ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

​​​​​​​বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

নিহত ৭৩৭, আহত ২৩ হাজার চোখ হারিয়েছেন ৪শ’ জন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১১, ৭ অক্টোবর ২০২৪

নিহত ৭৩৭, আহত ২৩ হাজার চোখ হারিয়েছেন ৪শ’ জন

.

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৭৩৭ জন জীবন দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। সময় ২৩ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন বলেও জানান তিনি। তবে এটা  যাচাই করা না  উল্লেখ করে নূরজাহান বেগম বলেন, ছাত্রদের একটা তালিকা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, নিহত দেড় হাজারের বেশি। ছাত্ররা তাদের তালিকা আমাদের দিলে আমরা ক্রস চেক করে দেখব। এই আন্দোলনে ৪০০ জন এক চোখ এবং ২০০ জন দুই চোখ হারিয়েছে বলেও জানান তিনি।

সোমবার স্বাস্থ্য পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।

সময় উপদেষ্টা আরও জানান, গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মেডিক্যাল টিম আনার প্রক্রিয়া চলমান। যারা আহত হয়েছেন বিশেষত যারা চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন, দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, পায়ে আঘাত পেয়েছেন, অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে ডাক্তারদের মেডিক্যাল টিম এনে (চীন, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশ হতে) চিকিৎসার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে চীনের এডভান্স মেডিক্যাল টিম বাংলাদেশে এসেছেন। তারা হাসপাতালগুলো পরিদর্শন করে চিকিৎসায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। ছাড়া, বিভিন্ন দেশ এবং বহুজাতিক উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত চক্ষু রোগীদের সুচিকিৎসার জন্য সেবা ফাউন্ডেশন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উদ্যোগে নেপাল থেকে জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, আগারগাঁও, ঢাকায় এসেছেন। ছাড়া, সোমবার ফ্রান্সের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও আসছেন। যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন ১৫ দিনের ভেতর যুক্তরাজ্য হতে অর্থোপেডিক ডাক্তার চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে আসবেন। নেপাল থেকে আগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎকগণ জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালের মোট ১শ৯২ জন চক্ষু রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন এবং জন জটিল রোগীর অপারেশন সম্পন্ন করেন। ইনজুরড রেটিনা রোগীদের রেটিনার অস্ত্রোপচার শেষ হলে প্রায় ছয়মাস পর কর্ণিয়া অপারেশনের প্রয়োজন পড়তে পারে। কর্ণিয়া সরবরাহে সেবা ফাউন্ডেশন সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। ছাড়া বিদেশী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ বলেছেন, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালের চিকিৎসকগণ রোগীদের যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন তা ছিল সঠিক। এই ধরনের রোগীদের নেপালেও একইভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে।

ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে দেশের বিভিন্ন স্থানে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা শহীদ পরিবারকে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে নীতিমালা প্রনয়ণ এবং শহীদ আহত ব্যক্তিদের পরিচিতিসহ একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে একটি খসড়া নীতিমালা এবং আহত-নিহতদের একটা প্রাথমিক তালিকা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছেন জানিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, প্রস্তুতকৃত তালিকা সর্বসাধারণের যাচাইয়ের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ে ডাটাবেইজ তৈরির সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সারাদেশে মোট শহীদের সংখ্যা এখন পর্যন্ত  ৭৩৭ জন এবং আহতের সংখ্যা ২২,৯০৭ জন।

সময় সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু কর্নার স্থাপন, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং অন্যান্য সামগ্রির সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, ল্যাবরেটরিতে ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় অন্যান্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছাড়া ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতাল মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল  হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হবার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ডেঙ্গুর দুটি দিক আছে। একটি হচ্ছে প্রতিরোধ, আরেকটি  চিকিৎসা। আমরা যদি প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে সচেতন করতে পারি তাহলে ডেঙ্গুর প্রতিকার করা সম্ভব।

ছাড়া দেশের সব সরকারি হাসপাতালে (জেলা পর্যায় পর্যন্ত) ডেঙ্গু বিষয়েফোকাল পারসননির্ধারণ করা হয়েছে, যাদের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সারাদেশের ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ডেঙ্গু টেস্ট কিট, আইভি ফ্লুইড (স্যালাইন) এবং অন্যান্য লজিস্টিক এর স্টক এবং চাহিদা সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং সারাদেশে সকল সরকারি হাসপাতালের প্রধানগণকে ডেঙ্গু অ্যাপ- বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলন স্বাস্থ্য শিক্ষা পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হোসেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এটিএম সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

×