ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

৬ অক্টোবর পর্যন্ত সচিব পর্যায়ে ১০ জনকে রদবদল

প্রশাসনে বদলি আতঙ্ক ॥ শীর্ষ পর্যায়ে বেশি

​​​​​​​তপন বিশ্বাস

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ৭ অক্টোবর ২০২৪

প্রশাসনে বদলি আতঙ্ক ॥ শীর্ষ পর্যায়ে বেশি

.

প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তা বদলি আতঙ্কে রয়েছেন। কাকে কখন কোথায় বদলি বা ওএসডি করা হবে তা নিয়ে রীতিমতো আলোচনা চলছে প্রশাসনের সর্বস্তরে। শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্কটা একটু বেশি। চলতি মাসের অক্টোবর পর্যন্ত শুধুমাত্র সচিব পর্যায়ে ১০ কর্মকর্তার বিষয়ে আদেশের প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে বদলি, ওএসডি, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান এমনকি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ারও আদেশ রয়েছে। আরও বেশি কিছু পরিবর্তন হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এতে স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক সচিব জনকণ্ঠকে বলেন, সচিব পদে এত ঢালাও পদোন্নতি এর আগে দেখিনি। এভাবে বদলি হলে কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। এতে কর্মকর্তারা কাজের গতি হারাবে। তাতে প্রশাসনও গতি হারাবে। হয়ে পড়বে স্থবির। কাজ-কর্ম আটকে থাকবে। দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে।

তিনি বলেন, প্রশাসনের শীর্ষ পদে যেভাবে রদবদল করা হচ্ছে এটি দ্রুত বন্ধ করতে হবে। না হলে মন্ত্রণালয়গুলো কার্যত অকেজো হয়ে পড়বে। সাম্প্রতিক কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে ঝড়ের মধ্যে কর্মকর্তারা যেন আম কুড়াতে নেমে পড়েছে। তদ্বির করে অযোগ্যদেরও সচিব পদে পদায়ন করা হচ্ছে। তা আবার বাতিলও করা হচ্ছে। ইতিপূর্বে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় এলাহী দাদা খানকে। তিনি ফুড ক্যাডারের ৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা। উপসচিবের পদে (খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন) থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তাকে খাদ্য সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে অবশ্য তা আবার বাতিলও করা হয়। এই কর্মকর্তাকে সচিব করতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেনকে সমাজ কল্যাণে বদলি করা হয়। এতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বা অধিদপ্তরে এই মুহূর্তে শীর্ষ পদে কোনো দক্ষ কর্মকর্তা নেই। বর্তমানে মন্ত্রণালয়টিতে কোনো উপদেষ্টা নেই। এটি প্রধান উপদেষ্টার অধীনে রয়েছে। দক্ষ হলেও বর্তমান সচিব নতুন। খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও নতুন। এতে খাদ্য পরিস্থিতি কী হবে তা অনেকেরই বোধগম্য নয়। তাই সরকারকে সব দিক বিবেচনা করে সচিব বদল করা উচিত। রবিবার অতিরিক্ত সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফারজানা মমতাজকে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব করা হয়েছে। একইসঙ্গে ওএসডি করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানকে। অক্টোবর বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হয়েছে। আগের দিন অক্টোবর এস এম সালেহ আহমেদকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়াকে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব হিসেবে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। খাদ্য সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মাসুদুল হাসান। ছাড়া ওএসডি করা হয়েছে ভূমি সচিব খলিলুর রহমান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব . কে এম মতিউর রহমানকে। অক্টোবর ওএসডি করা হয়েছে সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমেদকে।

সেপ্টেম্বরে সচিব পদে ২০ কর্মকর্তাকে বদলি, ওএসডি চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ সেপ্টেম্বর বদলি করা হয়েছে অতিরিক্ত সচিব . কে এম মতিউর রাহমানকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেনকে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে বদলি করা হয়েছে। ওএসডি করা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. মশিউর রহমান সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খায়রুল আলম শেখকে। ২৬ সেপ্টেম্বর বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হয়েছে যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব . মহিউদ্দিন আহমেদকে।

ছাড়া ২২ সেপ্টেম্বর চুক্তি বাতিল করা হয়েছে আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের। একই মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়েছে গৃহায়ন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হামিদুর রহমান খানকে। সচিব হিসেবে সংযুক্তি থাকা মো. হাফিজুর রহমানকে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়েছে। ওএসডি করা হয়েছে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে।

১৮ সেপ্টেম্বর ওএসডি করা হয়েছে সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেনকে। ১৭ সেপ্টেম্বর ওএসডি করা হয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহানকে। ছাড়া গৃহায়ন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমানকে সচিব করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভূমি আপিল বোর্ডের সদস্য মো. সাইফুল্লাহ পান্নাকে প্রধান উপদেষ্টার সচিব করা হয়েছে।

১৫ সেপ্টেম্বর সচিব করা হয়েছে অতিরিক্ত সচিব . মো. আনোয়ারুল্লাকে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব এবং বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান ডা. সারোয়ার বারীকে স্বাস্থ্য শিক্ষা পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব করা হয়েছে। ১৪ সেপ্টেম্বর  বাংলাদেশ ট্রেড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শীষ হায়দার চৌধূরীকে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব করা হয়েছে।

এর আগে ১২ সেপ্টেম্বর ওএসডি করা হয়েছে তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খন্দকার তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিনকে। সেপ্টেম্বর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এইচ এম শফিকুজ্জামানকে শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়েছে। সেপ্টেম্বর ওএসডি করা হয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামালকে।

ছাড়া গত আগস্ট মাসে সচিব পদে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে ২৬ কর্মকর্তার। এর মধ্যে বদলি করা হয়েছে ১২ কর্মকর্তাকে। ওএসডি হয়েছেন কর্মকর্তা, চুক্তি বাতিল হয়েছে সচিবের এবং বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হয়েছে একজনকে।

×