলেই রাজনৈতিক দলের আচরণে পরিবর্তন আসে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘কোনো দল ক্ষমতায় থাকলে এক রকম, বাইরে থাকলে আরেক রকম যে ব্যবহার আমাদের সঙ্গে করা হয়েছে, সেগুলো মাথায় রেখে আমরা কাজ করেছি। তবে ছাত্র-জনতা যেভাবে সংগ্রাম করে একটি প্রেক্ষাপট আমাদের সামনে এনেছেন, সেই জায়গা থেকে এখন আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। সংকীর্ণতা, হয়রানি থেকে মুক্তির পথ খুঁজছি। নতুন এ বাংলাদেশে বেসরকারি সংস্থাগুলো নাগরিক সেবা দিতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। সেখানে নিরাপদে কাজ করার মতো একটি পরিবেশ আমরা প্রত্যাশা করছি।
উন্নয়মূলক কাজ করতে নানান রকম বাধা-বিপত্তি এখনো রয়েছে জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে থাকা উন্নয়ন সংস্থাগুলোর অন্যতম কাজ। বাস্তবে আমরা সে কাজটা থেকে এখনো পিছিয়ে আছি। মানবাধিকার লঙ্ঘন, জেন্ডার বৈষম্য, জাতিগত বিদ্বেষমূলক অপতৎপরতা ঠেকাতে যারা দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন। এখন অনেক তথ্য পাচ্ছি, তারা কাজ করতে পারছেন না।

নারী অধিকার নিয়ে কাজ করতে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়ার ঘটনা সামনে আসছে। এক্ষেত্রে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আরও বেশি তৎপর হয়ে কাজ করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে বিষয়গুলো তুলে ধরতে হবে। তারপর নির্বাচনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় আসবেন, তারাও যেন সেই মূল্যবোধগুলো ধারণ করে উন্নয়নমূলক কাজ এগিয়ে নিতে পারেন, সেই পথ দেখিয়ে দিতে হবে’ বলেন দুদক সংস্কার কমিটির প্রধান।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, একদিকে হিমালয়ের মতো আমাদের সমস্যা। অন্যদিকে আকাশচুম্বী প্রত্যাশা। সেই আকাশচুম্বী প্রত্যাশা না পেয়ে আমরা নির্দয়ভাবে সরকারের যে সমালোচনা করছি, তাতে সরকারের পক্ষে কাজ করাটা আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, সরকারের সমর্থক যারা, বিরোধীপক্ষ যারা আছেন, তারা সবাই জঞ্জাল পরিষ্কার করতে হবে বলে একমত ছিলেন। তারা যেহেতু পারেননি, অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু সেই কাজ গুরুত্ব দিয়ে এবং নিঃস্বার্থভাবে করার অঙ্গীকার করছে, সে জন্য সব পক্ষকে এ সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত হবে।
সমাজকল্যাণ এবং নারী ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশীদ বলেন, আমাদের জাতীয় দর্শনে পৌঁছতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর একটা দর্শন আছে, সুশীল সমাজের দর্শন আছে, সামরিক ব্যক্তিদের দর্শন। সব দর্শন মিলে মৌলিক জাতীয় দর্শন ঠিক করতে হবে। ছাত্র আন্দোলনের গতিপথ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার ছাত্রদের এ আন্দোলন আমি খুব গভীরভাবে দেখেছি। প্রতিটি পদক্ষেপে চোখ রেখেছি। খুব বিস্মিত হয়েছি। সেখানে ছেলেরা এবং মেয়েরা একসঙ্গে লড়েছে। অথচ কোনো অশালীন আচরণ করেনি, আবার কোনো মেয়ে অচেনা একটা ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করতেও আতঙ্কিত হয়নি।
অনুষ্ঠানে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, পট-পরিবর্তনের পর; বিশেষ করে দেশের জনগণের মানসপটে যে বিশাল পরিবর্তন এসেছে, সেটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন বলতেই হবে। আমার বাড়িতেও পরিবর্তন এসেছে। আমার স্ত্রীর মাথায়ও বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। আমাকে বলেছে, কথাবার্তা সাবধানে বলবা। উল্টা-পাল্টা কোনো কাজ করা চলবে না। এটা সত্য। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসছে, সেটা সব ক্ষেত্রে। সবাইকে আত্মশুদ্ধি, আত্মসমালোচনার দিকে এগোতে হবে। এর বিকল্প কিছু নেই। 
তিনি আরও বলেন, এখানে অনেকে বলেছেন, তারা নারী নির্যাতন নিয়ে কথা বলেছেন, কাজ করেছেন। আমি বলব, না আপনারা সিলেক্টিভলি (বাছাই করে) কাজ করেছেন। যখন বিএনপিতে ভোট দেওয়ার কারণে নোয়াখালীতে এক নারীকে ধর্ষণ করেছে, তখন অনেকে নারী অধিকারের সংগঠন প্রতিবাদও করেনি। সোচ্চার হয়নি। এমন অনেক ঘটনা আমি দেখাতে পারব।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, নাগরিক ও রাষ্ট্রের ভারসাম্যের অনুপস্থিতিতে ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে সীমিত হয়েছে। এনজিও এবং নাগরিক সমাজেও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ দেখা যায়। আগামী দিনে সিভিল সোসাইটির ভূমিকা নির্ভর করবে রাজনৈতিক উদ্যোগের ওপর। আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল নাগরিক সাম্য, ন্যায়বিচার এবং অন্তর্ভুক্তির। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি বলেই ২০২৪ সালে ছাত্রদের আবার বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের দাবি তুলতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে।

×