ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১

৪৪ দিন পর শুরু হচ্ছে আপিল বিভাগ ও হাইকোর্টের বিচারিক কার্যক্রম

ষোড়শ সংশোধনী রিভিউ শুনানি আজ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:১৮, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

ষোড়শ সংশোধনী রিভিউ শুনানি আজ

ষোড়শ সংশোধনী রিভিউ শুনানি আজ

সাপ্তাহিক ছুটি, সরকার ঘোষিত ছুটি ও সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শেষে ৪৪ দিন পর আজ রবিবার থেকে নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রমে ফিরছে সুপ্রিম কোর্ট। আজ থেকে পুনরায় শুরু হচ্ছে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রম। এদিকে বিচার কাজ পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট বিচারিক এখতিয়ার দিয়ে ৫৪টি হাইকোর্ট বেঞ্চ গঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ ।
সবার নজর এখন আদালতের দিকে। সুপ্রিম কোর্ট খোলার পর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি হবে। এর মধ্যে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে এনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে  তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে বিএনপি মহাসচিবের আবেদনও আজ  সর্বোচ্চ আদালতে উপস্থাপন করা হবে।  এ ছাড়াও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট ) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলারও শুনানি হবে।   
 ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের শুনানি আজ অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার প্রকাশিত রবিবারের কার্যতালিকায় রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য রয়েছে। ফলে রবিবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হবে।
অবকাশ ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত  সুপ্রিম কোর্টে নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে এই সময়ের মধ্যে জরুরি মামলা সংক্রান্ত বিষয়াদি শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্ট বিভাগে সুনির্দিষ্ট বিচারিক এখতিয়ার দিয়ে বেশকটি বেঞ্চ গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি। এসব বেঞ্চে বিভিন্ন মামলায় শুনানি ও আদেশ হয়েছে। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ভেকেশন জজ মনোনীত করে দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি।

ভেকেশন জজ হিসেবে বিচারপতি মো. রেজাউল হক বিভিন্ন মামলায় শুনানি নিয়ে আদেশ দিয়েছেন। অবকাশকালীন ছুটি শেষে আজ ২০ অক্টোবর থেকে বিচার কাজ পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট বিচারিক এখতিয়ার দিয়ে ৫৪টি হাইকোর্ট বেঞ্চ গঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি। গত ১৭ অক্টোবর এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতিসহ বিচারপতি রয়েছেন ৬ জন। কাল ২১ অক্টোবর থেকে আপিল বিভাগে দু’টি বেঞ্চে বিচারিক কার্যক্রম চলবে। আর হাইকোর্ট বিভাগে রয়েছেন ১০১ বিচারপতি। হাইকোর্টের বিচারপতিদের থেকে ৮৩ বিচারপতিকে দিয়ে ২৯টি ডিভিশন বেঞ্চ ও ২৫টি একক হাইকোর্ট বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। কোন বিচারপতিকে কোন বেঞ্চ দেওয়া হয়েছে, তা সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ নির্দেশিত ২০২৪ সালের ২৯৪ নং বেঞ্চ গঠনবিধিতে বলা হয়েছে, ২০ অক্টোবর রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকার্য পরিচালনার জন্য উল্লেখিত বেঞ্চসমূহ গঠন করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘেরাও কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টের ১২ বিচারপতিকে কোর্ট পরিচালনার জন্য বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না বলে প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্ত গত বুধবার বিকেলে জানান সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমেদ ভূঞা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আনা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের রিভিউ আবেদনও আজ  সর্বোচ্চ আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
ষোড়শ সংশোধনী রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি ॥ বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে এনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের ওপর আজ রবিবার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গত ১৫ আগস্ট বিচারপতিদের অপসারণে সংসদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ করে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন শুনবেন বলে জানিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি হবে বলে জানানো হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ দিন ধার্যের আদেশ দেন। আদালতে রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
এর আগে ১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে। মার্শাল প্রক্ল্যামেশনে করা পঞ্চম সংশোধনীতে এক্ষেত্রে ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়েছিল।

পরে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ষোড়শ সংশোধনীতে সেটা বাতিল করে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয় সংসদকে। বিলটি পাসের পর একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। সংবিধানের এ সংশোধনীর  বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ৯ আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ৯ নভেম্বর এ সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
রুল শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার পর ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে সর্বসম্মতিক্রমে চূড়ান্ত রায়টি দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ।

পরবর্তীকালে একই বছরের ১ আগস্ট ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়। ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। এর পর কয়েক দফা মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এলেও রিভিউয়ের শুনানি হয়নি।
ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় রিভিউ শুনানি ॥ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আনা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের রিভিউ আবেদনও আজ  সর্বোচ্চ আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ প্রদান করেন। তিনি বলেন, ৪১ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে দশটি যুক্তি উপস্থাপন করা  হয়েছে। যুক্তির মধ্যে রয়েছেÑ আদালতে প্রকাশ্যে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত আদেশ সংবিধান সংশোধনের পর পূর্ণাঙ্গ রায় থেকে বাদ দেওয়া এবং তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের অবসরের ১৮ মাস পর রায় প্রকাশ  করা একটি বিচার বিভাগীয় প্রতারণা।

বিষয়টি নিয়ে একটি ফৌজদারি মামলাও চলমান রয়েছে  বলে যুক্তিতে উল্লেখ  করা হয়। ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে করা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সেই রায় রিভিউ চেয়ে আবেদনটি করা হয়েছে।

×