ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১

দুর্যোগে নারীর সুরক্ষায় সর্বোত্তম পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ নাগরিক সমাজের

প্রকাশিত: ১৬:০১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

দুর্যোগে নারীর সুরক্ষায় সর্বোত্তম পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ নাগরিক সমাজের

ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন। 

যেকোন দুর্যোগে নারীর সুরক্ষায় বিষয়টি বরাবরই থাকে অবহেলিত। অথচ, এসময় নারীরাও শারীরিক, মানসিক এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা পাওয়ার পূর্ণ অধিকার রাখেন। ন্যূনতম সচেতনতা-সংবেদনশীলতার অভাব এবং পাশাপাশি জরুরি সেবা-সহায়তা না পাওয়ার কারণে তারা দীর্ঘ মেয়াদে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এ কারণে দুর্যোগে যেকোন ধরণের ত্রাণ ও সেবা কার্যক্রম পরিচালনার সময় নারীর সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনার তাগিদ দেন অধিকারভিত্তিক নাগরিক সমাজ প্রতিনিধিবৃন্দ। 

আগামীকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবসকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদ্যাপন জাতীয় কমিটি সোমবার (১৪ অক্টোবর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। 

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দুর্যোগে একজন নারীর শারিরীক, আর্থিক এবং মানসিক ক্ষতির বিষয়টিও উপস্থিত থাকে। কিন্তু সেটাকে অদৃশ্য করে রাখা হয়। একারণে দুর্যোগে ও দুর্যোগ পরবর্তী সংকটকে চিহ্নিত করে সেসব নিরসনে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নারীবান্ধব ও সংবেদনশীল পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। 

আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদ্যাপন জাতীয় কমিটির সভাপ্রধান শামীমা আক্তারের সভাপতিত্বে এবং ফেরদৌস আরা রুমীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আয়োকজকদের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশেনের কর্মসূচি কর্মকর্তা খাদিজাতুল কুবরা। এতে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আরও বক্তব্য রাখেন কমিটির সদস্য মথুরা ত্রিপুরা (খাগড়াছড়ি), তোফাজ্জল সোহেল (হবিগঞ্জ), সাইদ (বগুড়া), মো. খলিলুর রহমান (ঝালকাঠি), আইনুন নাহার (ময়মনসিংহ), রত্না বর্মন (খুলনা), ফিরোজা বেগম (লালমনিরহাট), জাফরুল আলম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), স্বর্ণা (বিএনএনআরসি), মোস্তফা কামাল আকন্দ প্রমূখ।

মূল বক্তব্যে খাদিজাতুল কুবরা বলেন, এবারের পূর্বাঞ্চলের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫১ লাখের বেশি। যেকোন দুর্যোগে নিম্ন আয়ের কিংবা প্রান্তিক মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে তাদের মধ্যে শিশু ও নারীরা আরো বেশি দুর্ভোগে পড়ে। এবারের বন্যায় নারীরা গবাদিপশু ও জিনিসপত্র রক্ষার জন্য অনেকে জন্য রাতের পর রাত ছাদে এবং নৌকায় কাটায়। শিশুরা ভেজা কাপড়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এপরিস্থিতিতে নারীদের মাসিক স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। পরিষ্কার পানি এবং স্যানিটারি প্যাডের অভাবে তারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিন কাটায়। প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা বা চিকিৎসাসেবা অপ্রতুল থাকায় গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়নি। এদিকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিবেশও ছিল খুবই প্রতিকূল। সীমিত জায়গা, মেয়েদের পৃথক টয়লেট না থাকায় এবং বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ বেড়ে যায়। একইসাথে এটা নারীদের নিরাপত্তা এবং মর্যাদার ওপর ব্যাপক মাত্রায় প্রভাব ফেলে।

মথুরা ত্রিপুরা বলেন, চিকিৎসকরা মনে করছেন পূর্বাঞ্চলে এবারের বন্যায় ভয়, সম্পদ হানির কারণে মন খারাপ, পুষ্টিকর খাদ্য ও যতেœর অভাব এবং চিকিৎসাসেবা ব্যাহত ঐ অঞ্চলের নারীদের গর্ভপাত হয়েছে। তিনি দুর্যোগে গর্ভবতী নারীর জরুরী সেবা নিশ্চিত করার আহবান জানান। ফিরোজা বেগম বলেন, কখনো কখনো বেসরকারিভাবে বিচ্ছিন্ন কিছু উদ্যোগ দেখা গেলেও নারীর জন্য দুর্যোগ পরবর্তী সমন্বিতভাবে কোন সরকারি-বেসরকারি সেবা (শারিরীক, মানসিক, প্রজননস্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সেবা) লক্ষ্য করা যায় না।

তোফাজ্জল সোহেল বলেন, সাইক্লোন সেন্টারে উপযুক্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকা, স্বস্তিকর পরিবেশ না থাকার কারণে তারা মানসিক চাপের মধ্যে থাকে এবং মন মরা হয়ে দিন কাটায়। এজন্য দুর্যোগের সময় মানসিক চাপ ও ট্রমা থেকে মুক্তির জন্য নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আইনুন নাহার বলেন, দুর্যোগের সময় নারী ও কিশোরীদের মাসিককালীন স্বাস্থ্য সেবা ও পণ্য (স্যানিটারি ন্যাপকিন) বিতরণ এবং ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে নারী ও কিশোরীদের সচেতন করতে হবে।

ফেরদৌস আরা রুমী বলেন, এ ধরনের দুর্যোগ পরিস্থিতি অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয় কমিউনিটি এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সহযোগিতায় নারী ও কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে ব্যাপকভিত্তিক সচেতনতা কার্যক্রম চালাতে হবে। শামীমা আক্তার বলেন, নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারকে কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য টেকসই এবং কার্যকরী সেবা প্রদানের জন্য গবেষণার ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণের করতে হবে।  

আয়োজকদের পক্ষ থেকে মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, দেশের ৫০টির বেশি জেলায় উদ্যাপন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও সারাদেশে র‌্যালি, সেমিনার, মানববন্ধন, মেলা আয়োজন এবং গ্রামীণ নারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য সম্মাননা প্রদানসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদ্যাপন করা হচ্ছে। 

 

এম হাসান

×