শেখ হাসিনা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত ছেড়ে আরব আমিরাতে আশ্রয় নিয়েছেন একাধিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থানের বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। আমরা দিল্লিতেও এ বিষয়ে খোঁজ করেছি। কেউ কোনো নিদির্ষ্ট তথ্য দিতে পারেনি।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত ছেড়ে দুবাইয়ে গেছেন কি না জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থানের বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। আমরা দিল্লিতেও এ বিষয়ে খোঁজ করেছি। সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য কেউ দিতে পারেনি। মিডিয়ায় আপনারা যেমন দেখেছেন, আমরাও দেখেছি, যে আমিরাতের আজমানে গেছেন। তবে আমরা রিকনফার্ম হতে পারিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে শেখ হাসিনাকে ভারত অন্য দেশে পাঠাল কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, সেটা যুক্তরাষ্ট্রকেই জিজ্ঞাসা করেন।
ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ট্রাভেল পাস নিয়ে অন্য দেশে পালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ফিরিয়ে আনা হবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে বাংলাদেশে ফেরার জন্য ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হয়ে থাকে। এটা অন্য কোনো দেশে যাওয়ার জন্য নয়।
আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক কয়েকজন মন্ত্রীকে ভারতে ঘুরতে দেখা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদের ফেরত আনার কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তারা সেখানে ঘুরছেন, সেটি আপনারা পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন, আমিও ততটুকুই দেখেছি। এর চেয়ে বেশি কিছু আমি জানি না। যেহেতু মামলা হচ্ছে বা হয়েছে, কোর্ট থেকে যদি বলে তাদের হাজির করতে হবে, অবশ্যই আমরা তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।
সম্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের একটি বক্তব্যের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ নোট দেওয়া হয়েছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রীও সাম্প্রতিক বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। তাদের বক্তব্যগুলো আপাতদৃষ্টিতে শোভন নয়। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নীরব কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমার মনে হয় এ ধরনের বক্তব্যের প্রতিবাদে যে বক্তব্য দিয়েছি, সেটাই আপাতত যথেষ্ট। দেখা যাক পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়। তাদের তো সামনে নির্বাচন আছে। সেগুলো নিয়েই তারা এ কথাবার্তাগুলো বলে যাচ্ছেন। আমরা চেষ্টা করব এগুলো যত কম বলা হয় বা না বলা হয়।
৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের রাজনীতিকসহ কারাদেশ ছেড়েছে, এমন কোনো তালিকা আছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমার কাছে এমন কোনো তালিকা নেই। আমরা যেটুকু পত্র-পত্রিকায় দেখেছি। তবে যদি মনে হয় এ ধরনের তালিকা প্রয়োজন তা হলে আমরা চাইতে পারি।
লেবানন থেকে ফিরতে আগ্রহী প্রবাসী বাংলাদেশীদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
লেবানন থেকে বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, লেবানন থেকে ফিরতে আগ্রহী প্রবাসী বাংলাদেশীদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তারা যেন ওয়ার জোন থেকে উত্তরে সরে যান। তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা আইওএমকে বলেছি একটা ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে। তারা সেটা করবে। তবে সমস্যা হলো বৈরুত এয়ারপোর্ট থেকে ফ্লাই করা ঝুঁকি। সে কারণে বিকল্প পথে ফ্লাই করা যায় কি না সে চেষ্টাও করছি।
জানা গেছে, লেবাননে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশীরা আতঙ্কে রয়েছে। কেউ কেউ আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
তৌহিদ হোসেন বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ২০ হাজার ভিসা ইস্যুর আশ্বাস দিয়েছে ইতালি। এর আগে
মঙ্গলবার সকালে ইতালির ভিসা প্রার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ভিসা দেওয়া বা না দেওয়া একটি দেশের সার্বভৌম অধিকার। কিন্তু অনেকদিন ধরে আটকে আছে তার মধ্যে ২০ হাজার কেস ক্লিয়ার হয়েছে রোম থেকে।
যে কেসগুলো ক্লিয়ার হয়েছে সেগুলো ডিসেম্বরের মধ্যেই সবগুলো ভিসা দিয়ে দেবে। বাকিগুলোর জন্যও চেষ্টা করা হচ্ছে, দেখা যাক কতটুকু করা যায়। উপদেষ্টা বলেন, ভিসা প্রার্থীরা যদি মিছিল-মিটিং বা ঘেরাও করেন তাতে কোনো লাভ হবে না। তা তারাও একমত হয়েছেন যে এমনটা করে ভালো কিছু হবে না বলেও জানান তৌহিদ হোসেন।