ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

জামায়াতের ঢাকা দক্ষিণের রুকন সম্মেলনে আমির ডা. শফিকুর

সিন্ডিকেট এখনো ভাঙতে পারেনি সরকার

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

সিন্ডিকেট এখনো ভাঙতে পারেনি সরকার

শুক্রবার জামায়াতের ঢাকা দক্ষিণের রুকন সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, মুষ্টিমেয় কিছু দুর্বৃত্ত ছাড়া এই জাতির ১৮ কোটি মানুষই বড় মজলুম। এখনো সেই জুলুমের ভার মানুষকে বহন করতে হচ্ছে। এখনো বাজারে গেলে মানুষের চোখ অন্ধকার হয়ে আসে। তাদের আমলে হওয়া সিন্ডিকেট এখনো সরকার ভাঙতে পারেনি। এ জন্য জাতি যে সংস্কার প্রত্যাশা করেছিল তা এখনো হয়ে ওঠেনি।
শুক্রবার রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের রুকন সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। আহতদের স্মরণ করে জামায়াতের আমির বলেন, আমি জানতে পারলাম সাভারের সিআরপি হাসপাতালে জীবন্ত শহীদরা ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখনো তাদের দেখতে কেউ যায়নি। আমি ভীষণভাবে লজ্জিত হলাম, অনুতপ্ত হলাম। আমাদেরও খেয়ালের বাইরে ছিল।

গতকাল রাতে সেখানে গেলাম। তাদের দেখলাম। তারা জিন্দা শহীদ! তিনি বলেন, কাতারে কাতারে তারা বিছানায় পড়ে আছে। তরতাজা যুবক। জাতির মুক্তির আন্দোলনে যুবকদের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে এসেছিল। জালিমের বুলেট তাদের বিদ্ধ করে দিয়েছে। মেরুদ-ের হাড় ভেঙে, স্পাইনাল কর্ডকে আহত করে ফেলেছে। কারও দুটি হাত, দুটি পা সবকিছুই অবশ হয়ে গেছে, যেন মৃত একটি মানুষের দেহে শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। তিনি বলেন, আমি যখন তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছেন। তারা হাসিমুখে বলছেন ভালো আছি। আমি অবাক হয়ে গেলাম।

এত কষ্ট এত ব্যথা তাদের। একটা মানুষ জালিমদের আক্রমণে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছে। এর পরও হাসতে হাসতে বলছে আমরা ভালো আছি। তাদের জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে হাসতে পারো ভাই? তারা বলছে আল্লাহ তায়ালা তৌফিক দিয়েছেন এ জন্যই হাসি। এর কারণ কি বলব, আল্লাহ তো জীবন একটাই দিয়েছেন। এই জীবনটা যে জাতির জন্য আল্লাহর সামনে পেশ করতে পেরেছি, তাই আমি হাসি। এই হাসি সত্যিকারের হাসি।
আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওরা হাসছে, আর আমি কাঁদি। কেমন করে একটা দেশের শাসক তার দেশের গোটা যুব সমাজের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেল। ১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে চলে গেল। হুকুম করল গুলি কর, আমার গদি রক্ষা কর। এভাবে রক্ষা হয় না। তারা মনে করেছে তারাই সব। তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করেছিল। আল্লাহর ভয় মন থেকে উঠে গিয়েছিল। তাই গুলির নির্দেশ দিতে পেরেছিল। শুধু আইনি শৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দেওয়া হয়নি। হেলমেট, মুগুর বাহিনীকেও অস্ত্র হাতে তারা নামিয়ে দিয়েছে।
বর্তমান সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের মানুষ ঐকমত্যের ভিত্তিতেই ক্ষমতায় বসিয়েছে। আমরা তাদের বলব ১৮ কোটি মানুষকে তাদের সম্মান করতে হবে। এই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে এসব জঞ্জাল পরিষ্কার করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে।
জামায়াত আমির বলেনÑ আপনারা গণমাধ্যমেই দেখেছেন, ৭-৮ বছরের শিশু পথে নেমে এসেছিল, সেদিন হাতে ইট নিয়ে। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো কেন নেমে এসেছে, সে বলেছিল স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে নেমে এসেছি।

আমার ভাইদের তারা গুলি করে হত্যা করেছে। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো গুলি করে হত্যা করলে, বলে আমি শহীদ হয়ে যাব। মা বাবাকে বলে এসেছি, আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি শহীদ হয়ে গেলে শহীদদের সঙ্গে দাফন করে দিবে। ৭-৮ বছরের শিশু স্বৈরাচারকে চিনতে পারল, তারা নিজেদের চিনতে পারল না। ইজ্জত-ক্ষমতা দেওয়ার মালিক আল্লাহ তা কেড়ে নেওয়ার মালিক ও আল্লাহ তায়ালা যারা জুলুম করে তাদের একটি সীমা পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ দেয়। এরপর আল্লাহর দৃষ্টিতে যখন সীমা অতিক্রম করে তখন তিনি ধরেন।

×