ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা থাকবে ॥ চেয়ারম্যান

বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ নয়

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫৯, ৮ অক্টোবর ২০২৪

বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ নয়

বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ নয়

রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ যেন বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করতে না পারে সে বিষয়ে কমিশন প্রস্তাবনা দেবে বলে জানিয়েছেন বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান। তিনি বলেছেন, কমপ্লিট সেপারেশন বলতে কিছু নেই। রাষ্ট্রের তিন অঙ্গকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। তবে, আমরা চাইব বিচার বিভাগে যেন হস্তক্ষেপ না হয়।
মঙ্গলবার রাজধানীর বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সংস্কার কমিশনের দ্বিতীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি এমদাদুল হক ও বিচারপতি ফরিদ আহমেদ শিবলী, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মাসদার হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিম হোসেন শাওন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক (সুপন)।
বিচারপতি শাহ আবু নাঈম বলেন, রাষ্ট্রের তিন অঙ্গকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। কারণ আদালত রায় দিলে তার বাস্তবায়ন করে থাকে সরকার। আবার বিচার বিভাগ না থাকলে দেশ চলতে পারবে না। তবে, বিচার বিভাগের কথা সবাইকে শুনতে হবে। আমরা চাইব যেন হস্তক্ষেপ না হয়। নির্বাহী বিভাগ যাতে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ না করতে পারে, সে বিষযে প্রস্তাবনা দেওয়া হবে। রায় পছন্দ না হলে আপিলের সুযোগ আছে। কারণ রায়ে তো দুই পক্ষকে খুশি করা যাবে না। 
তিনি বলেন, আমরা সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচারক নিয়োগের একটা নীতিমালা করে দেব। একজন এসে বলবে যে, অমুক আমার চাচা, তাকে জজ বানাতে হবে- এটা যাতে না হয় সেজন্য নীতিমালাটা করব। তিনি আরও বলেন, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কার কমিশন রিপোর্ট প্রস্তুত  করবে। তবে, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে মতামত নেওয়া হবে না। আমরা সুপারিশ দেব। সেটি নিয়ে হয়ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবে উপদেষ্টা পরিষদ।
বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে দুইটা বিষয় বেশি নজর দেব অধস্তন  আদালতে বিচার কাজে যাতে বিলম্ব না হয় আর বিচার কাজের খরচটা যেন কমে। উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগে একটু কথাবার্তা বলেছি। হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ। এটার একটা নীতি নির্ধারণ যদি সম্ভব হয় আমরা করে দেব। যে আপনি (একজনকে) নিয়ে আসলেন আমার চাচা, জজ করে দেন, এটা করব না। আমরা নীতি নির্ধারণী ঠিক করব। গাইডলাইনে পড়লে (নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্যতা থাকলে) জজ হবেন, না হলে বাদ যাবেন।
স্টেক হোল্ডারদের থেকে মতামত নেওয়ার বিষয়ে কমিশন প্রধান বলেন, মতামত নেব, তারপর সুপারিশ দেব। আমরা আজকে একটা পেপার তৈরি করেছি। এটাতে একটা রূপরেখা আছে। এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করব। তারপর গণমাধ্যমের সঙ্গে, নিচের কোর্টের স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে, জুডিশিয়ারি আছে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি আছে, জেলা আইনজীবী সমিতি আছে, ব্যবসায়ী সমিতি আছে। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সুপারিশ করে দেব।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পৃথকীকরণ নিয়ে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান বলেন, বিচারের রায় কার্যকর করবে কে? (সরকার)। তাহলে আমরা সেপারেশন কীভাবে হলাম? সরকার ছাড়া তো আমরা চলতে পারছি না। সুতরাং অ্যাবসিলিউট সেপারেশন আপনাদের একটা ভুল ধারণা। অ্যাবসিলিউট সেপারেশন হবে না। আমাদের (রাষ্ট্রের তিন বিভাগ) মিলেমিশে কাজ করতে হবে। অন্যান্য যারা আছেন, ওনারা জুডিশিয়ারিকে যাতে সম্মান করেন। যে রায়টা দেওয়া হলো, সেটা কার্যকর না হলে কি লাভ হবে? কমপ্লিট সেপারেশন জুডিশিয়ারি বলতে কিছুু নেই।

কোর্ট না থাকলে প্রশাসন চলতে পারবে না, দেশ চলতে পারবে না। দেশ চালাতে জুডিশিয়ারি থাকতে হবে, যার কথা সবাইকে শুনতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, সে কথা আরও কয়েকদিন পরে আলাপ-আলোচনা করব। আমরা চাইব যাতে হস্তক্ষেপ না হয়। আমরা (অধস্তন  আদালত) ভুল করলে আপনারা উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে যান (উচ্চতর আদালত)।

×