দুর্নীতি আর তিতাস যেন একে অপরের পরিপূরক হয়ে পড়েছিল
দুর্নীতি আর তিতাস যেন একে অপরের পরিপূরক হয়ে পড়েছিল। মানুষের কাছে তিতাস মানেই ছিল দুর্নীতির মচ্ছব। কিন্তু দুর্নীতিবাজরা বরাবরই ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। এবার তাতে কিছু ব্যতিক্রম ঘটতে যাচ্ছে বলে সবার ধারণা। অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে। তারই ধারাবাহিক পরিণতিতে তিতাসের এমডি হারুনুর রশীদ মোল্লাহর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। কারণ তিনি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাসকে ঘুষ-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন। তার সহযোগী ছিল ক’জন।
গত ৯ সেপ্টেম্বর এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বিদায় নেওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বড় অংশকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মুখোমুখি হতে হয়েছে। তিন বছর ধরে তিতাসের এমডি পদে ছিলেন হারুনুর রশীদ মোল্লাহ। এ সময়ের মধ্যে অনিয়ম-দুর্নীতিতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছেন তিনি।
এদিকে তিতাস গ্যাস কোম্পানির অপসারিত এমডি হারুনুর রশীদ মোল্লাহর ঘুষ দুর্নীতি অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দিয়েছে পেট্রোবাংলা।
২০২১ সালে সেপ্টেম্বরে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের এমডি পদে পদোন্নতি পান হারুনুর রশীদ মোল্লাহ। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিতাসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন। তার বিরুদ্ধে একের পর এক ঘুষ ও অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে। এতকিছুর পরও ২০২৩ সালের আগস্টে তাকে পুনরায় তিতাসের এমডি পদে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। তার এই নিয়োগে বড় ভূমিকা রাখেন সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
তাদের দুইজনের বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জে। হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বিভিন্ন জায়গায় দাবি করতেন, তার স্ত্রী নসরুল হামিদের স্ত্রীর বোন হন। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাতারাতি বিএনপিপন্থি সেজে গেছেন হারুনুর রশীদ। অভিযোগ রয়েছে, কেরানীগঞ্জে বাড়ি বিএনপির এমন দুই নেতাকে দিয়ে তদবির করে ফের তিতাসের এমডি পদে চুক্তি নবায়নের চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। সোমবার তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করেছে সরকার।
তিতাসের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ছত্রচ্ছায়ায় মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়ে ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাস-সংযোগ, অবৈধ গ্যাস সংযোগ, গ্যাসের নতুন সংযোগ দিয়ে হাজার কোটি টাকা কামিয়েছেন। অনিয়ম-দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিয়ে নসরুল হামিদসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে তার বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে বহুবার। তবে কোনো তদন্ত হয়নি।
প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে হারুনুর রশীদ তিতাসে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করে বারবার ছাড় পেয়ে যান। তারা অভিযোগ করেন, এমডি হারুনুর রশীদ মোল্লাহর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে তদন্তের দাবি জানিয়ে কোনো লাভ হয়নি। বহুবার তার বিরুদ্ধে এসব ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তগুলো মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নসরুল হামিদ বিপুর কারণে প্রতিবার তিনি এসব অপকর্ম করে পার পেয়ে যান। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরই তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদক উপপরিচালক (জনসংযোগ কর্মকর্তা) আকতারুল ইসলাম বলেন, তিতাসের সাবেক এমডি হারুনুর রশীদ মোল্লাহর বিরুদ্ধে দুর্নীতির এসব অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।
হারুনের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকে চিঠি ॥ তিতাস গ্যাস কোম্পানির অপসারিত এমডি হারুনুর রশীদ মোল্লাহর ঘুষ দুর্নীতি অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দিয়েছে পেট্রোবাংলা। গত ১০ সেপ্টেম্বর সংস্থাটির চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, হারুনুর রশীদ মোল্লাহর বিরুদ্ধে গ্যাস সংযোগ, লোড বৃদ্ধি, অবৈধভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে শত শত কোটি টাকা দুর্নীতি করার অভিযোগ তারা পেয়েছেন।
এ ছাড়া অবৈধ সংযোগ দিয়ে সেখানে কোনো অভিযান না চালিয়ে ঘুষ বাণিজ্য ও সাপ্তাহিক মাসোহারা আদায় করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ভাঙিয়েও বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে শিল্প সংযোগ দিয়েছেন তিনি। ঘুষ আদায় করার জন্য শিল্প মালিকদের নানাভাবে হয়রানি করার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। অনেক শিল্প মালিক অভিযোগ করেছেন, হারুন মোল্লাহকে ঘুষ না দিলে তিনি তাদের কারখানার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতেন। এরপর মিটার টেম্পারিংসহ নানা অভিযোগ এনে ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায় করতেন।
তদন্তে এসব অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তসহ সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দিয়েছে পেট্রোবাংলা। এদিকে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আশা করছেন দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের অভিযোগটি অনুসন্ধান করে হারুনুর রশীদ মোল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে।
হারুনুরের যত অনিয়ম ॥ তিতাসের সাবেক এমডি হারুনুর রশীদ মোল্লাহ দুর্নীতি ও অনিয়মের রেকর্ড গড়েছেন। ইতোমধ্যে এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান শুরু করেছে। কমপক্ষে ২০০ প্রতিষ্ঠানকে গ্যাসের নতুন সংযোগ দিয়ে ও লোড বৃদ্ধি করে ৮শ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে অবৈধ সংযোগ ও লোডের ক্ষেত্রে ঘুষের রেট ছিল ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা।
তিতাসের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, গত তিন বছরে অন্ততপক্ষে দেড় হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এসব অবৈধ সংযোগ থেকে মোটা অঙ্কের মাসোহারা পেতেন। বিশেষ করে রাজধানীর কামরাঙ্গীচর ব্যাটারিঘাট এলাকা, বড়গ্রাম, খলিফারঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫শ ডুলার কারখানা ও বহু ভবনে অবৈধ সংযোগ দিয়ে প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জ, সাভারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এভাবে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের কোনো গ্যাস বিতরণ সংস্থা ১০ মেগাওয়াটের বেশি কোনো ক্যাপটিভ পাওয়ার কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করতে চাইলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু সাবেক এমডি হারুনুর রশীদ ১০ মেগাওয়াটের বেশি এমন অন্তত ২০টি ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সংযোগ দিয়েছেন। যেগুলোর একটিরও অনুমতি নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি ছাড়াই প্রতিটি ক্যাপটিভ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করে ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে।
তিনি এক্ষেত্রে ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছেন। এটি হচ্ছে, ১০ মেগাওয়াটকে ভেঙে একাধিক ভাগে লোড দিয়েছেন। এমন কৌশলে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি এড়িয়েছেন তিনি। ঘুষের বিনিময়ে তিনি অন্তত ১২০টি ক্যাপটিভ কেন্দ্রে গ্যাস সংযোগ দিয়েছেন।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে গাজীপুরের সিলভার টেক্সটাইল মিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর কাছে গ্যাস-সংযোগের আবেদন করে। ওই আবেদনে জ্বালানিমন্ত্রীর (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কোনো সুপারিশ ছিল না। তবে সেই আবেদনের ফাইল ঢাকায় আনার জন্য তিতাসের গাজীপুর অফিসকে নির্দেশ দেন হারুনুর রশীদ। সেখানে বলা হয়, এটি জ্বালানি মন্ত্রীর তদবির। এরপরই সিলভার টেক্সটাইল মিল সংযোগ পেয়ে যায়।
পরে প্রধানমন্ত্রীর নামে এমন নির্দেশনা দেখে গত বছরের ২৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জ্বালানি বিভাগের সচিবকে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে ঘুষের মাধ্যমে শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ প্রদানের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়। ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করার জন্য নির্দেশও দেওয়া হয়। তবে এই চিঠি পর্যন্তই ঘটনা শেষ। এটি আর আলোর মুখে দেখেনি। বিচারও হয়নি।
এদিকে মেঘনা গ্রুপের এভারেস্ট পাওয়ার জেনারেশন ৮ মেগাওয়াট অতিরিক্ত লোড চালাচ্ছিল। এজন্য লাইনটি কেটে দেওয়া হয়। পরে তিতাস বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই ৩ কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে ফের সংযোগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া রুপালি ডাইংয়ে মিটার টেম্পারিং করে অবৈধভাবে বা চুরি করে গ্যাস নেওয়ার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। আবার ঘুষ নিয়ে ওই রাতে সংযোগ দেওয়া হয়।
মাসোহারা না দিলে বৈধ লাইনও বন্ধ ॥ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, হারুনুর রশিদকে প্রতিটি শিল্পের সংযোগ ও সিএনজি স্টেশন থেকে প্রতিমাসে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিতে হয়। অবৈধ ও বৈধ লাইন থেকে এই মাসোহারা নেওয়া হতো। বৈধ লাইন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ঘুষ দিতে না চাইলে তাকে বিভিন্ন মারপ্যাঁচে ফেলে গ্যাস লাইন বন্ধ করে দিত। এর ফলে উৎপাদনমুখী অনেক বৈধ গ্যাস সংযোগকারী শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন।
তিতাসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ঘুষের টাকা না দেওয়ায় আয়মান টেক্সটাইল অ্যান্ড হোসিয়ারি লিমিটেড নামের একটি বৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয় তিতাস। আদালতের রায় নিয়ে তিন বছর পর গ্যাস পায় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ততক্ষণে ওইসব প্রতিষ্ঠানের লালবাতি জ্বলে গেছে। গাজীপুরের মাওনা এলাকার বদর স্পিনিং মিলসের ইভিসি মিটারটিতে ত্রুটি দেখা দিলে ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিতাস গ্যাসকে জানানো হয়।
জানার পরও চার মাস পর তিতাস গ্যাসের লোকজন ওই কারখানায় আসেন। এরও ছয় মাস পরে ইভিসি মিটার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানের নামে বড় অঙ্কের বিল পাঠায় তিতাস গ্যাস। এতে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকরা অভিযোগ করেন, ঘুষ না দেওয়ার কারণে তিতাস তাদেরকে মোটা অঙ্কের বিল পাঠিয়েছে।
ঘুষের বিনিময়ে সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সংযোগ ॥ দেশীয় গ্যাসের মজুত কমতে থাকার কারণে নতুন করে সিএনজি স্টেশনের অনুমতি কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। এরপরই ঘোষণা দিয়ে সিএনজি স্টেশনে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে ঘুষের বিনিময়ে অনেক সিএনজি স্টেশনে গোপনে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু খাতা-কলমে দেখানো হয়, এসব সিএনজি স্টেশনের গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সংযোগ নিতে হলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু সাবেক এমডি হারুনুর রশীদ ঘুষের বিনিময়ে লাইসেন্স ছাড়া এসব সিএনজি স্টেশনকে নতুন গ্যাস সংযোগ দিয়েছেন।
তিতাস সূত্র থেকে জানা গেছে, ঢাকায় লাইসেন্সবিহীন সিএনজি স্টেশন রয়েছে ৪০টি। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে ১৫টি, নরসিংদীতে ১০টি, গাজীপুরে ১০টি, মুন্সীগঞ্জে ২টিসহ মোট ৭৯টি লাইসেন্সবিহীন গ্যাস সংযোগ রয়েছে তিতাসের। অভিযোগ আছে, এগুলোর প্রতিটির কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন তিতাসের এমডি।
ঘুষের বিনিময়ে নিয়োগ ॥ তিতাসে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয় তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সর্বনিম্ন এসএসসি পাস থাকার কথা। অথচ তিতাসে ৭১ জনের নিয়োগ হয়েছে, যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাস। অনেকের সেরকম সনদও নেই। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নকল সার্টিফিকেট নিয়ে নিয়োগ পেয়েছেন। আবার বয়সের সীমা ৬০ বছর অতিক্রম করেছে-এমন রয়েছেন ৮ জন।
তিতাসে এসব ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম জানান, ঘুষ-দুর্নীতির আখড়া জ্বালানি খাতের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে তিতাস হচ্ছে সবার শীর্ষে। এই অন্তর্বর্তী সরকারকে এমন একটি বার্তা দিতে হবে যে, ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলে পরিণাম হবে ভয়াবহ। এখন পর্যন্ত এমনটি দেখা যায়নি।
তিতাস এমডি হারুনুরের চুক্তি বাতিল ॥ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ মোল্লাহর চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ মোল্লাহর ২০২১ সালে প্রথম এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান।
চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে দ্বিতীয় দফায় আরও এক বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দেড় মাস আগেই জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ তাকে আবারও এক বছরের জন্য নিয়োগ প্রদান করে। ২০২৩ সালের ২৪ আগস্ট ১ বছরের জন্য তৃতীয়বারের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন তিনি।