ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ

সুন্দরবনে ৬ বছরে বাঘ বেড়েছে ১১টি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ৮ অক্টোবর ২০২৪

সুন্দরবনে ৬ বছরে বাঘ বেড়েছে ১১টি

৬ বছরে বাঘ বেড়েছে ১১টি

সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৮ সালের তুলনায় চলতি বছরের জরিপে ১১টি বাঘ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে সুন্দরবনের জাতীয় পশু বাঘ জরিপে ১২৫টি বাঘ পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালের জরিপে ১১৪টি বাঘ পাওয়া গিয়েছিল। তবে আইইউসিএন বাঘকে বাংলাদেশে অতি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। ২০১০ সালে ১৩টি টাইগার রেঞ্জ কান্ট্রির মধ্যে বর্তমানে ১০টি দেশে (বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, রাশিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া) বাঘ রয়েছে। অবশিষ্ট তিনটি দেশের (ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও লাওস) বনাঞ্চল হতে বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী বর্তমানে বাঘের সংখ্যা মাত্র তিন হাজার ৮৪০টি।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘সুন্দরবন বাঘ জরিপ-২০২৪’র ফল ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসেন চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমএ আজিজ, খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো এবং প্রকল্প পরিচালক ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন। এ সময় বাঘ জরিপ কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও প্রদর্শন করে বাঘ জরিপের রিপোর্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বন উপদেষ্টা জানান, ২০২৩-২৪ সালে সুন্দরবনের জাতীয় পশু বাঘ জরিপে ১২৫টি বাঘ পাওয়া গেছে। প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব দুই দশমিক ৬৪। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে ১১টি, বৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং ২০১৫ সালের তুলনায় ১৭ দশমিক ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সালে সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘ ছিল, আর ঘনত্ব ছিল ২ দশমিক ১৭। ২০১৮ সালে ১১৪টি বাঘ পাওয়া যায়, আর ঘনত্ব ছিল ২ দশমিক ৫৫। ২০১৮ সালে বাঘের সংখ্যা আটটি বেড়েছিল এবং বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় আট শতাংশ।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ২০২৩-২৪ সালের জরিপে ২১টি বাঘ শাবকের ছবি পাওয়া গেছে, তবে শাবকদের সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কারণ ছোট বয়সে শাবকের মৃত্যুর হার অনেক বেশি। ২০১৫ ও ২০১৮ সালে মাত্র পাঁচটি শাবকের ছবি পাওয়া গিয়েছিল। জরিপের ছবি ও তথ্য বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। এ কাজে ভারত, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞদের মতামতও নেওয়া হয়। জরিপটি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের মার্চে শেষ হয়।

সুন্দরবনের ৬০৫টি গ্রিডে এক হাজার ২১০টি ক্যামেরা ৩১৮ দিন রেখে দেওয়া হয়, যার মধ্যে ৩৬৮টি গ্রিডে বাঘের ছবি পাওয়া যায়। দশ লক্ষাধিক ছবি ও ভিডিও থেকে সাত হাজার ২৯৭টি বাঘের ছবি পাওয়া যায়। এত বেশি সংখ্যক বাঘের ছবি এর আগে পাওয়া যায়নি।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, বাঘ সংরক্ষণে সরকার বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বাঘসহ সুন্দরবনের অন্যান্য বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ও প্রজননের উদ্দেশ্যে বনের ৫৩ দশমিক ৫২ শতাংশ এলাকাকে রক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে সেখান থেকে সবধরনের বনজ সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্ব হ্রাসে লোকালয় সংলগ্ন এলাকায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ নাইলনের ফেন্সিং তৈরি করা হচ্ছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় বাঘ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর আশ্রয়ের জন্য বনের ভেতরে ১২টি মাটির উঁচু কিল্লা বা ডিবি নির্মাণ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এমএ আজিজ বলেন, ‘বাঘের প্রজননের জন্য সুন্দরবনে অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। আগামীতে বাঘের সংখ্যা আরও বাড়বে।’ এই জরিপ কাজ সম্পন্ন করার জন্য তিন কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবু নাসের মোহসিন হোসেন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে একাধিক কর্মপরিকল্পনা ॥ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা বলেন, ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা, দ্বীপে রাতযাপন এবং পর্যটকের সংখ্যা নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে। সেখানে যারা হোটেল ও জাহাজ চালান, তারা একমত হয়েছেন যে, সেখানে একবার ব্যবহারযোগ্য কোনো প্লাস্টিক ঢুকতে দেওয়াই উচিত নয়। কেউ কেউ এমনও বলেছেন যে, চানাচুর, চিপস, আচার-এগুলো ওখানে ঢুকতে দেওয়া উচিত নয়।’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পর্যটন বিভাগেরও এ বিষয়ে বক্তব্য আছে। জাহাজ যারা চালান তাদেরও একটা বক্তব্য আছে। আমরা হোটেল মালিক ও সেখানকার জাহাজ মালিকদের মতামত পাব। সেখানে পর্যটকদের রাতযাপন এবং পর্যটকের সংখ্যা সীমিত করার বিষয়ে তারা তাদের মতামত ১৫ অক্টোবরের মধ্যে জানাবেন। এরপর সরকারি সংস্থার সঙ্গে কথা বলে ২০ অক্টোবরের মধ্যে সেন্টমার্টিনের ব্যাপারে আমাদের কর্মপরিকল্পনা নিতে পারব।’
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ মনিটর করা হবে ॥ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে বাগেরহাটে গড়ে ওঠা রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ সীমার মধ্যে রয়েছে কি না, নিরপেক্ষভাবে তা মূল্যায়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সুন্দরবনের হুমকি বাস্তবতা থেকে সরে যায়নি। এটা নিয়ে দুটি পর্যায়ে কাজ করা প্রয়োজন, আমরা কাজ শুরু করেছি।

ইউনেস্কোর কাছে আমাদের একটা স্ট্র্যাটেজিক এনভায়রনমেন্ট অ্যাসেসমেন্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল। সেটা বিগত সরকার জমা দিয়েছে। সেখানে ইউনেস্কো আপত্তি দিয়েছে, যে এলাকাটা চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে রক্ষিত এলাকাটা অনেকাংশেই বাদ দিয়েছে। এখন সেই অ্যাসেসমেন্ট আবার নতুন করে ইউনেস্কোর অবজারভেশনের আলোকে আমাদের দেখতে হচ্ছে। যাতে সুন্দরবনের পুরো এলাকা থেকে কোনো রক্ষিত জায়গা বাদ না দেই। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে দূষিত বায়ু বা ধোঁয়া বের হওয়ার ফলে বায়ুদূষণ হচ্ছে, সেটা আমরা নিরপেক্ষভাবে মনিটর করার চেষ্টা করছি।
পরে পরিবেশ উপদেষ্টা ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম’ এর সঙ্গে মতবিনিময় করেন। যেখানে ফোরামের সদস্যরা জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে আলোচনা করেন।

×