ঝুঁকির সম্মুখীন প্রান্তিক নারী ও মেয়েদের জীবনমান উন্নয়নের উদ্যোগ
গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার অর্থায়নে ঝুঁকির সম্মুখীন প্রান্তিক নারী ও মেয়েদের জীবনমান উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে ‘উইমেন্স এম্পাওয়ারমেন্ট : উইমেন্স ভয়েস অ্যান্ড লিডারশিপ বাংলাদেশ প্রজেক্ট’ শিরোনামে সম্প্রতি এক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এই প্রকল্পটি গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার অর্থায়ন এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (গঔঋ) কর্তৃক বাস্তবায়িত ডঠখ প্রকল্পের ফলাফলগুলো তুলে ধরে। এই সম্মেলন তৃণমূল পর্যায়ের নারী, মেয়ে, হিজড়া এবং ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের জীবনের অনুপ্রেরণামূলক গল্পগুলো তুলে ধরে এবং তাদের জীবনের সকল প্রতিকূলতা, আকাক্সক্ষা এবং অর্জনের গল্প তারা শোনায়।
ডঠখ প্রকল্পটি গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার নেয়া একটি বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ। মার্চ ২০১৯ থেকে গঔঋ বাংলাদেশে উইমেন্স ভয়েস অ্যান্ড লিডারশীপ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার মধ্যে স্থানীয় নারী অধিকার সংগঠনগুলোকে (ডজঙ) অনুদান প্রদান এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির বিভিন্ন কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যাতে তারা তাদের এলাকার প্রান্তিক এবং ঝুঁকির সম্মুখীন নারী ও মেয়েদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায়, ডঠখ-ই স্থানীয় নারী অধিকার সংগঠন (ডজঙ)/সম্প্রদায় ভিত্তিক সংগঠনগুলোকে (ঈইঙ) বিশেষত যারা প্রান্তিক ও দুর্বল- তাদের অধিকার প্রয়োগে সহায়তা করার ক্ষমতা জোরদার করছে।
প্রকল্পটির কার্যকলাপগুলোর মধ্যে রয়েছে : (১) নির্বাচিত স্থানীয় নারী অধিকার সংগঠনগুলোকে বহুবর্ষী অর্থায়ন প্রদান করা; (২) বহুবর্ষী অর্থায়নের জন্য নির্বাচিত সংগঠনগুলোর কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা; (৩) নিজেদের মধ্যে নেটওয়ার্ক এবং জোট শক্তিশালী করা এবং (৪) গৃহীত বিভিন্ন উদ্ভাবনী ধারণা, সুযোগ ও বিচ্ছিন্ন কর্মকা-গুলোকে একত্রিত করে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের নিমিত্ত স্থানীয় সংগঠনগুলোর জন্য ক্ষুদ্র স্বল্পমেয়াদি অর্থায়ন। প্রকল্পটির সময়কাল ছিল ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ থেকে ৩১ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত, এবং ২০টি জেলায় এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। শাহীন আনাম, নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নারীবাদকে সংজ্ঞায়িত করে বলেন, ‘আমার কাছে মানুষের সমঅধিকারে প্রতি সকলের বিশ্বাসই হলো নারীবাদ।
পুরুষকে আমাদের এই জেন্ডার সমতায়নের যাত্রায় সহযাত্রী হিসাবে গণ্য করতে হবে।’ এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন মো. সাইদুর রহমান, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (গ্রেড-১); ডেবরা বয়েস, বাংলাদেশে অবস্থিত কানাডা দূতাবাসের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স এবং রাশেদা কে চৌধুরী, ক্যাম্পেন ফর পপুলার এডুকেশনের (ঈঅগচঊ) নির্বাহী পরিচালক।
প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা অংশগ্রহণকারীরা তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বলেন। প্রধান অতিথি ফরিদা আখতারের ভাষ্যমতে এই গল্পগুলো, প্রেরণাদায়ক এবং শক্তিশালী। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা-পরিচয়ের নারীদের সামনে আনার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যদি মানুষের বিভিন্নতা অনুযায়ী সমস্যাগুলো সমাধান না করে শুধু একক উপায়ে নারীদের সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা হয় তবে তা বৈষম্য দূর করতে যথেষ্ট নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘নারী শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে স্কুলগুলোতে সুষম টিফিন নিশ্চিত করা দরকার, যা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে তিনি কাজ করছেন।’
তাঁর বক্তব্যে তিনি শক্তভাবে বাল্যবিবাহ ও যৌতুকের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘বাল্যবিবাহ নারী ও শিশু পাচারের পিছনে অন্যতম কারণ এবং যার যার অবস্থান থেকে এগুলো রুখে দাঁড়ানো আবশ্যক।’ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন মো. সাইদুর রহমান, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (গ্রেড-১) যার বক্তব্যের মূল কথা ছিল নারী ক্ষমতায়নে পুরুষদের এগিয়ে আসার কথা। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি এই প্রকল্পটিকে সফল হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি উল্লেখ করেন বাল্যবিবাহ উচ্চ শিক্ষায় নারীদের সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রধান কারণ এবং বাল্যবিবাহ রোধে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন নারী এবং পুরুষ একে অপরকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
সম্মেলনের আরেক বিশেষ অতিথি, ক্যাম্পেন ফর পপুলার এডুকেশনের (ঈঅগচঊ) নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী তার বক্তব্য শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া, আহত এবং নিহত হওয়া নারীদের স্মরণ করার মাধ্যমে। তিনি বলেন, ‘অংশগ্রহণ আর অংশীদারিত্ব এক নয়। বর্তমানে অনেক অংশগ্রহণকারী নারী আছেন। কিন্তু তাদের অংশীদারিত্ব কতটুকু? আমাদেরকে সমতাএবং ন্যায্যতা আলাদাভাবে বুঝতে হবে। যদি এটি স্পষ্ট না হয়, নারী ক্ষমতায়ন সঠিকভাবে বোঝা এবং নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যাবে।
বাংলাদেশে অবস্থিত কানাডা দূতাবাসের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স, ডেবরা বয়েস, যিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন এই নারী নেত্রীদের ভূমিকা কেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তোলার মাধ্যমেই নারীর বিরুদ্ধে বৈষমের বিরোধিতা করতে হবে যা আমরা সাম্প্রতিক সময় থেকে শিক্ষা নিতে পারি কারণ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়তে চাইলে একসঙ্গে আওয়াজ তোলার বিকল্প নেই।