ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১

আট জাতীয় দিবস বাতিল হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:২৪, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

আট জাতীয় দিবস বাতিল হচ্ছে

বাতিল করা হচ্ছে আট জাতীয় দিবস

বাতিল করা হচ্ছে আট জাতীয় দিবস। এর মধ্যে পাঁচটি দিবসই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দিবসগুলো হলো- ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন।
১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভাই শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট শেখ হাসিনার মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস। এ ছাড়া ১৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেল দিবস, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস ও ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস। বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।  
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন বা পালনের পরিপত্র থেকে এই দিবসগুলো বাতিল করা হবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়। এর আগে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত কার্যকরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন এ দিবসগুলো বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এ বিষয়ে বুধবার সচিবালয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৭ মার্চ গুরুত্বপূর্ণ হলেও তা জাতীয় দিবসের গুরুত্ব পায় না। আরও কোনো দিবস বাতিলের প্রয়োজন মনে হলে করা হবে। এ ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানের গুরুত্ব হিসেবে কোনো কোনো দিবস প্রতিষ্ঠিত করা হবে। যেসব জাতীয় দিবস বাতিল করা হচ্ছে, সেগুলো আওয়ামী লীগ চাপিয়ে দিয়েছিল। সরকার মনে করেছে সেগুলো অগুরুত্বপূর্ণ, তাই বাতিল করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ ॥ রাষ্ট্রীয় আচার থেকে ঐতিহাসিক ৭ মার্চসহ আটটি জাতীয় দিবস বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে আওয়ামী লীগের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমাদের জাতীয় ইতিহাস থেকে এসব দিবসের তাৎপর্য কোনো বিবেচনাতেই অস্বীকার করা যাবে না। রিসেট বাটন চেপে কেউ আমাদের ‘দাবায়া রাখতে পারবা না’।

আমাদের প্রত্যাশা হিংসা ও বিদ্বেষের বিপরীতে সবার যাবতীয় ও জাতীয় ভুলগুলো অন্ধকারে হারিয়ে যাক, আমাদের অন্যায়গুলো বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াক এবং সব অপশক্তি বিনাশের জন্য আমাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হোক ‘সত্য বল সুপথে চল’।
বুধবার ফেসবুকে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড পেজে দলটির দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের প্রতিহিংসামূলক আচরণের শিকার হচ্ছে মুক্তির লড়াইয়ের সব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও প্রতীকী স্থাপনাগুলো। এসবের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত জাতীয় দিবসগুলো রাষ্ট্রাচার থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘অদক্ষতা ও অনাচারে মানুষ অতিষ্ঠ’ দাবি করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ বলেছে, মানুষ এখন বলতে শুরু করেছে-আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা।
বিবৃতিতে রিসেট বাটন চেপে বাঙালির জাতীয় ইতিহাস মুছে ফেলার মাধ্যমে বিভেদ ও প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তির রাজনীতিকে পরিপুষ্ট করতে চাওয়ার অভিপ্রায় বাঙালি জাতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির দাবি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সমগ্র জাতি ও মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে হীন পদক্ষেপের উপযুক্ত জবাব দেবে।
এতে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার শুরু থেকেই মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও চেতনাবিরোধী কাজ করে আসছে। সুপরিকল্পিতভাবে মানবিক মূল্যবোধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনষ্টে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে। তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের শত্রুজ্ঞান করছে। জাতীয় রাজনীতি থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নির্মূল করতে রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার করছে, মিথ্যা মামলায় গণগ্রেপ্তার চালাচ্ছে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহকর্মীরা, দেশের মুক্তিকামী জনতা ও তাঁর পরিবারের অবদান অমোচনীয়। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, সরকারের প্রতিহিংসামূলক আচরণের শিকার হচ্ছে মুক্তির লড়াইয়ের সব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও প্রতীকী স্থাপনাগুলো। এসবের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত জাতীয় দিবসগুলো রাষ্ট্রাচার থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের বিদ্বেষে বাতিল হতে যাওয়া দিবসগুলো বাঙালি বরাবরের মতো সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে পরম মমতায় পালন করে দৃঢ়ভাবে বলে উঠবে, ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে’।

×