ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১

চাঁদাবাজির জন্য নয়; নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে সিন্ডিকেটের কারণে

প্রকাশিত: ১৪:৪৮, ১৬ অক্টোবর ২০২৪; আপডেট: ১৫:২৩, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

চাঁদাবাজির জন্য নয়; নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে সিন্ডিকেটের কারণে

আলোচনা সভা। ছবি: জনকণ্ঠ

পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির জন্য নয়; নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বিগত সরকারের আমলের ন্যায় বর্তমানেও বহাল তবিয়তে থাকা সিন্ডিকেটের কারণে। এই সিন্ডিকেট নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম মনগড়া বৃদ্ধি করছে। এতে বিপাকে পড়ছেন ভোক্তারা। 

মঙ্গলবার বিআরটিএ চেয়ারম্যানের সম্মেলন কক্ষে ‘দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ সম্পর্কে এক আলোচনা সভায় বিষয়টি উঠে এসেছে। আলোচনা সভায় বিআরটিএ কর্মকর্তা ছাড়াও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ও বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তা, ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তারাও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন। 

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত ও কার্যকরী সভাপতি মো. আব্দুর রহিম বক্স দুদু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির খান। 

তারা বলেন, ঢাকায় নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিআরটিএ মিটিং ছিল। সেখানে আমরা বলেছি, এখন পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি হচ্ছে না। পুলিশ, শ্রমিক নেতা কিংবা দলীয় কোন পারপাসে চাঁদাবাজি নেই। 

ট্রাক ভাড়াও আগের চেয়ে কমেছে। তারপরও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন? এটা আসলে সিন্ডিকেটের কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত সরকারের আমলে বড় বড় যে সকল সিন্ডিকেট ছিল, তারা এখনো রয়েছে। আর তাদের মনগড়া সিদ্ধান্তের কারণেই নিত্যপণ্যের দাম দিনকে দিন বাড়ছে। এ বিষয়ে উপস্থিত সকলে একমত পোষণ করেছেন। 

ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির খান বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। সংগঠনটির সাবেক সভাপতি শাজাহান খান ও সাধারণ সম্পাদক মো. ওসমান আলী সংগঠনের ব্যানারে টার্নিমালে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম করতেন। বিগত সময়ে বাসে পেট্রল বোমায় যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক হতাহতের ঘটনার জন্য সম্পন্ন বিএনপিকে দায়ী করে বইও বের করেছেন। সেসব বই পরিবহন শ্রমিকদের প্রচার করতে বাধ্য করা হয়েছে। তাদের এমন কর্মকান্ডের কারণে অনেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনকে রাজনৈতিক সংগঠন মনে করতেন। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই দুই নেতা আত্মগোপনে চলে যান।  
তখন যুবদল, ছাত্রদলের নেতারা বাস টার্মিনালগুলোতে প্রবেশ করে এবং আওয়ামী লীগ আখ্যা দিয়ে ফেডারেশনের অফিস দখলের পায়তারা করে। আমাদের কয়েকজনের নেতৃত্বে অফিসগুলো রক্ষা পায়। সংগঠনের মূল দুজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি না থাকায় পরবর্তীতে ৮টি বিভাগের ও ঢাকার সব ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সর্বসম্মতিক্রমে এবং সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমাদের দুজনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

 তিনি বলেন, তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী কল্যাণ তহবিলের কথা বলে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের পরিবহন শ্রমিকদের কাছ থেকে ১ কোটি ৪৫ লাখ আর ফুলবাড়িয়া শ্রমিকদের কাছ থেকে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। সংগঠনের একাউন্টে না নিয়ে এসব টাকা তিনি ব্যক্তিগত একাউন্টে নেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর সায়েদাবাদ টার্মিনালের শ্রমিকরা এসব টাকার জন্য এসে মিছিল করেছেন। কিন্তু ওসমান আলীর হদিস মিলেনি। এতোকিছুর পরও ওসমান আলী আত্মগোপনে থেকে পরিবহন খাতে অরাজকতা সৃষ্টির পায়তারা করছে। কিন্তু আমরা যা করব, শ্রমিকদের স্বার্থেই করব, এটি পরিবহন শ্রমিকদের আশ্বাস্থ করতে চাই। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছ থেকে টার্মিনাল কিংবা ফেরীতে যেই পরিমাণ টাকা নেওয়ার কথা ছিল, এর চেয়ে বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন এবং ফেরী ঘাট ইজারা নেওয়া ব্যক্তিরা মনগড়া টাকা আদায় করছে। সবজির গাড়ি থেকে ইজারাদার অধিক টাকা নিচ্ছে। এতে হয়তো সবজির দাম কিছুটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিআরটিএ, বিআরটিসি সহ সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখা উচিত। আবার পৌরসভার নামেও বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে। আমরা এসব বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে আসছি।

 

ফজলু/এসআর 

×