উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, আমলারা বেঁচে থাকার জন্য এমন এমন নিয়মনীতি করেছে যাতে তাদের কিছু করা যায় না। কিন্তু এসব নিয়মনীতি তোয়াক্কা করা হবে না। বাংলাদেশে অভ্যুত্থান নিয়মনীতি মেনে হয়নি। সরকারি কর্মকর্তারা সহযোগিতা না করলে সামনে নিয়মনীতি মেনে সরকার পরিচালনাও করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন এ উপদেষ্টা।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চট্টগ্রাম বিভাগ এবং জেলার সরকারি দপ্তরগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাজে সক্রিয় না হওয়ায় বিষয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে এসময় সেখানে বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কয়েকটি দপ্তরের কর্মকর্তার অনুপস্থিত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন উপদেষ্টা। একইসঙ্গে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট শনাক্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তার করতে নির্দেশ দেন।
সভায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘একটা বিপ্লবের কোনো কিছু সিস্টেমওয়াইজ চলে না। এখনও আমরা সিস্টেমটাকে বজায় রেখেছি। প্রত্যাশা করি আপনারা সহযোগিতা করবেন বজায় রাখতে। কিন্তু যদি সিস্টেম ভাঙার প্রয়োজন পড়ে আমরা সিস্টেম ভাঙব। প্রয়োজনে নতুন নিয়োগ দিয়ে আপনাদের এই জায়গাগুলোতে নতুন লোকদের বসাব। এত প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা, পড়াশোনা থাকার পরও যদি আপনারা (সরকারি কর্মকর্তা) কাজ করতে না পারেন তাহলে অবশ্যই নতুনদেরকে নিয়ে আসি! আপনাদেরকে রেখে কি করব? জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়ে অবশ্যই কঠোর হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ে আপনারা বলছেন যে ভোক্তা অধিকার আইন কঠোর না। কিন্তু আমাদের তো বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তার করার বিধান আছে। সিন্ডিকেট যারা করছে তাদের বিশেষ ক্ষমতা আইনের গ্রেপ্তার করেন। এজন্য প্রয়োজনে আমাদের ছাত্র-জনতা সহায়তা করবে। যারা এ সরকারকে সহায়তা করছে অবশ্যই তারা আপনাদের সহযোগিতা করবে। আর সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সদিচ্ছা আছে এ বিষয়ে সহযোগিতা দেওয়ার। অন্যান্য সরকারের সময় যেটা হয়, সরকার দলীয় সংগঠনগুলো স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করে। কিন্তু এখন আমরা এমন একটা পরিস্থিতিতে আছি, সব রাজনৈতিক সংগঠনগুলো সহযোগিতা করছে, ছাত্র-জনতাও সহযোগিতা করছে। আপনি যদি ভালো একটি কাজ করতে গিয়ে বাধা সম্মুখীন হন আমি নিশ্চিত যে- জনগণ গিয়ে তাকে উচিত শিক্ষা দিয়ে আসবে। তারপরও আপনারা কেন কাজ করছেন না, আপনাদের মধ্যে সদিচ্ছা কেন নাই এ বিষয়টি বুঝতে পারছি না।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনমলে জ্বি হুজুর বলে চেয়ারে যে বসে তাকে খুশি করতে পারলেই কাজ করার প্রয়োজন পড়ে না। এখন কিন্তু সেই পরিস্থিতি নাই। ভবিষ্যত বাংলাদেশে সেই পরিস্থিতি থাকবে না। কেউ যদি কাজ না করে, জবাবদিহিতা দিতে ব্যর্থ হয় তাকে আমাদের প্রয়োজন নেই।’
সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমলারা বেঁচে থাকার জন্য এমন এমন নিয়মনীতি করা আছে যে, আপনাদের ব্যাপারে হাত দেওয়া যায় না, কিছু করা যায় না। আমরা কিন্তু ওইসব নিয়মনীতি তোয়াক্কা করব না। নিয়মনীতি মেনে কিন্তু বাংলাদেশে অভ্যুত্থান হয়নি। সরকার পরিচালনাও সামনে নিয়মনীতি মেনে হবে না, যদি না আপনারা সহযোগিতা না করেন। আমি আশা করব যে যে টাস্কফোর্স হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন, কৃষি, প্রাণী সম্পদসহ বিভিন্ন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সবাই মিলে চট্টগ্রামে দ্রব্যমূল নিয়ন্ত্রণে কাজ করবেন।’
দিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে প্রতিটি বাজারে একটি কর্ণার করা হবে, যেখানে সরাসরি কৃষকের পণ্য বিক্রি করা হবে। মাঝে কোনো দুই তিনটা হাত বদল হবে না। এর সুফল জনগণ পাবেন। জেলা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান থাকবে, যারা সিন্ডিকেটের গোড়ায় এবং সিন্ডিকেটে যারা বসে আছে তাদের শনাক্ত করুন। ক্যাবের সহায়তা নেন। কেউ যদি পরিবর্তন উপলব্ধি করতে না পারে এবং জনগণের সুযোগ সুবিধার কথা না ভেবে কাজ করে, যে সিন্ডিকেট নিজের পকেট ভারি করার জন্য কাজ করে এসেছে তাদেরকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তার করুন। এক্ষেত্রে সরকারের সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে।’
এর আগে তিনি চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম এবং এমএ আজিজ স্টেডিয়াম পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি মাঠগুলোর বেহাল অবস্থা দেখে হতাশা ব্যক্ত করেন।
এম হাসান
