জন জে হপফিল্ড ও জিওফ্রে ই হিন্টন
মেশিন লার্নিং বা এআই, তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় এ বছর পদার্থ বিদ্যায় নোবেল পেলেন মার্কিন বিজ্ঞানী জন জে হপফিল্ড ও কানাডিয়ান বিজ্ঞানী জিওফ্রে ই হিন্টন। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে সুইডেনের স্টকহোম থেকে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে দ্য রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।
এই দুই বিজ্ঞানী কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মেশিন লার্নিং সম্ভবপর করে তোলার ক্ষেত্রে অভিনব উপায় আবিষ্কার করেন। নোবেল কমিটি এক ঘোষণায় বলেছে, হপফিল্ড এমন একটি গঠন তৈরি করেছেন যা তথ্য জমা করে রাখার পাশাপাশি আবার তা পুনর্গঠন করতে পারে। অপরদিকে হিন্টন এমন একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন, যা স্বাধীনভাবে তথ্যের মধ্যকার বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করতে পারে। বর্তমানে ব্যবহৃত নিউরাল নেটওয়ার্কগুলোর পেছনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এই দুই বিজ্ঞানী পাবেন একটি মেডেল, একটি সনদপত্র এবং মোট ১১ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা। এর বর্তমান বাজারমূল্য ১০ লাখ ৬৭ হাজার মার্কিন ডলার, বাংলাদেশী টাকায় হবে প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। দুই নোবেলজয়ীর মধ্যে এই ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা ভাগ হয়ে যাবে। খবর বিবিসি ও আলজাজিরা অনলাইনের।
এর আগে জীবকোষের মাইক্রো আরএনএ আবিষ্কার এবং জিনের ট্রান্সক্রিপশন পরবর্তী পরিস্থিতিতে এর ভূমিকা নিয়ন্ত্রণের উপায় আবিষ্কারের জন্য এ বছর চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পান ভিক্টর অ্যামব্রোস এবং গ্যারি রাভকুন নামের দুই মার্কিন বিজ্ঞানী। সুইডেনের রয়্যাল ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট সোমবার তাদের নাম ঘোষণা করে। পোলিশ বংশোদ্ভূত জীব রসায়নবিদ ভিক্টর অ্যামব্রোস ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির সাবেক শিক্ষার্থী।
জিন বিশেষজ্ঞ গ্যারি ম্যাসাচুসেটস হাসপাতালের জৈব অনুবিদ্যার গবেষক তথা বোস্টনের হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের জিনবিদ্যার অধ্যাপক। ক্রোমোজোমের মধ্যে থাকা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উপাদান মাইক্রো আরএনএ ((রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড)-এ এমআরএনএ নামেই জৈব রসায়নবিদ্যার জগতে পরিচিত। তারই হাতে জিনের ‘সক্রিয়তা’ এবং প্রতিলিপিকরণ পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি। ডায়াবেটিস থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত মানবশরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জিনই দায়ী। সেই জিনের কাজের নিয়ন্ত্রক হিসেবে জুড়ে রয়েছে এক বা একাধিক এমআরএনএ।
বস্তুত, নিজস্ব সঙ্কেত আদানপ্রদান পদ্ধতির মধ্য দিয়ে আমাদের শরীরের কোষ থেকে কোষে সঙ্কেত বয়ে নিয়ে যেতে পারে এমআরএনএ। কিন্তু এত দিন পর্যন্ত তার উপস্থিতির কথা জানা থাকলেও চরিত্র এবং গতিবিধি অজানা ছিল বিজ্ঞানীদের। ভিক্টর এবং গ্যারির ‘হাত ধরে’ জানা গেল, জিনের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে ‘মাইক্রো আরএনএ’ নামে এমন গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের প্রকৃত ভূমিকা। সি এলেগান্স নামে ক্ষুদ্র কীটের দেহে এম আরএনএর প্রভাব নিয়ে গবেষণা করে এই সাফল্য পেয়েছেন এই দুই বিজ্ঞানী।
গত বছর চিকিৎসায় নোবেল পান হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান বায়োকেমিস্ট কাতালিন কারিকো এবং মার্কিন চিকিৎসক ড্রিউ ওয়াইসম্যান। তাদের গবেষণার মধ্য দিয়ে এমআরএনএ টিকা তৈরির পথ সুগম হয়েছিল। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এমআরএনএ টিকা। চিকিৎসা শাস্ত্রের পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়েই এবারের নোবেল পর্ব শুরু হয়। এরপর বুধবার রসায়ন, বৃহস্পতিবার সাহিত্য এবং শুক্রবার শান্তিতে পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। ১৪ অক্টোবর অর্থনীতিতে নোবেলজয়ীর নাম ঘোষিত হবে।
উল্লেখ্য, ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে সুইডেনের স্টকহোমে বিজয়ীদের হাতে নোবেল পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।