ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১

পদোন্নতির দাবিতে শিশু বিশেষজ্ঞদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘেরাও

প্রকাশিত: ১৪:২৯, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

পদোন্নতির দাবিতে শিশু বিশেষজ্ঞদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘেরাও

কর্মসূচি

নিজ নিজ কর্মস্থলে থেকেই পদোন্নতির দাবিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘেরাও কর্মসূচি পালন করছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর মহাখালীতে অধিদপ্তরের নতুন ভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন তারা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সময়ে তাদের কর্মসূচি চলছিলো। এসময় তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেন তারা।

স্মারকলিপিতে চিকিৎসকরা বলেন, ইউনিসেফ এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী- বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১৮ বছরের কম প্রত্যেকেই শিশু, এর শতকরা সংখ্যা শতকরা ৪৫ ভাগ। তারা শৈশব থেকে কৈশোর পর্যন্ত বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলা করে পরিনত হয়। বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকগণ (পেডিয়াট্রিশিয়ান) এই শিশুদের স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য অংশীদার। 

তারা শিশুদের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করার পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা এবং সুস্থ জীবনধারা প্রচারের কাজেও যুক্ত থাকেন। জরুরী চিকিৎসা সেবা ও জটিল রোগ নির্ণয়সহ সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকদের ভূমিকা অপরিহার্য, যা শিশুদের সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠা নিশ্চিত করে।

ক্লিনিক্যাল দায়িত্বের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকগণ (পেডিয়াট্রিশিয়ান)  চিকিৎসা শিক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তারা ভবিষ্যৎ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি ও গবেষণা কার্যক্রমে; স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে; শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান প্রদান করেন। মেন্টরশিপ এবং হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকরা (পেডিয়াট্রিশিয়ান) পরবর্তী প্রজন্মের চিকিৎসকদের গঠন করতে MBBS, DCH, MD এবং FCPS কোর্সের শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে শিক্ষা ও হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দান করেন, যাতে তারা পরবর্তীতে সঠিকভাবে চিকিৎসা প্রদান করতে সক্ষম হন।

জনসংখ্যার ৪৫% শিশু হলেও সরকারি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যার মাত্র ১৩% শিশু রোগীর জন্য বরাদ্দ। ফলে প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের অন্তবিভাগে শয্যা সংখ্যার কয়েকগুণ বেশী শিশু রোগী ভর্তি থাকে, বহির্বিভাগেও থাকে উপচে পড়া ভিড়। জনবলের প্রকট ঘাটতি সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকগণ রোগীদের যথাযথ সেবা দেবার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকেন। উল্লেখ্য যে ঢাকা তথা বাংলাদেশে কোন সরকারি শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট নাই।

বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকরা গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য অবদানের পরও, তারা চাকরি ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার। বৈষম্য বিরোধী সফল আন্দোলনের পরে এ ধরনের বৈষম্যের অবসান জরুরী বলে আমরা মনে করি। দিনদিন শিশুরোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি হলেও সে তুলনায় পর্যাপ্ত সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজসমূহে পদ সৃষ্টি করা হয়নি। অপর্যাপ্ত পদ সংখ্যা, অনিয়মিত এবং ত্রুটিপূর্ণ পদোন্নতি প্রক্রিয়ার ফলে বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকগণ কাঙিক্ষত পদোন্নতি পাচ্ছেন না। 

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ২০ তম বিসিএস এর শিশু বিশেষজ্ঞ এখনো ষষ্ঠ গ্রেডের সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত, যেখানে কোন কোন বিষয়ে একই বিসিএস এর কর্মকর্তাগণ অধ্যাপক পদে কাজ করছেন। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে ২০ তম বিসিএস এর কর্মকর্তাগণ অতিরিক্ত সচিব/ যুগ্ম সচিব পদে কর্মরত। কোন কোন বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসক ১০-১৫ বছর চাকরি করেও এখনো মেডিক্যাল অফিসার পদে কর্মরত আছেন। বর্ণিত বৈষম্যের ফলে বিশেষজ্ঞ শিশু  চিকিৎসকগণ সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন- যা কর্মক্ষেত্রে নানাবিধ ও চরম হতাশার জন্ম দিয়েছে।

স্মারকলিপিতে তারা আরও বলেন,সম্প্রতি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের পদোন্নতি যোগ্য সকল কর্মকর্তাকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধাসহ ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হহেছে।
বর্ণিত অবস্থার প্রেক্ষাপটে আপনার কাছে আমাদের দাবিঃ

১. পদোন্নতি: বিসিএস এর ব্যাচ ভিত্তিক
জুনিয়র কনসালটেন্ট, সহকারী অধ্যাপক, সিনিয়র কনসালটেন্ট, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক পদে দ্রুত পদোন্নতি। যোগ্য সকলকে বিসিএস এর সিনিয়রিটি অনুসারে অনতিবিলম্বে কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি প্রদান করা। 

২. পদায়ন: প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পদোন্নতি প্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকগণকে ওএসডি হিসাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সংযুক্ত করে বা ইনসিটু পদায়ন করা। উল্লেখ্য যে, চিকিৎসকগণ অনেক বছর ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত অবস্থায় ফিডার পদে দায়িত্ব পালন করছেন। বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির ফলে তাঁদের মূলবেতন পরবর্তী পদোন্নতির ফলে প্রাপ্যপদের মূলবেতনের নিম্নধাপ অতিক্রম করেছে অথবা তার কাছাকাছি আছে। তাই সবাইকে পদোন্নতি দেওয়া হলে সরকারের আর্থিক ব্যয় তেমন বাড়বে না বলে প্রতীয়মান হয়।

৩. পদ সৃষ্টি: স্বল্পতম সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালের শিশু বিভাগে মেডিক্যাল অফিসার থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত নতুন পদ সৃষ্টি করা। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ শিশু বিশেষজ্ঞ সমিতি এর পক্ষ থেকে পদ সৃষ্টির প্রস্তাবনা ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। 

৪. ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ পেডিয়াট্রিকস (NIP): অন্যান্য ইনস্টিটিউটের মত ঢাকায় একটি সরকারি 'ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ পেডিয়াট্রিকস' (NIP) স্থাপনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। 

এই পদক্ষেপগুলি গ্রহণের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবাকে আরও উন্নত করতে পারি। এই উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নিতে এবং নিশ্চিত করতে আমরা আপনার বিভাগের কার্যকর উদ্যোগ চাই এবং প্রয়োজনে সরাসরি আলোচনা করতে চাই।

 এসআর

×