ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

দুর্গোৎসবের মঞ্চে ইসলামি গান, চলছে আলোচনা-সমালোচনা

প্রকাশিত: ০১:৩৫, ১১ অক্টোবর ২০২৪

দুর্গোৎসবের মঞ্চে ইসলামি গান, চলছে আলোচনা-সমালোচনা

দুর্গোৎসবের মঞ্চে ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেছেন একদল তরুণ।

চট্টগ্রামে শারদীয় দুর্গোৎসবের মঞ্চে ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেছেন একদল তরুণ। অভিযোগ উঠেছে, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাংস্কৃতিক সংগঠন চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সদস্যরা এটি করেছেন। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। 

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে নগরের জেএম সেন হলের শারদীয় দুর্গোৎসবের মঞ্চে এ ঘটনা ঘটে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পূজা উদযাপন কমিটির এক নেতার আমন্ত্রণে সংগঠনটি ওই পূজামণ্ডপে গান করতে যায়। তবে গান গাওয়ার পরে সনাতন ধর্মের মানুষদের মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তারা ওই সংগঠনটিকে জামায়াত ইসলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে দাবি করছেন। যদিও জামায়াত জানিয়েছে, তারা এই গান করার বিষয়ে কিছুই জানেন না, গানের দলটিও তাদের কোনও অঙ্গ সংগঠন নয়।

প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই গানের দলের ছয় সদস্য গান পরিবেশন করতে মঞ্চে ওঠেন। সংগঠনটি শাহ আবদুল করিমের লেখা বিখ্যাত গান ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ এবং চৌধুরী আবদুল হালিমের লেখা ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’-শীর্ষক গান দুটি পরিবেশন করে। এর মধ্যে শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান-গানটির ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, ‘আমাদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের অনুমতি নিয়ে ওই গানের দলটি পূজামণ্ডপে এসে গান পরিবেশ করেছে বলে জেনেছি। তবে ওই সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না।’ সংগঠনটি জামায়াতের কিনা এমন প্রশ্নে হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার জানা নেই।’

চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামানও দাবি করেছেন পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণেই তাদের একটি দল পূজামণ্ডপে গান করতে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘পূজা উদযাপন পরিষদের সজল বাবু আমাদের দাওয়াত দিয়েছিলেন। তিনি ফোন করে বলেন আপনারা একটু আসেন। আপনাদের একটু সুযোগ দেবো। কিছু দেশাত্মবোধাক গান গাইবেন। সে আমন্ত্রণে গিয়ে আমাদের দলটি দুটি সম্প্রীতির গান করে। কিন্তু এটি নিয়ে একটা পক্ষ প্রচারণা চালাচ্ছে ষড়যন্ত্র করতেই আমরা গান করতে গিয়েছি। আমরা তো জোরপূর্বক কিছুই করিনি। দাওয়াত পেয়েই গিয়েছিলাম।’

চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি জামায়াতের কোনও গানের দল কিনা এমন প্রশ্নে সেলিম জামান বলেন, ‘এটি জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনও সংগঠন নয়। শুদ্ধ সাংস্কৃতিক চর্চার উদ্দেশে ২০১৫ সালে আমাদের গানের দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়।’

মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ বলেন, ‘এই গানের দলের সঙ্গে জামায়াতের কোনও সম্পর্ক নেই। গান করার সময় জামায়াতের কেউও অনুষ্ঠানস্থলে ছিলেন না।’

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) লিয়াকত আলী বলেন, ‘যারা ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেছেন তারাও পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে এসেছিলেন। পূজা উদযাপন পরিষদের অনুমতি নিয়ে তারা সেখানে ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেছেন। তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হইচই হচ্ছে। কিন্তু এখানে কোনও সমস্যা নেই। তবু আমরা এ বিষয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করছি। তারা অভিযোগ দিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পাঁচ জন মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’ শিরোনামে ইসলামি সংগীত পরিবেশন করছেন। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পরে ফেসবুকে একাংশ এটাকে ফেক দাবি করে। পরে এর সত্যতা বেরিয়ে আসে। 

এএফপির ফ্যাক্টচেক ইউনিটের কদরুদ্দিন শিশির ফেসবুকে লিখেছেন, ‌‘চট্টগ্রামের জেএম সেন হল-এ পূজামণ্ডপে গানের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানকার প্রকৃত ঘটনা জানতে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক এবং পূজা কমিটির এক নেতার সঙ্গে কথা বলেছি। ঘটনা হলো পূজা আয়োজক কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত স্থানীয় একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে আমন্ত্রণ জানান। একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই সংগঠনটি জামায়াতপন্থি সাংস্কৃতিক কর্মীদের সংগঠন। তারা স্টেজে উঠে দুটি গান গায়: ১. আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম। ২. শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম। তবে আয়োজক কমিটির সভাপতি আশিস দে এবং অন্য নেতারা জানিয়েছেন কমিটির বাকি সদস্যরা এই সাংস্কৃতিক সংগঠনের আমন্ত্রণের বিষয়ে জানতেন না। আশিস দে এই ঘটনায় স্টেজে উঠে সজল দত্তকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন বলে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার প্রতিনিধি জুবায়ের চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন।’ 

অধ্যাপক সুমন রহমান লিখেছেন, ‘দুইটা ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে। প্রথমটা পুরো অনুষ্ঠানের। কিন্তু প্রথম গানটা ছাড়া। ওই ভিডিওতে প্রথম গানটা ছিল শাহ আবদুল করিমের। দূর থেকে ধারণ করা ভিডিওতে লিপসিং খেয়াল করা কঠিন ছিল। ওই কালেকশনে ইসলামি গানটা ছিল না। কিন্তু যেহেতু পুরো অনুষ্ঠানটি ছিল। ওখানে খুঁজে না পেয়ে আমাদের টিম ধরে নিয়েছিল ইসলামি গানটা এডিটেড। পরবর্তীতে আমরা প্রথম গানটার একটা পরিষ্কার ভিডিও পাই। সেখানে লিপসিং খেয়াল করা সম্ভব হয়। একই অনুষ্ঠানের ভিডিও। কিন্তু এই গানটা ওই এনথোলজি ভিডিওতে নাই। আলাদাভাবে ছড়াচ্ছে। এটা ইসলামি গানেরই ভিডিও। একই অনুষ্ঠানেরই। আমাদের ফাইনাল জাজমেন্ট: ভিডিওটা অরিজিনাল, এডিটেড নয়।’

বারাত

×