ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১

আজ মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:১৬, ১১ অক্টোবর ২০২৪

আজ মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা

আজ মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা

শারদীয় দুর্গোৎসব জমে উঠেছে। পাঁচদিনের এই উৎসবকে ঘিরে সারাদেশে এখন আনন্দমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সর্বত্র উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। শারদীয় দুর্গোৎসবের ™ি^তীয় দিন বৃহস্পতিবার মহাসপ্তমীতে ভক্ত, পূজারী ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠেছিল সারাদেশের ৩১ হাজার ৪৬১টি পুজোম-প। ম-পে ম-পে এদিন ছড়িয়ে পড়েছিল উৎসবের বারতা। 
তৃতীয় দিন আজ শুক্রবার মহাষ্টমী ও সন্ধিপুজা। রামকৃষ্ণ মিশনসহ বেশ কয়েকটি পূজাম-পে একইসঙ্গে কুমারী পূজাও আয়োজিত হবে। 
মহাসপ্তমীর দিনে বৃহস্পতিবার সকালে ম-পে ম-পে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। সকাল ৭টা ৫৩ মিনিটের মধ্য দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন ও সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভ অনুষ্ঠিত হয়। এর পর দেবীর সপ্তমীবিহিত পূজা শেষে আয়োজন করা হয় পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতি। অনেক ম-পেই ছিল আরতি, স্বেচ্ছায় রক্তদান, দরিদ্র্যদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ, নৃত্যনাট্য, ভক্তিমূলক সংগীত, নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য আয়োজনও।   
সারাদেশের মতো রাজধানী ঢাকার পুজোম-পগুলোও এদিন ঢাক-ঘণ্টার বাদ্যি-বাজনা আর ভক্তদের পূজা-অর্চনায় মুখর হয়ে ওঠে। সরেজমিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি ম-প ঘুরে সর্বত্র উৎসবের ছোঁয়া দেখা গেছে। ম-পে ম-পে মহাসপ্তমীর পূজা 
দেখতে আসা নানা বয়সী দর্শনার্থী, পুজারী ও ভক্তদের ভিড় ছিল ব্যাপক। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর এ ভিড় ছিল উপচেপড়া। উৎসবে যোগ দিয়েছেন অন্য ধর্মের মানুষও। এতে ম-পগুলো বাঙালির সার্বজনীন উৎসবের মেলাঙ্গনে রূপ নেয়। আজ শুক্রবার মহাষ্টমীর দিন দর্শনার্থী, পূজারী ও ভক্তদের এ ভিড় আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় পূজাম-প হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ^রী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির ম-পে ছিল উপচেপড়া ভিড়। আজ মহাষ্টমীর দিনে সেখানে ১০ হাজার ভক্তের মধ্যে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে।  
মহাষ্টমীতে আজ শুক্রবার সকাল ৭টা ১৭ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহাষ্টমী কল্পরাম্ভ ও মহাষ্টমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর পর পুষ্পাঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণ শেষে সন্ধ্যা ৬টা ৫৩ মিনিটের পর সন্ধি পূজা অনুষ্ঠিত হবে। রামকৃষ্ণ  মিশন ও মঠসহ কয়েকটি পূজাম-পে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত  পঞ্জিকামতে দুর্গাপূজা আয়োজনের কারণে এসব ম-পে পূজার সময়ের হেরফের ঘটবে কিছুটা। 
তবে আজকের দিনের প্রধান আকর্ষণই থাকবে কুমারী পূজা। প্রথমে রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পূজা করবে না বলে জানালেও পরে প্রশাসনের আশ্বাসের পর সেই ঐতিহ্য ধরে রাখার কথা জানানো হয়। আজ সকালে রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পুজামণ্ডপে এই কুমারী পুজা অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য অল্পবয়সী একটি মেয়েকে কুমারী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে, যাকে দেবী দুর্গার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 
শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুসারে তাঁর একটি নামকরণও করা হবে। শাস্ত্রমতে এক বছর বয়সে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কলিকা, পাঁচে সুভগা, ছয়ে ঊমা, সাতে মালনী, আটে কুব্জিকা, নয়ে কালসন্দর্ভা, দশে অপরাজিতা, এগারোয় রুদ্রানী, বারোয় ভৈরবী, তেরয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দয় পীঠনায়িকা, পনেরয় ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোলো বছরে অল্পদা বলা হয়ে থাকে। আজ দেবীর প্রতীক হিসেবে যে কুমারী মেয়েটিকে পূজা করা হবে, প্রথা ও নিরাপত্তার কারণে তাঁর নাম ও পরিচয় পুজো শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয় না বলে জানিয়েছেন রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ। 
কুমারী পূজা ছাড়াও আজ রামকৃষ্ণ মিশনে হাজার হাজার পূজারী ও দর্শনার্থীর মধ্যে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে। রাজধানী ছাড়াও রামকৃষ্ণ মিশনের নারায়ণগঞ্জ, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও ফরিদপুরসহ কয়েকটি মঠ এবং কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী পূজাম-পেরও আজ কুমারী পুজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকেশ্বরী মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। নতুন রঙে রাঙানো হয়েছে মন্দিরের সবগুলো ভবন। পুরো মন্দিরে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। প্রবেশদ্বারে রাখা হয়েছে তল্লাশি ব্যবস্থা। মন্দিরে আসা ব্যক্তিদের নিরাপত্তা বেষ্টনী মেনে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বসানো হয়েছে পুলিশ, র‌্যাব ও বিভিন্ন সংস্থার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
মন্দির ঘুরে আরও দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা নির্বিঘেœ পূজা উদযাপন করছেন। সেজেগুঁজে ছবি তুলছেন কেউ কেউ। মন্দিরের সার্বিক নিরাপত্তা ও পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন দেবীভক্তরা।
রাজধানীর শ্যামলী থেকে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে পূজা উদযাপন করতে আসেন বাংলাদেশে একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়ুয়া দুই ভারতীয় শিক্ষার্থী সুনীল ও জাদব ভিবাংসী শর্মা। তারা বলেন, সকাল থেকে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই সুন্দর পরিবেশে পূজা উদযাপন করছি। নিরাপত্তা ও সার্বিক বিষয়ে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেন তারা।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল বলেন, ‘আমি ভোর ৬টার আগে মন্দিরে প্রবেশ করেছি। এখানে আমি যেটি দেখেছি, নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই। সারারাত জেগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা দিয়েছে। এখনো চারপাশে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী রয়েছে। সকাল ৬টা থেকে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। আমরা আশা করছি, কোনো অসুবিধা হবে না।’
এ ছাড়া দুপুরে মন্দির পরিদর্শনে আসেন ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শঙ্কা নেই। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ যৌথবাহিনী মাঠে তৎপর। সেখানে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. ইসরাইল হাওলাদার বলেন, ‘পরিস্থিতি মাথায় রেখে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা সব ধরনের নিরাপত্তা জোরদার করেছি। প্রতিটি ইউনিট আলাদাভাবে কাজ করবে। যারা দর্শনার্থী আছেন, তাদের জন্য আলাদা নিরাপত্তা, আবার দুষ্কৃতকারীদের নজরে রাখতে আলাদা টিম কাজ করছে।’
দুপুরে ঢাকেশ্বরী মন্দির পূজাম-প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘পূজাকে কেন্দ্র করে কোনো ঘটনা ঘটতে পারে এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই। সবাই যদি সহযোগিতা করেন, বাংলাদেশের সব মানুষ ৩৬৫ দিন নিরাপদে থাকবে। এবারের পূজার নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও র‌্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীকে নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা হয়েছে। যে স্থানে যে পরিমাণ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য প্রয়োজন, সেখানে সে পরিমাণ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।’
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এবার পূজা খুব ভালোভাবেই অনুষ্ঠিত হবে। পূজার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আট দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সবাইকে সেগুলো পালনের আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে পূজা উপলক্ষে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আজ থেকেই নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং তা ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে।
শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনকালীন সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনোরূপ বিঘœ ঘটলে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭৬৬৮৪৩৮০৯ এই মোবাইল নম্বরে অবহিত করা যাবে। এ ছাড়া, বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনে ১৪ তলায় ১৪২৪ নম্বর কক্ষেও সরাসরি তথ্য প্রদান করা যাবে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র সহকারী সচিবকে এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

×