মহাষষ্ঠীতে মণ্ডপে দেবী দুর্গার আরাধনা। রমনা কালী মন্দির থেকে তোলা
শুরু হলো হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। বুধবার মহাষষ্ঠীতে ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে সূচনা ঘটেছে বাঙালির শারদোৎসবের। এদিন দুর্গতিনাশিনী দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা।
পাঁচদিনের দুর্গোৎসবের প্রথম দিনে বুধবার ষষ্ঠী তিথিতে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীর অধিষ্ঠান হয়। সকাল আটটা ১ মিনিটের মধ্যে ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বেলতলা কিংবা বেলগাছের নিচে দেওয়া হয় ষষ্ঠীপূজা। সন্ধ্যায় দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস ছাড়াও সব ম-পে পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতির আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় বিশেষ আলোকসজ্জাসহ অনেক ম-পে বিশেষ প্রার্থনা ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উৎসবের ™ি^তীয় দিনে আজ বৃহস্পতিবার মহাসপ্তমী। সকাল সাতটা ৫৩ মিনিটের মধ্যে ম-পে ম-পে ত্রিনয়নী দেবীদুর্গার চক্ষুদান, নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এভাবে উৎসব চলবে আগামী রবিবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত।
হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব ঘিরে দেশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে আনন্দ ও উৎসাহ-উদ্দীপনার। ঢাকাসহ সারাদেশের ৩১ হাজার ৪৬১টি মন্দির ও মণ্ডপে বুধবার দুর্গাপূজা শুরু হয় আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশে। হিন্দুদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষও যোগ দেওয়ায় উৎসব সর্বজনীন রূপ নিয়েছে। সারাদেশের ম-পে ম-পে ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ আর উলুধ্বনির শব্দ দেবীদুর্গার মর্ত্যে আগমনের জানান দিচ্ছে। পূজার মন্ত্রচ্চারণ, আরতি আর ডিজিটাল সাউন্ডবক্স ও মাইকের আওয়াজে এখন মাতোয়ারা সারাদেশের পূজা মণ্ডপ।
পূজাকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল সারাদেশে। প্রতিটি ম-পে পুলিশ, আনসার-ভিডিপির পাশাপাশি কোথাও কোথাও নিযুক্ত করা হয় র্যাব-বিজিবি সদস্যদের। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যদের ছিল সতর্ক প্রহরা। অনেক ম-পে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরে কড়া তল্লাশির মধ্যদিয়ে ম-পে প্রবেশ করতে হয়েছে দর্শনার্থীদের। এতসব কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছেদ ফেলেনি পূজার আনন্দমুখরতায়।
বুধবার থেকে পূজা শুরু হলেও রাজধানীর মণ্ডপগুলোতে ভক্ত-দর্শনার্থীদের ভিড় তেমন একট দেখা যায়নি। আয়োজকরা জানান, আজ মহাসপ্তমীতে দর্শনার্থীদের ভিড় কিছুটা বাড়তে পারে। আগামীকাল শুক্রবার মহাষ্টমী থেকেই মূলত মন্দিরে ও মণ্ডপে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ঢল নামবে।
কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব বলে পরিচিত ঢাকেশ^রী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনের মণ্ডপের সামনে বিশাল প্যান্ডেল ছাড়াও মন্দিরকে সাজানো হয়েছে নতুন রং, সাজ ও আলোকসজ্জায়। এখানে পুলিশের বিশেষ কন্ট্রোল রুমের পাশাপাশি পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করেছে। বসানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। সকাল ও সন্ধ্যায় ষষ্ঠীপূজার নানা আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি সন্ধ্যায় ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এখানে। পূজা শেষে অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতি ছিল উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ। পূজার পাশাপাশি মেলাঙ্গন প্রাঙ্গণে আয়োজিত হচ্ছে মেলা।
একই অবস্থা গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজাম-পেও। আকর্ষণীয় প্রতিমার পাশাপাশি ম-পসহ সংলগ্ন এলাকাকে বর্ণাঢ্য সাজ ও আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ হল পূজামন্ডপেও দুর্গাপূজা শুরু হয় সাড়ম্বরে। রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রমের ম-পে সন্ধ্যায় গত বছরের প্রতিমা মন্দিরের পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয়। ম-পসহ পুরো প্রাঙ্গণ সাজানো হয়েছে বাহারি সাজে। হিন্দু অধ্যুষিত পুরনো ঢাকার অলিগলিতেও উৎসবের আমেজ দেখা গেছে।
গুলশান-বনানী পূজা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে বনানীর পূজাম-পে শারদীয় দুর্গোৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। রাজারবাগের বরদেশ^রী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান কমিটির পূজাম-পে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
এছাড়া মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, সিদ্ধেশ^রী কালীমন্দির, শাঁখারীবাজারের পূজাম-প, পানিটোলা, জয়কালী রোডের রামসীতা মন্দির, অভয়নগর দাস লেনের ভোলানন্দগিরি আশ্রম, রাধিকা বসাক লেন, নবেন্দ্র বসাক লেন, ঢাকেশ^রীবাড়ি, টিকাটুলির প্রণব মঠ, ঠাঁটারীবাজার পঞ্চানন শিব মন্দির, সূত্রাপুরের ঋষিপাড়া গৌতম মন্দির, ফার্মগেট খামারবাড়ি সনাতন সমাজকল্যাণ সংঘ, বনগ্রাম তরুণ সংসদ, উত্তর মুশুন্দী, ফরাশগঞ্জ জমিদারবাড়ি এবং বিহারীলাল জিও মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপে উৎসবের আমেজে দুর্গোৎসব শুরু হয়েছে।