ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

মোট ব্যয় ১ লাখ ৬ হাজার একশ’ কোটি

আসছে মেগা কর্মসূচি ॥ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ৭ অক্টোবর ২০২৪; আপডেট: ০৯:১৯, ৮ অক্টোবর ২০২৪

আসছে মেগা কর্মসূচি ॥ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে

আসছে মেগা কর্মসূচি

সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে শুরু হতে যাচ্ছে ‘পঞ্চম স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি।’ সেবার মানোন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সাধারণ মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করাই এই মেগা কর্মসূচির লক্ষ্য। এটিই দেশের ইতিহাসে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতের সবচেয়ে বড় কর্মসূচি। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।

এই কর্মসূচির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে  সরকারি খাত থেকে আসবে ৮০ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। মেগা কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রকল্প ঋণ হিসেবে ২৫ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা দেবে ১১ উন্নয়ন সহযোগী। প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার পর ছয় বছরে দেশবাসীর স্বাস্থ্য ও পুষ্টির উন্নয়নে এই বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ ইতোমধ্যে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন (পিইসি) কমিটির সভা করেছে। প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে বেশকিছু পর্যবেক্ষণ পাঠিয়েছে কমিশন। এ ছাড়া কিছু খাতের ব্যয় কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ প্রকল্পটি সংশোধন করে পাঠালে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে কমিশন।

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি স্বাস্থ্য খাতের বিশাল প্রকল্প। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ‘পঞ্চম স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি’ প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। কমিশন যাচাই-বাছাই করছে। এর মধ্যে কিছু জিজ্ঞাসা আছে, সেগুলোর সংশোধন করতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে পাঠানো হয়েছে। তারা সংশোধন করে পাঠাবে। এ ছাড়া এই প্রকল্প নিয়ে কয়েকটি সভা হয়েছে। সামনে আরও সভা হবে। সভা শেষ করেই চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সূত্র জানায়, সংস্থা ও দেশসহ ১১টি উন্নয়ন সহযোগী আমাদের এই প্রকল্পের আওতায় ঋণ ও অনুদান দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা বিরাট পাওয়া।

জানা যায়, প্রস্তাবিত কর্মসূচিতে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা বা প্রকল্প সাহায্য বাবদ আসবে ২৫ হাজার ৪১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা বা ২৩১ কোটি মার্কিন ডলার। এ ব্যয়ের মধ্যে বিশ্বব্যাংক থেকে ৪৭ দশমিক ৯ কোটি মার্কিন ডলার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ৫০ কোটি ডলার, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) থেকে ৭ দশমিক ৬ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ মিলবে।

এ ছাড়া গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ফ্যাসিলিটি (জিএফএফ) থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ, এডিবি থেকে ৩০ লাখ, জাইকা থেকে ৬০ মিলিয়ন, গ্লোবাল ফান্ড থেকে ১৬ কোটি ৯০ লাখ, সুইডেন থেকে ১ কোটি ২০ লাখ, কানাডা থেকে ৩৬ লাখ ৯০ হাজার, ইউনিসেফ থেকে ৬ কোটি ৯৬ লাখ, গ্লোবাল ভ্যাকসিন এলায়েন্স (গ্যাভি) থেকে ১৯ কোটি ৯৬ লাখ, ইউএনএফপিএ থেকে এক কোটি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে ৫ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার অনুদানসহ মোট ৫২ কোটি ৯৫ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ জানায়, বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন চতুর্থ সেক্টর কর্মসূচি (চতুর্থ এইচপিএনএসপি) জুন ২০২৪-এ সমাপ্ত হয়। পঞ্চম স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি প্রণয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে পঞ্চম সেক্টর কর্মসূচির প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন প্ল্যানের (পিআইপি) খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। সেক্টর কর্মসূচি মন্ত্রণালয়ের উভয় বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হলেও কর্মসূচির প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন সম্পর্কিত সার্বিক সমন্বয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সম্পন্ন করছে। কর্মসূচির খসড়া পিআইপি পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণের উদ্দেশ্যে যাচাই কমিটির বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পিআইপি পরিকল্পনা পদ্ধতি অনুসরণ করে অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হবে।

বিগত চারটি কর্মসূচি ও প্রস্তাবিত পঞ্চম সেক্টর কর্মসূচির তুলনামূলক চিত্র এবং প্রস্তাবিত পঞ্চম সেক্টর কর্মসূচি প্রণয়নের বিভিন্ন ধাপ, ভিশন, মিশন, উদ্দেশ্য, কৌশলগত উদ্দেশ্য, অগ্রাধিকার কার্যক্রম এবং বাস্তবায়ন ও কৌশল নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। ১৯৯৮ সালের আগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকা- বিষয়ভিত্তিক পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। প্রায় ১২৬টি প্রকল্প একীভূত করে ১৯৯৮-২০০৩ মেয়াদে ‘স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সেক্টর কর্মসূচি (এইচপিএসপি)’ শীর্ষক প্রথম সেক্টর কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৩-২০১১ মেয়াদে দ্বিতীয় সেক্টর কর্মসূচি, ২০১১-১৬ মেয়াদে তৃতীয় সেক্টর কর্মসূচি এবং জানুয়ারি ২০১৭-জুন ২০২৪ মেয়াদে চতুর্থ সেক্টর কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন : বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত পঞ্চম সেক্টর কর্মসূচি প্রণয়নের কাজ শুরু করে। পরে এই কর্মসূচি প্রণয়নে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনার লক্ষ্যে তিনটি কমিটি যথা : হাই লেভেল কমিটি, স্টিয়ারিং কমিটি এবং টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ জানায়, প্রস্তাবিত মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতাধীন ২৩টি অপারেশনাল প্ল্যানের (ওপি) মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৬৬ হাজার ৪৯১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, যা কর্মসূচির মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৬২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ ছাড়া স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন ১৫টি ওপির মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৯ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা, যা কর্মসূচির মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৩৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ে সরকারের অবদান ৭৬ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের অবদান ২৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। চতুর্থ সেক্টর কর্মসূচির প্রণয়ন ব্যয়ের তুলনায় পঞ্চম সেক্টর কর্মসূচিতে উন্নয়ন ব্যয় ৫৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ প্রকল্পের প্রধান কাজ হচ্ছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি সেবা, সচেতনতামূলক কর্মকা-, প্রশিক্ষণ বা উচ্চ শিক্ষা, ব্যবস্থাপনা ও কাঠামোগত উন্নয়ন, কর্মশালা বা সেমিনার, তথ্য ব্যবস্থাপনা বা মানবসম্পদ উন্নয়ন, মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন, গবেষণা এবং অবকাঠামো উন্নয়ন।

 

×